• ২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২২শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

গোলাপগঞ্জে আ.লীগের কমিটিতে ‘রাজাকারপুত্র’ ! বহিস্কার দাবিতে গণস্বাক্ষর

sylhetnewspaper.com
প্রকাশিত জুন ১০, ২০২১
গোলাপগঞ্জে আ.লীগের কমিটিতে ‘রাজাকারপুত্র’ ! বহিস্কার দাবিতে গণস্বাক্ষর

আব্দুল খালিক ::‘থাকলে বড় গাঙোর পারো, না হয় বড় লোকের ধারো’ সিলেটি এই প্রবচনটির বাস্তবরূপ দিয়েছেন গোলাপগঞ্জ উপজেলার হেতিমগঞ্জস্থ মছকাপুর গ্রামের মরহুম গৌছ উদ্দিন (লাল মিয়া)’র পুত্র আব্দুল মন্নান কয়েছ।

মুশকিল আসানে এই দুইটি জায়গাই শ্রেয়। তাই, সুযোগ হাতছাড়া না করে নাম লেখান বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে। হয়ে যান ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক।

প্রায় ১৩ বছর স্বপদে বহাল থেকে সম্প্রতি উপজেলা কমিটিতে শ্রম বিষয়ক সম্পাদকের পদ ভাগিয়ে নেন এই রাজাকারপুত্র। এতে গোটা উপজেলা জুড়ে শুরু হয় মিশ্র প্রতিক্রিয়া। সরগরম হয়ে ওঠে সোস্যাল মিডিয়া। একজন রাজাকারপুত্র কীভাবে আওয়ামী লীগের মতো একটি সংগঠনে স্থান পায় সে বিষয়ে চলছে চুলছেড়া বিশ্লেষণ।

জানা যায়, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে স্বাধীনতা বিরোধী ছিলেন গৌছ উদ্দিন (লাল মিয়া)। তিনি একজন চিহ্নিত রাজাকার বলে এলাকায় জনশ্রুতি রয়েছে। তারই সুযোগ্য সন্তান আব্দুল মন্নান কয়েছ। নিজের খোলস পাল্টে তথ্য গোপনের মাধ্যমে আশ্রয় নেন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগে। সেখানে তদবির-লবিং এর মাধ্যমে পদভূক্ত হন ৩নং ফুলবাড়ী আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে। এরপর আর পেছনে থাকাতে হয়নি তার। ধীরে ধীরে হয়ে উঠেন একজন আপাদমস্তক আওয়ামী লীগ নেতা।

নিজেকে জাহির করেন ক্ষমতাসীন হিসেবে। পিতা স্বাধীনতা বিরোধী, কিন্তু ছেলেতো নয়? এমন ভাবনা থেকে বিষয়টিকে সবাই এড়িয়ে যান। এতে সামনে এগিয়ে যাওয়ার পাথেয় খুঁজে পান কয়েছ।

তবে, সম্প্রতি গোলাপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদকের পদ ভাগিয়ে নেওয়ার পর টনক নড়ে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে। শুরু হয় পক্ষে-বিপক্ষে মন্তব্য।

এদিকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোপূর্বে ঘোষণা দিয়েছেন, ‘কোনো স্বাধীনতা বিরোধীর সন্তান যেনো আওয়ামী লীগের কোনো পদ-পদবীতে থাকতে পারে না।

প্রধানমন্ত্রীর সেই ঘোষণায় স্বাধীনতা বিরোধীর পুত্র কয়েছকে নিয়ে উপজেলা জুড়ে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। সেই ক্ষোভ উপজেলা ছাড়িয়ে জেলা শহরেও বিরাজ করতে থাকে। কমিটির ঘোষণার পর থেকেই গরম হয়ে ওঠে সোস্যাল মিডিয়া।

প্রধানমন্ত্রীর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এরআগে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কমিটি থেকে তাকে বাদ দেওয়া হয়। এমনকি সাম্প্রাতিক উপজেলা কমিটির প্রস্তাবিত তালিকায়ও তার নাম রাখা হয়নি। দুই দুইটি প্রস্তাবিত তালিকা জেলা সদরে পাঠানো হলেও তার কোনোটিতেই নাম নেই আব্দুল মন্নান কয়েছের। শুধুমাত্র চাচাত্ব ভাই (জেলা কমিটির সদস্য) মনসুর রশিদ এর তদবিরে নতুন কমিটিতে তার নাম অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে বলে জানা যায়।

প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা বাস্তবায়নে জেলা কমিটি বরাবরে আব্দুল মন্নান কয়েছের বহিস্কার দাবি করে গণস্বাক্ষরসহ একটি আবেদন করেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ। তাদের দাবি, আব্দুল মন্নান কয়েছে একজন চিহ্নিত রাজাকার কমান্ডারের পুত্র। তার বাবা গৌছ উদ্দিন লাল মিয়া স্বাধীনতা বিরোধী।

সুতরাং, তাকে আওয়ামী লীগে স্থান দিলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র ঘোষণার প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলী প্রদর্শন হবে। তাই, অনতিবিলম্বে তারা কয়েছেন বহিস্কার চান।

আবেদনপত্রে গণ স্বাক্ষর করেন- মো. মোসাহিদ আলী- সভাপতি, মো. নুরুল আলম- সাধারণ সম্পাদক, মো. আলা উদ্দিন- যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, ময়নুর রাহমান- দফতর সম্পাদক, মো. আনছার- সদস্য, শাহ সেলিম- সদস্য, মো. মঈনুল ইসলাম- সহ-সভাপতি, মো. আব্দুল খালিক- কৃষ্টি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক, ডা. সৈয়দ হাসান আহমদ- মছকাপুর, মো. ছমির উদ্দিন- সাংগঠনিক সম্পাদক, মুহিবুর রহমান- সদস্য, মো. আবুল কাশেম- সহ-প্রচার সম্পাদক, মো. মখতার আলী, সহ-সভাপতি, মনসুর হোসেন মুন্না- সহ-দপ্তর সম্পাদক, গিয়াস উদ্দিন- যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক, সুহেল আহমদ- তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক, আশরাফ উদ্দিন- ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক, আবু তাহের চৌধুরী- আইন বিষয়ক সম্পাদক, সারো মিয়া- বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক, আব্দুল মুকিত- প্রচার সম্পাদক, সাইফুল ইসলাম, পরিধি কান্ত পাল চৌধুরী- সদস্য, মো. আবুল হোসেন- সিনিয়র সহ-সভাপতি, মো. আব্দুর রহিম লিলু- ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক, আবুল কালাম আজাদ- সহ-সভাপতি, মো. আব্দুল লতিফ- যুগ্ম সম্পাদক, মো. শাখাওয়াত হোসেন- সদস্য, আব্দুর রহিম- কোষাধ্যক্ষ, মাসুক মিয়া- সাংস্কৃতিক সম্পাদক, মো. আফতাব আলী- মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক, অর্চনা রানী চন্দ- মহিলা বিষয়ক সম্পাদক।

এবিষয়ে জানতে চাইলে ৩নং ফুলবাড়ী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মোসাহিদ আলী জানান, ‘প্রধানমন্ত্রীর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ও তাঁর ঘোষণা বাস্তবায়নের নিমিত্তে আমরা ইতিপূর্বে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কমিটি থেকে কয়েছকে বাদ দিয়েছি। এমনকি সাম্প্রাতিক উপজেলা কমিটির প্রস্তাবিত তালিকায়ও তার নাম রাখা হয়নি। দুই দুইটি প্রস্তাবিত তালিকা জেলা সদরে পাঠানো হলেও তার কোনোটিতেই কয়েছের নাম দেওয়া হয়নি। তবে, কীভাবে সে উপজেলা কমিটিতে পদভূক্ত হয় তা আমার বোধগম্য নয়।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে গোলাপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ইকবাল আহমদ চৌধুরী জানান, উপজেলা কর্তৃক প্রেরিত প্রস্তাবিত কমিটিতে আমরা আব্দুল মন্নান কয়েছের নাম দেইনি। জেলা কমিটি তার নাম অন্তর্ভূক্ত করেছে।

কিসের ভিত্তিতে তারা কয়েছকে শ্রম বিষয়ক সম্পাদক করেছেন এটা কেবল তারাই ভালো বলতে পারবেন। তথ্য সূত্রে দৈনিক বিজয়ের কন্ঠ

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন