• ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১৮ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

গোয়াইনঘাট সীমান্তে শীর্ষ চোরাকারবারী সিন্ডিকেট!

sylhetnewspaper.com
প্রকাশিত মার্চ ১৮, ২০২৪
গোয়াইনঘাট সীমান্তে শীর্ষ চোরাকারবারী সিন্ডিকেট!

বিশেষ প্রতিবেদক:সিলেটের গোয়াইনঘাট সীমান্তের চোরাকারবারিদের কোন ভাবে ধমন করতে পারছেনা স্থানীয় প্রশাসন, বরং প্রশাসনের নাম ভাঙ্গিয়ে সীমান্তে বেড়েই চলছে শ্যাম কালা, আল আমিন,জয়দুল,দুলাল,বাহিনীর বখরাবাজি।

স্থানীয় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে ম্যানেজ করে যেকোন কাজ করতে পিছপা হয় না এই বাহিনীর সদস্যরা।এই সিন্ডিকেটের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না সীমান্ত এলাকার ব্যাবসায়ীসহ সাধারণ মানুষজন।এই বাহিনীতে আছেন গোয়াইনঘাট উপজেলার পশ্চিম জাফলং ইউনিয়নের হাতিরখাল গ্রামের মোশাহিদ আলীর ছেলে শ্যাম কালা।

জন্মসূত্রে দারিদ্রতার করাঘাতে বেড়ে উঠা কালা মিয়ার শৈশব শুরু হয় পিতার সাথে কাজের যোগান দিয়ে। পরবর্তীতে বারকী শ্রমিক হিসেবে পাথর উত্তোলনের কাজ করতো সে । হাতিরপার মসাহিদ তার বাহিনীর সদস্য । এখন পর্যন্ত চোরাচালানের পাশাপাশি প্রশাসনের লাইনম্যান হয়ে সিমান্তে প্রতিনিয়ত চাঁদাবাজি করে আসছে এই বাহিনীর সদস্যরা। সিলেটের জৈন্তাপুর থেকে জাফলং পর্যন্ত সীমান্ত এলাকা নিয়ন্ত্রণ করে এই বাহিনীর সদস্য শ্যাম কালা ও আল আমিন। সীমান্তে বেশ কয়েকবার বেপরোয়া কর্মকান্ডের কারণে আলোচিত হয়ে উঠেছে এই সিন্ডিকেট। রাতের আঁধারে ভারত থেকে মাদকের চালান নিয়ে আসার সময় বিজিবি জওয়ানরা তাদের আটক করেনা । কালার নেতৃত্বে চোরাচালানি চক্রের শক্তিশালী সিন্ডিকেট রয়েছে গোয়াইনঘাট, তামাবিল, জাফলং এলাকায়।

জয়দুলসহ অন্তত ৩০-৩৫ জনের এ সিন্ডিকেটের নেতা বোঙারী। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, তাদের নেতৃত্বে বাংলাদেশ থেকে ভারতের মেঘালয় রাজ্যে যায় মটরশুঁটি,স্বর্ণসহ নানা জিনিস পাচার হয়। আর বাংলাদেশে আসে ভারতীয় মদ, কসমেটিক্স, মোটরসাইকেল, ইয়াবা,অস্ত্র, টিস্যু কাপড় সহ নানা পণ্য। প্রায় ১৫ থেকে ২০ কিলোমিটার এলাকা একাই নিয়ন্ত্রণ করে এই সিন্ডিকেট। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, তামাবিল ও জাফলং এলাকার চোরাকারবার নিয়ন্ত্রণ করে জাফলংয়ের একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। ওই সিন্ডিকেট টাকার বিনিময়ে চোরাচালানের লাইন বিক্রি করে। ২০-২৫ লাখ টাকায় এই লাইন বিক্রি করা হয়। আর লাইনের মাধ্যমে চোরাচালানের সব মালামাল ভারতে প্রবেশ করে এবং আসেও।

জাফলংয়ের সচেতন মহলের দাবি সংশ্লিষ্ট প্রশাসন এই চোরাকারবারি গডফাদারদের চাঁদাবাজির খুঁটির জোর কোথায়? এদিকে গরু মহিষ চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ করেন ইবু ও হয়রত আলী,আল আমিন, কামাল মেম্বার।তারা গরু প্রতি ১ থেকে ৩ হাজার টাকা করে আদায় করে থাকেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ব্যক্তি জানান, জাফলংয়ের সচেতন মহলের দাবি জাফলং সীমান্তের আতঙ্কের আরেক নাম চোরাচালান সিন্ডিকেট।

এই চক্রের সদস্যদের দ্রুত আইনের আওতায় না আনতে পারলে ঘটতে পারে যে কোন সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এদিকে ক্রমেই বাড়ছে চাঁদাবাজি চোরাচালান সিন্ডিকেটের চোরাকারবারিদের চোরাচালান কর্মকান্ড।

এর ফলে বছরে সরকার হারাচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকার রাজস্ব। এদিকে সীমান্তবাসীর উদ্ধৃতি দিয়ে একাধিক সুত্রে জানা গেছে, চোরাকারবারিরা সীমান্ত এলাকার বাজার দখল করার জন্য গভীর রাতে জাফলং বাজার,মামার বাজার,ও সীমান্তের রাস্তাঘাট জনশূন্য হলে ভারতীয় পণ্য পাচারের ঢল নামে। আর এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে তামাবিল আমস্বপ্ন এলাকার প্রভাবশালী লুৎফুর মিয়া,এম শাহীন,সেলিম মিয়া, চোরাই পথে আসা ভারতীয় পণ্য থেকে পুলিশ ও বিজিবির সোর্স সেজে চোরাকরবারিদের নিকট থেকে বিজিবি ও পুলিশের নাম ভাঙিয়ে মালের টোপলা হিসেবে চাঁদা আদায় করে থাকে।

বর্তমানে জাফলং সীমান্তের তামাবিল,আমস্বপ্ন, সোনাটিলা,গুচ্ছগ্রাম,সিঁড়িরঘাট,এলাকা দিয়ে যেসব ভারতীয় পণ্য ভারত থেকে আসছে তার মধ্যে মাদকদ্রব্য, চোরাই বাইসাইকেল, পাতার বিড়ি, জর্জজেট শাড়ী, থ্রিপিচ, বিভিন্ন আইটেমের জুতা, হাড়ি পাতিল, বালিশের কভারসহ বিভন্ন প্রকার মালামাল। জাফলং সীমান্ত এলাকার এই চোরাই পথ দিয়ে পণ্যগুলো,মোটরসাইকেল, ইঞ্জিনভ্যান, নসিমন ডিআই গাড়িতে ভরে জেলার বিভিন্ন হাট বাজারে চোরাকারবারিরা পাচার করে থাকে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এলাকার সচেতন মহল বলেন এসব চোরাকারবারি ব্যবসায়ীরা বৈধ পথে ভারতীয় পণ্য সামগ্রী আনলে সরকার মোটা অংকের রাজস্ব পেতেন। তিনি দাবী করে বলেন, স্থানীয় বিজিবির উচিৎ এসব অবৈধ চোরাই পথগুলো বন্ধ করে দেওয়া।

আরো জানান এবিষয়ে সিলেট বিজিবির ৪৮ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক হস্তক্ষেপ নিলে দ্রুত এসব চোরাচালান প্রতিরোধ করা সম্ভব।এসব বিষয়ে তামাবিল বিজিবির কোম্পানি কমান্ডার নায়েব সুবেদারের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, আমি মাত্র কয়েকদিন হলো তামাবিল বিজিবি ক্যাম্পের দায়িত্ব গ্রহণ করেছি। তবে লুৎফুর সহ একটি সংঘবদ্ধ চক্র বিজিবির নাম ভাঙিয়ে সীমান্তে চাঁদা আদায় করার তথ্য পেয়েছি। খুব শিগগিরই তাদেরকে চিনহৃত করে আইনের আওতায় নেওয়া হবে।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •