• ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১৭ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

শাল্লায় স্বাস্থ্য কর্মকতা সেলিনার বিরুদ্ধে অনিয়মের বিস্তর অভিযোগ

sylhetnewspaper.com
প্রকাশিত জুলাই ২০, ২০২২
শাল্লায় স্বাস্থ্য কর্মকতা সেলিনার বিরুদ্ধে অনিয়মের বিস্তর অভিযোগ

নানা অনিয়ম-দুর্নীতি ও স্বাক্ষর জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে শাল্লা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.সেলিনা আক্তারের বিরুদ্ধে।

আউটসোর্সিং কর্মচারীদের এক মাস অনুপস্থিত দেখিয়ে ভাতার টাকা আত্মসাৎ, কোভিড-১৯ টিকাদান কর্মসূচিতে প্রচার-প্রচারণা বাবদ ও আপ্যায়ণের জন্য বরাদ্দকৃত টাকা আত্মসাৎ এবং করোনাকালীন সময়ে স্বেচ্ছাসেবীদের সম্মানী ভাতায় স্বাক্ষর জাল করে বিল উত্তোলণ করে একাউন্টে জমা রাখা,হাসপাতালে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বাবদ ভূয়া ভাউচারে শ্রমিকদের স্বাক্ষর জালিয়াতি করে টাকা আত্মসাৎ এছাড়াও কর্মচারীদের সঙ্গে অসদাচরণের অভিযোগও রয়েছে এ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।

শুধু তাই নয়,হাসপাতালে চার চাকা গাড়ি বাবদ কোনো জ্বালানি খরচ না থাকলেও প্রতি মাসের বিল করে টাকা উত্তোলণ করা হয়।

অথচ শাল্লায় বর্ষায় নৌকা আর হেমন্তে পায়ে হেটে চলতে হয়। এরপরও গাড়ির খরচ দেখিয়ে ভুয়া বিল উত্তোলণ করেছেন এই কর্মকর্তা। সেলিনা আক্তার শাল্লায় যোগদান করার পর থেকেই হাসপাতালের কর্মকর্তা কর্মচারীরা দুগ্রুপে বিভক্ত হয়ে যায়।

হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ও অন্যান্য কর্মকর্তারা এক বলয়ে থাকলেও স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সেলিনা আক্তার একাই একটি অবস্থান নেয়। এনিয়ে হাসপাতালের অভ্যন্তরীন দ্বন্ধে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হন শাল্লাবাসী। স্বাস্থ্য কর্মকর্তা দ্বন্ধ তৈরি করেই অফিসের স্টাফ অসিত বরণ দাসের মাধ্যমে টাকা উত্তোলণ করে নিজের কাছে রেখেছেন। অথচ এই টাকাগুলো পরিষ্কার পরিচ্চন্নতা কর্মীদের না দিয়েই তিনি নিজে আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

বিল উত্তোলণে নাম দেয়া রাজকুমার দাসের সাথে কথা হলে তিনি জানান, আমি কিংবা আমার কোনো শ্রমিক হাসপাতালে কোনোদিনও কাজ করেনি। আর বিল ভাউচারে আমি স্বাক্ষরও করিনি। এসব কিছু জালিয়াতি করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, আমি বিত্তশালী পরিবারের লোক। আমাকে শ্রমিকের তালিকায় নাম দিয়ে অপরাধ করেছে এই কর্মকর্তা। আমি এই বিষয়ে মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছি।

সরজমিনে শাল্লা হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কোনো কাজ করা হয়নি। ছাদের উপরে ময়লা আবর্জনা পড়ে রয়েছে। অথচ এসব কিছুর বিল উত্তোলণ করা হয়েছে।

হাসপাতাল সুত্রে জানা গেছে, ৫ এপ্রিল থেকে ৩ জুন পর্যন্ত রাজকুমার দাসের নামে মোট ২ লাখ টাকা উত্তোলণ করা হয়েছে। আর এসব টাকা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সেলিনা আক্তারের কাছে নগদ জমা দিয়েছেন তারই অফিস স্টাফ অসিত বরণ দাস।

জানা যায়, কোভিড ১৯ কার্যক্রম উপলক্ষে ১৫ জন স্বেচ্ছাসেবীদের নামে ৮ লাখ ৮২ হাজার টাকা শাল্লা সোনালী ব্যাংক শাখায় স্বাস্থ্য কর্মকর্তার একাউন্টে রাখা হয়েছে। তবে উপজেলা হিসাব রক্ষণ অফিস থেকে স্বেচ্চাসবিদের সম্মানী ভাতা তুলতে রিভিনিউ স্টাম্পে ১৫ জনের স্বাক্ষর জালিয়াতি করা হয়েছে। এমনকি এই বরাদ্দের টাকার বিষয়ে তালিকায় নাম থাকা কেউই জানেন না। প্রত্যেকের নামে ৫৮ হাজার আটশত টাকা বরাদ্দ দেখানো হয়েছে। ক্রয়, সরবরাহ ও সেবা বাবদ ১২ হাজার টাকা বিল উত্তোলণ করা হয়। বর্ষা মাসে গাড়ি না চললেও এপ্রিল থেকে জুন মাস পর্যন্ত চার চাকা গাড়ির জ্বালানি খরচ বাবদ ৫৯ হাজার ৪০০শত টাকা উত্তোলণ করা হয়।

তালিকায় নাম থাকা সুলেখা সুত্রধর জানান, আমরা কোনোদিনও স্বাক্ষর করিনি। আমাদের স্বাক্ষর নকল করা হয়েছে। এছাড়া আমাদেরকে কোনো টাকাও দেয়া হয়নি। এই বরাদ্দের বিষয়ে আমরা কিছুই জানি না। আপনাদের কাছ থেকে শুনে অভাক হয়েছি।

আরেকজন আইভি রানী দাস বলেন, আমি কোনো টাকা পয়সা পাইনি। এমনকি কোনো বিলে স্বাক্ষরও করিনি। সবকিছু জালিয়াতি করা হয়েছে। এই বরাদ্দের বিষয়ে আমাদেরকে কেউ অবগত করেনি। এখন আপনাদের কাছ থেকে শুনেছি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালে আউটসোর্সিং কাজ করা এক কর্মী জানান, হাসপাতালে ২০জন আউটসোর্সিং কর্মীদের বেতন ভাতা হিসেবে ৪৭ লাখ টাকা শাল্লা সোনালী ব্যাংক শাখায় আসছে। এর মধ্যে সকলের মাঝে ৩৫ লাখ টাকা বেতন ভাতা দেয়া হয়েছে। আর বাকী দুই লাখ টাকা প্রত্যেকের কাছ থেকে কেটে নিয়েছে ডা. সেলিনা আক্তার। তিনি আরো বলেন, এই বিষয়ে আমি প্রতিবাদ করেছিলাম। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।

শাল্লা হাসপাতালের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কমিটির সভাপতি ডা. রাজিব বিশ্বাস জানান, হাসপাতালে কোনো ধরনের কাজ করা হয়নি। আর আমাদের জানাই ছিল না এই বিষয়ে বরাদ্দ আসে। যদি কাজ করা হত তাহলে ছাদের উপর এত ময়লা আবর্জনা পড়ে থাকতো না।

আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা ডা. রবিউল আকরাম বলেন, পানির ট্যাংকিতে ময়লা পড়ে রয়েছে। কোনো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করা হয়নি।

দায়িত্বে থাকা অফিস সহকারী অসিত বরণ দাস স্বাক্ষর জালিয়াতির বিষয় স্বীকার করে বলেন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দুই লাখ টাকা তুলে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা স্যারের কাছে দিয়েছি। এর বেশি কিছু আমি জানি না।

স্বেচ্ছাসেবীদের টাকার বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, তড়িগড়ি করে আমরা নিজেরাই স্বাক্ষর করেছি। এই ১৫ জনের টাকা একাউন্টে জমা রাখা হয়েছে। তবে এসব বরাদ্দে অফিসে ফাইল নোট করা হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার কাছে ভাউচার আছে কোনো ফাইল নোট করা হয়নি।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা ডা. সেলিনা আক্তার জানান, এইসব বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আমি জবাব দেব। তবে আমি মাঠ পর্যায়ে কোনো কাজ করিনি। যারা এই দায়িত্বে আছে তারাই স্বাক্ষরের বিষয় জানতে পারবে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজের টাকার বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিলতো আমি তৈরি করিনি। যারা তৈরি করেছে তারাই জানতে পারবে আসল না নকল।

তিনি আরো বলেন, স্বাক্ষর জালিয়াতি ও অনিয়মের বিষয়ে কোনো অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সুনামগঞ্জ সিভিল সার্জন ডা. আহম্মদ হোসেন বলেন, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের ভুয়া নাম ও স্বাক্ষর করে টাকা উত্তোলণ করা আইনত অপরাধ। তবে অনেক সময় বরাদ্দ ফেরত চলে যাবে বলে তড়িগড়ি করে স্বাক্ষর নকল করা হয়। তবে বিষয়টি আমি দেখছি। তিনি আরো বলেন, স্বেচ্চাসেবীদের সকলকে টাকা দেয়া হবে এবং হাসপাতালের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজও করা হবে।সূত্রঃbanglanews24ny

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •