প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি সিলেটে অবস্থিত বিছানাকন্দি। বেশ কয়েক বছর ধরে এখানে বেড়েছে পর্যটকের আনাগোনা। কয়েক বছর আগেও স্থানটি লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকলেও বর্তমানে এটি বেশ পরিচিত ভ্রমণ পিপাসু মানুষের কাছে। বিশেষ করে দলবল নিয়ে যাওয়ার জন্য একটি উপযুক্ত স্থান এই বিছনাকান্দি।
সিলেট শহরের বিমানবন্দর রোড ধরে বিছানাকান্দির পথ। দু’পাশের সবুজ চা বাগান পেছনে ফেলে আপনাকে যেতে হবে গন্তব্যে। এই পথ ধরে গেলে মনে হবে, পুরো পৃথিবীটাই যেন সবুজের রাজ্য। আর আঁকা বাঁকা পাহাড়ি উঁচুনিচু পথটাকে কেউ বড় অজগর বলেও ভুল করতে পারেন।
সিলেট শহরের উত্তর পূর্বে গোয়াইনঘাট উপজেলার রুস্তমপুর ইউনিয়নে বিছানাকান্দি গ্রাম। সিলেট থেকে ভোলাগঞ্জ মহাসড়ক ধরে সালুটিকর বাজারের ডান দিকে গাড়ী নিয়ে গোয়াইনঘাট লিঙ্ক রোডে হয়ে গেলেই আপনি পৌঁছে যাবেন বিছানাকান্দি। এক্ষেত্রে শহরের আম্বরখানা থেকে সিএনজি নিলে সহজে এবং কম খরচে বিছানাকান্দি যাওয়া যায়।
পীরের বাজার ব্রিজ এর উত্তর পাশে টেকনাগুল মুক্তিযোদ্ধা পয়টন নৌকা ঘাট।এই ঘাট থেকে নৌকা রিজার্ভ করে যাওয়া যায় বিছানাকান্দি।
অন্যান্য ঘাটে যদিও পর্যটকদের কাছে অতিরিক্ত ভাড়া হাঁকানোর নজির এখানকার মাঝিদের আছে। তাই আগে থেকে ভাড়া ঠিক করে নেয়া ভলো।
নৌকায় যেতে যেতে দেখতে পাবেন দু’পাশে সবুজ গ্রামের প্রতিচ্ছবি।
সাথে দূরে মেঘালয়ের পাহাড় গুলো দেখে অতি নীরস লোকটিও যদি একটু রসিকতা করে,তবে অবাক হওয়ার কিছু নেই। সেটিই যেন স্বাভাবিক। নৌকা যতই আগাবে সামনের দিকে আপনি ততই অবাক হতে বাধ্য। নদীর ধার ঘেঁষে মাঝে মাঝে উঁচু করে স্তূপ আকারে জমিয়ে রাখা হয়েছে সাদা, কালো ও বাদামি পাথরের চাঁই। মনে হবে সবুজ পাহাড়ের কোলে আরেক সাদা পাহাড়।
নৌকায় প্রায় ২০ মিনিট ভ্রমণের পরই দেখা মিলবে বিছানাকান্দির।
সীমান্তের ওপার থেকে বয়ে আসা স্বচ্ছ জলধারা বড় বড় পাথরের ফাঁকে আপনাকে নিয়ে যাবে মায়ার স্রোতে।
পাথরের বুকে শীতলের আলিঙ্গনে কিছুক্ষণের জন্য হলেও ভুলে যেতে পারবেন শহরের মায়া। স্রোতের মধ্যে ডুবন্ত পাথরের উপর দাঁড়িয়ে উপভোগ করতে পারবেন অন্য এক রাজ্য।
যেখানে এপারের প্রকৃতি ওপাড়ের পাহাড়ের সাথে যেন মিতালী করছে গভীর মমতায়।
আকাশে ভাসমান মেঘের নেই সীমানা। সেই মেঘেদের পাহাড়ের কোলে ভেসে বেড়ানোর দৃশ্য উপভোগ করতে পারবেন এখানে। সেই সাথে হিম শীতল পানিতে নিজের শরীরের সাথে ভিজবে আপনার মনও।
যেভাবে যাবেন:ঢাকা থেকে ট্রেনে বা বাসে করে সিলেট যাওয়া যায়। সিলেট শহরের যে কোন প্রান্ত থেকে রিজার্ভ করা সিএনজি নিয়ে যেতে হবে হাদারপাড় বাজার। সিলেট শহরের আম্বরখানা থেকে যাওয়া সহজ। হাদারপাড় বাজার নেমে মুসলিম উদ্দিন ঘাটে নৌকা ঠিক করতে হবে বিছানাকান্দি পর্যন্ত।
সাবধানতা: এখানে পানিতে নামতে হলে কিছু সাবধানতা অবলম্বন করা উচিৎ। সীমান্তের ওপাড় থেকে আসা স্রোতের বেগ অনেক বেশী ক্ষিপ্র থাকে। এ স্রোতে না বুঝে নেমে পড়লে প্রচণ্ড পাথরের ফাঁকে পড়ে গিয়ে মারাত্মক দুর্ঘটনার শিকার হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন