• ২৬শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১১ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২৪শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

ভূয়া ঠিকানায় ৩০বছর ধরে সরকারি চাকুরি করছেন যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মহসিন

sylhetnewspaper.com
প্রকাশিত এপ্রিল ২৯, ২০২৪
ভূয়া ঠিকানায় ৩০বছর ধরে সরকারি চাকুরি করছেন যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মহসিন

বিশেষ প্রতিবেদক::সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলা সহকারী যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মহসিন’র বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে আর্থিক অনিয়ম দুর্নীতি এবং ভাতার টাকা আত্মসাৎসহ নানা অনিয়মের ব্যাপক অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সহকারি উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মো: মহসিন দীর্ঘ ২১বছর ধরে গোয়াইনঘাট উপজেলা যুব উন্নয়ন অফিসে কর্মরত রয়েছেন। দীর্ঘদিন একই কর্মস্থলে থাকার সুবাদে বানিয়েছেন অর্থের পাহাড়। অফিসের একমাত্র সর্বসেরা তিনিই নিজেই। ঐ কর্মকর্তা টানা ২১ বছর গোয়াইনঘাট উপজেলা যুব উন্নয়ন কার্যালয়ে খুঁটি গেড়ে বসে আছেন। আর সেই খুঁটির জোরে একের পর এক অনিয়ম ও দুর্নীতি করেই যাচ্ছেন। যুব উন্নয়ন অফিসের এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে উপজেলা যুব উন্নয়ন অফিসার বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন এনামুল হক নামের এক যুবক।

এনামুলের লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ২০২৩ সালের ১৫ই আগষ্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে যুব প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত প্রশিক্ষণার্থী ও প্রকল্প দ্বারিদের মাঝে যুব ঋণ প্রদান করা হয়। এতে এনামুল বিগত ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে ১টি যুব ঋণ গ্রহণ করেন এবং নিয়মিত কিস্তি পরিশোধ করেন। ঋণ পরিশোধ করার পর যুব উন্নয়ন অফিসের সহকারী কর্মকর্তা মো: মহসিন বলেন, আপনার নামে ২য় বার ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে ১টি ঋণ দেয়া হবে। এবং ঋণ অনুমোদন কমিটির স্বাক্ষরে এনামুলের নামে একটি ঋণ পাশও হয়। পরবর্তীতে যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মহসিন’র মাধ্যমে জানতে পারেন যে, তার নামে কোন ঋন পাশ হয়নি। পরে তাকে আর উক্ত ঋণ দেওয়াও হয়নি। অভিযোগে আরো উল্লেখ করা হয় যে, ৫নং পূর্ব আলীরগাঁও ইউনিয়নের খাঁস হাওর গ্রামের নজরুল ইসলাম নামের একজন সরকারি চাকুরিজীবীকে উদ্যোক্তা বানিয়ে এক লক্ষ টাকা
ঋণ প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু অদ্যাবদি পর্যন্ত সেই ঋণ পরিশোধ না হলেও একই ব্যাক্তিকে ঐ ঋন থাকা অবস্থায় পূনরায় উপজেলা পর্যায়ে ঋণ দেওয়া হয়েছে যাহা নজরুল ইসলাম’র নামে ৫০ হাজার এবং তারই স্ত্রী রোকিয়া বেগম’র নামে ৪০ হাজার টাকা ঋন প্রদান করা হয়েছে। এছাড়াও নজরুল ইসলাম’র আত্মীয় আরো ২/৩ জনকে ঋণ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এনামুল হক তার ঋণটি আজও পর্যন্ত পাননি। এছাড়াও উপজেলাজুড়ে সরকারিভাবে বেকার যুবক যুবতীদের জন্য প্রতি বছর ১৪টি প্রশিক্ষণ থাকলেও তার পছন্দসই পূর্ব জাফলং, পশ্চিম জাফলং ও রুস্তমপুর ইউনিয়নে প্রশিক্ষণ সমাপ্তি করার অভিযোগ রয়েছে।

জানাযায়, মো: মহসিন নিজের পছন্দসই লোক ব্যতিত কাউকেই যুব ঋণসহ কোনরকম সরকারী সুযোগ-সুবিধা প্রদান করেন না। কিন্তু তার পছন্দসই একই ব্যক্তিকে বার বার সরকারী যুব ঋণ প্রদানসহ নানা সুযোগ সুবিধা দিয়ে আসছেন। নিয়ম অনুযায়ী যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের আওতায় প্রশিক্ষিত বেকার যুবক/যুবতীদের ঋণ দেয়ার কথা থাকলেও তিনি কোনরকম নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে প্রশিক্ষিত বেকার যুবকদের বাদ দিয়ে নিজের পছন্দসই লোকদের সাময়িক প্রশিক্ষণ সনদ নিজেই তৈরী করে দিয়ে ঋণ প্রদান করেন। অথচ উপজেলার অনেক প্রশিক্ষিত যুবকরা একাধিকবার আবেদন করেও ঋণ সুবিদা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ৪০ ঊর্ধ্ব বয়সের কোন পুরুষ ও নারীকে ঋণ না দেওয়ার কথা থাকলেও তিনি ৪০ ঊর্ধ্ব বয়সের একাধিক ব্যক্তিদেরও ঋণ প্রদান করার নজিরও রয়েছে। এছাড়াও যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের আওতায় বেকার যুবক যুবতীদের স্বাবলম্বী করার লক্ষ্যে সরকারীভাবে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রজেক্টের ট্রেনিং করানো হয়। সেখানে তিনি ট্রেনিং না করিয়ে বাজেটের সমুদ্বয় টাকা আত্মসাৎ করার ও অভিযোগ রয়েছে ঐ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।

অনুসন্ধানে জানাযায়, সহকারী ঐ যুব উন্নয়ন কর্মকর্তার জন্মস্থান কুমিল্লা বিভাগের ভৈষেরকুট গ্রামের হলেও। পরবর্তীতে জন্মস্থান পরিবর্তন করে (২৪-০৭-১৯৯৬ সালে) সিলেটের হবিগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর গ্রামের বাসিন্দা দেখিয়ে যুব উন্নয়ন অফিসের ক্রেডিট সুপারভাইজার পদে সরকারি চাকুরিতে যোগদান করেন ঐ কর্মকর্তা। পরবর্তীতে (২৭-০৬-২০০৪ সালে) গোয়াইনঘাট উপজেলা যুব উন্নয়ন অফিসে একই পদে বদলি হয়ে যোগদান করে ২১বছর ধরে অদ্যাবদি পর্যন্ত বহাল তবিয়তে রয়েছেন। ২১বছর ধরে একই স্টেশনে থাকার সুবাদে মো: মহসিন গোয়াইনঘাট উপজেলাস্থ ১২নং সদর ইউনিয়নের গোয়াইন মৌজার স্থায়ী নাগরিকত্ব লাভ করেন। যাহা জনমনে বিরূপ মন্তব্য দেখা দিয়েছে উপজেলা জুড়ে। উপজেলার সচেতন মহলের প্রশ্ন একজন সরকারি চাকুরিজীবি হয়ে তিনটি ঠিকানা ব্যবহার করে দীর্ঘ ৩০বছর ধরে সরকারি চাকুরি করে যাচ্ছেন ?

এ বিষয়ে গোয়াইনঘাট উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মো: জহিরুল হক জানান, ২০২২ সালে আমি গোয়াইনঘাটে যোগদান করেছি। যোগাদানের পর থেকেই মহসিন’র নানা অনিয়মের লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয় গুলো আমি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করেছি। এছাড়াও মহসিন’র বিরুদ্ধে ইতিপূর্বে বিভিন্ন ট্রেনিংয়ের ভাতা ও ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচীর নানা অনিয়ম ও টাকা আত্মসাৎ’র ঘটনায় দূর্নীতিদমন কমিশন গোয়াইনঘাট সোনালী ব্যাংক শাখা এবং যুব উন্নয়ন অফিসকে অবগত করেছে।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন