• ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১৮ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

কোম্পানীগঞ্জ- চোরাচালানের নিরাপদ রুট

sylhetnewspaper.com
প্রকাশিত মার্চ ২৬, ২০২৪
কোম্পানীগঞ্জ- চোরাচালানের নিরাপদ রুট
  • ভারতীয় অবৈধ পণ্যের নিরাপদ রুট কোম্পানীগঞ্জ
    ভারতীয় অবৈধ পণ্য সরবরাহে বস্তাপ্রতি থানার আয় দুইশ, মাসে আয় অর্ধ-কোটি, বিজিবি ম্যানেজ হলেই ভারতীয় সীমান্তের কাঁটাতার পাড়ি দিয়ে আসে অবৈধ পণ্য
    ভারতীয় চিনির বড় ব্যবসায়ী স্থানীয় সরকার দলীয় নেতা-নেত্রী ও প্রভাবশালীরা

বিশেষ প্রতিবেদক: চোরাচালানের অবৈধ পণ্যের নিরাপদ রোড হয়ে উঠেছে সিলেটের সীমান্তবর্তী কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা।

ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের এ উপজেলার ১০ টি সীমান্তের তারকাঁটা পেরিয়ে অবাধে আসছে ভারতীয় চিনি,মদ,ইয়াবা,ফেনসিডিলসহ বিভিন্ন ধরনের মাদক ও পণ্য। এসব অবৈধ পণ্য কোম্পানীগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে উপজেলার সিলেট-ভোলাগঞ্জ সড়ক হয়ে সারা দেশে ছড়িয়ে যাচ্ছে।

এতে সরকার হারাচ্ছে মোটা অঙ্কের রাজস্ব। অন্যদিকে বাড়ছে চোরাকারবারিদের দৌরাত্ম্য।

চোরাকারবারিরা বিজিবি ও পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে মাদক পাচার করে। তবে চিনি চোরাচালান করতে বিজিবি ম্যানেজ হলেই ভারতীয় সীমান্তের কাঁটাতার পাড়ি দিয়ে দেশে আসে চিনি ও কসমেটিক্সসহ বিভিন্ন অবৈধ পণ্য- এমন অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।

স্থানীয়দের অভিযোগের ভিত্তিতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কোম্পানীগঞ্জ সীমান্ত থেকে চিনির গাড়ী সিলেট শহরে যেতে কোম্পানীগঞ্জ থানা, সালুটিকর তদন্ত ফাঁড়ি, এয়ারপোর্ট থানা ও ডিবি পুলিশকে ম্যানেজ করে চোরাকারবারিরা। এসব ভারতীয় চিনির বড় ব্যবসায়ী স্থানীয় সরকার দলীয় বিভিন্ন কমিটির নেতা-নেত্রী, জনপ্রতিনিধি ও প্রভাবশালীরা বলেও জানান স্থানীয়রা।

স্থানীয় ও সংশ্লিষ্টদের ভ্যাষ্যমতে, ভারতীয় চিনির প্রতি ব্যস্তায় কোম্পানীগঞ্জ থানাকে চাঁদা দিতে হয় দুইশ টাকা করে। চোরাকারবারে জড়িতদের তথ্য মতে, এ সীমান্ত দিয়ে দৈনিক ৫০ লাখ থেকে কয়েক কোটি টাকার ভারতীয় চিনি শুল্ক ফাকি দিয়ে দেশে আসে। চোরাচালান থেকে থানার মাসিক আয় অর্ধ-কোটি টাকা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জানান, প্রতিদিন কোম্পানীগঞ্জ সীমান্তের ১০টি পয়েন্ট দিয়ে দৈনিক ৫০ লাখ থেকে কয়েক কোটি টাকার ভারতীয় চিনি রাত ২টা থেকে ভোর সকাল পর্যন্ত ট্রাক, পিকআপ, সিএনজি দিয়ে সিলেট-ভোলাগঞ্জ সড়ক হয়ে সারা দেশে পাচার হয়। সাপ্তাহে চার-পাঁচ দিন চিনি পাচারের লাইন দেয় থানা পুলিশ। সে হিসাবে মাসে কোটি-কোটি টাকার ভারতীয় চিনি থানা-পুলিশকে ম্যানেজ করে কোম্পানীগঞ্জ দিয়ে সারা দেশে সরবরাহ হয়। ভারতীয় সীমান্ত থেকে যেসব চোরাকারবারিরা চিনি দেশে নিয়ে এসে স্থানীয় বাজারের ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রয় করেন, তাঁরা প্রথমে ব্যস্তাপ্রতি একশ টাকা করে দিতে হয় থানাকে। বিভিন্ন সীমান্ত এলাকায় দৈনিক কত ব্যস্তা চিনি আসে তাঁর হিসাব রাখার জন্য থানার রয়েছে নিজস্ব লোক। অভিযোগ রয়েছে হিসাব রাখার লোকদের মধ্যে রয়েছেন- কোম্পানীগঞ্জ থানার কনস্টেবল রুবেল ও লিটন। এসব কথপকোথনের অডিও ক্লিপ এ প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, কোম্পানীগঞ্জ থেকে ভারতীয় চিনি সারাদেশে সরবরাহের ব্যব্যসা করেন সরকার দলীয় লোকজন। ভারতীয় চিনির ট্রাক, পিকআপ, সিএনজি সিলেট শহরে নিয়ে যাওয়ার সময় গাড়ী সামনে একাধিক মোটরসাইকেল পাহারা দিয়ে নিয়ে যান ঐসব নেতারা ও তাঁদের লোকজন।

উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকা ঘুরে ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উত্তর রণিখাই ইউনিয়নের কালাইরাগ, বরমসিদ্দিপুর, মাঝেরগাঁও, উৎমা, লামাগ্রাম ও তুরং দিয়ে নিয়মিত চোরাচালান হয়ে থাকে। চোরাকারবারিরা প্রতিদিন সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়া ডিঙিয়ে মদ, ফেনসিডিল, ইয়াবাসহ বিভিন্ন ধরনের মাদক ও চিনি, শাড়ি, বিড়ি, চকলেট, বিস্কুট, মসলা ও প্রসাধনী নিয়ে আসছে। চোরাই এসব পণ্য এনে দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় সরবরাহ করা হচ্ছে।

সীমান্ত এলাকার কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, চোরাচালানের সিংহভাগ পণ্য আসে বরমসিদ্দিপুর সীমান্তের তারকাঁটা মাড়িয়ে। শুল্ক না দিয়ে চোরাই পথে পণ্য আমদানি করলেও বিজিবি ও পুলিশের নামে দিতে হয় চাঁদা। বিজিবির লাইনম্যান পরিচয় দিয়ে চিনির বস্তাপ্রতি ১০০ টাকা করে নেন হেলাল ও তৈয়ব আলী নামে দুই ব্যক্তি। এছাড়া তাদেরকে শাড়ি, বিড়ি, চকলেট, বিস্কুট, মসলা ও প্রসাধনীতে চালান অনুপাতে চাঁদা দিতে হয়। তারা বলেন, প্রথমে সীমান্ত থেকে মোটরসাইকেলে করে উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় ব্যবসায়ীদের গুদামে এসব পণ্য মজুত রাখা হয়। পরে ট্রাক, পিকআপ ভ্যান ও সিএনজি অটোরিকশা করে দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। সীমান্ত এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, ওসি গোলাম দস্তগীর কোম্পানীগঞ্জে যোগদানের পর থেকে চিনি চোরাচালান বৃদ্ধি পেয়েছে। এর আগে চিনি চোরাচালানের এত দৌড়াত্ব দেখা যায়নি।

অন্যদিকে, উপজেলার ইসলামপুর পশ্চিম ইউনিয়নের ভোলাগঞ্জ, চিকাডহর ও ছনবাড়ী ও সশানঘাট সীমান্তের কয়েকটি পয়েন্ট দিয়ে ভারত থেকে দেশে আসে ভারতীয় পণ্য। প্রথমে সীমান্ত থেকে মোটরসাইকেলে করে এনে মজুদ করা হয় সীমান্ত এলাকার চোরাকারবারিদের গোপন ও নিরাপদ গুদামে। এরপর এসব পণ্য ট্রাক, পিকআপ, সিএনজি অটোরিকশায় করে পৌঁছে যায় সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ছনবাড়ী এলাকায় বিজিবির নামে টাকা তুলে ছনবাড়ীর বিরাই মিয়া, বাদশাহ ও পুলিশের নামে টাকা তুলে ছনবাড়ীর ইসমাইল মিয়া এবং কার, কত বস্তা চিনি নামে সেটি কোম্পানীগঞ্জ থানার কনস্টেবল রুবেল ও লিটন হিসাব নেন। উত্তর রণিখাই ইউনিয়নে চোরাকারবারীদের লাইন দিয়ে টাকা তুলে সে টাকা থানায় জমা দেন। বরমসিদ্দিপুর সীমান্তে চিনি নামায় হৃদয় ও এনামসহ অনেকে। চিনি চোরাচালানের সাথে সম্পৃক্ত দয়ারবাজারের আনছার মিয়া, মাঝেরগাওঁ গ্রামের শাহিন, বালুচরের তুহিন, জাহাঙ্গীর, কালিবাড়ির জাবেদ, কালাইরাগের আলীম, থানা বাজারের রায়হান আহমদ, আজিম, টুকের বাজারের রাজীব ভূঁইয়া, বউ বাজারের জালাল, পাড়ুয়া ইয়াহিয়া, বছল, জুয়েল, বটেরতল, বাঘারপার ও চিকাডহর এলাকার হাবিবুর, রিপন, ফয়জুল, আবুল, কালাই, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা রুবেল, ইকবাল, গোয়াইনঘাটের তোয়াকুল এলাকার জামাল প্রমুখ। রয়েছে দক্ষিণ রণিখাই ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি জমির আলী। সে থানায় মাসিক ১ লাখ টাকা চাঁদা দেয়।

কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি গোলাম দস্তগীর আহমেদ বলেন, চিনি চোরাচালানের রোধে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। চিনির ব্যস্তাপ্রতি ২ শ টাকা নেওয়ার প্রশ্নে তিনি বলেন, এগুলো সত্য না। কনস্টেবল রুবেল ও লিটনের প্রসঙ্গেও তিনি একই কথা বলেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুনজিত কুমার চন্দ সিলেট মিরর-কে বলেন, চোরাচালান রুখতে বিজিবি ও পুলিশ দায়িত্ব পালন করছেন। কঠোরভাবে চোরাচালান বন্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তথ্যসূত্রে : সিলেট মিরর

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •