মৌলভীবাজারের বড়লেখায় সক্রিয় সুদখোর কাউসার সিন্ডিকেট। এ সিন্ডিকেটের প্রতানার কবলে পড়ে নিঃস্ব প্রবাসী তাজ উদ্দিন। তার প্রবাসজীবনের সবকিছু কেড়ে নিয়েছে এ সিন্ডিকেট। এমন অভিযোগ করেছেন তাজউদ্দিন।
কে সেই কাউসার এবং কি তার পরিচয়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়- মৌলভীবাজারের জেলার বড়লেখা থানার দক্ষিণ ভাগের সুজনখাঁর পুত্র মৌলানা মোঃ কাউসার। তিনি আবার বড়লেখার টিলাবাজার মোহাম্মদিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক ও বর্তমানে মুহতামি। মাদ্রাসা শিক্ষক হলেও সরকারী-বেসরকারী অফিস আদালতে নিজেকে ব্যবসায়ী বলে মিথ্যা পরিচয় দিয়ে থাকেন, মূলত তিনি বৈধ কোন ব্যবসায়ী নন।
মাদ্রাসার নামে চাঁদাবাজি, বেআইনী দানন ব্যবসা,একে দ্বিগুণ ও তিনগুণ হারে সুদ গ্রহণ, প্রতারনার মাধ্যমে সহজসরল মানুষদের ঋণের ফাঁদে আটকিয়ে অধিক টাকা আদায়ই তার একমাত্র পেশা ও নেশা। কাগজে কলমে মাত্র সাড়ে ৭ হাজার টাকা বেতনে কওমী মাদ্রাসার মুহতামিম হয়ে এখন তিনি কোটি কোটি টাকার সম্পদের মালিক। মৌলভীবাজারের বড়লেখা ছাড়াও সিলেট শহর ও শহরতলিতে রয়েছে তার একাধিক বাসা-বাড়ি ও গাড়ি।
অভিযোগ পাওয়া গেছে, মৌলানা কাউসার টিলাবাজার মোহাম্মদিয়া কওমি মাদ্রাসার মুহতামিমের পদ লাভের পর প্রতারনার ফাঁদ পাতেন। পার্শ্ববর্তী জুড়ী উপজেলার কাতার প্রবাসী তাজ উদ্দিনের সাথে গড়ে তুলেন বন্ধুত্বের সম্পর্ক। তার মাধ্যমে কাতারের একটি ফ্রী (কফিল) ভিসা সংগ্রহ করে যাতায়াত শুরু করেন কাতার। তাজ উদ্দিনকে জিম্মায় রেখে সে দেশে বাসা ভাড়া করে থাকেন। আরবি পাকিস্তানি ভারতীয় বিভিন্ন ধনাঢ্য ব্যবসায়ীদের কাছ থেক মাদ্রাসার নাম কোটি কোটি টাকা চাঁদা কালেকশন করেন।
এভাবে তিনি কয়েকবার কোটি কোটি টাকা চাঁদা কালেকশন করলেও নামমাত্র মাদ্রাসার তহবিলে দিয়ে সাকুল্য টাকা আত্মসাত করেন। এমনকি কাতারস্থ লাখ লাখ টাকা বাসা ভাড়া না দিয়েই দেশে চলে আসেন। ফলে সেখানকার বাসা ভাড়া পরিশোধ করত হয় তাজ উদ্দিনকেই। দেশে তাজউদ্দিনের পাঁচ তলা মার্কেট বানিয়ে দেওয়ার কথা বলে তার কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা এনে অসম্পূর্ণ (দোতলা) রেখেই কাজ বন্ধ করে টাকার হিসাব না দিয়ে তার টাকা আত্মসাত করেন।
এদিকে ২০১৭ সালে তাজ উদ্দিন একেবারে দেশে চলে আসলে মেয়ের বিয়েসহ অন্যান্য কাজে ঋণগ্রস্থ হয়ে পড়লে মৌলানা কাউসার তার মার্কেটের ২শতক ভূমির কাগজ ও কয়েকটি ব্যাঙ্ক চেক নিয়ে তাজ উদ্দিনকে ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা ৬ মাস মেয়াদে বিনা সুদে ঋণ দেন। পরে প্রতারনার আশ্রয়ে এই ব্যাঙ্ক চেক দিয়ে এসআই অ্যাক্টের মামলা প্রসেস করে তাজ উদ্দিন পরিবারের কাছে সাড়ে ৭লাখ টাকার বদলে সুদসহ ১৫লাখ টাকা আদায় করে নেন।
এর আগে তাজ উদ্দিন প্রবাসে থাকাকালে মৌলানা কাউসার সিলেট শহরতলী দক্ষিণ সুরমার বরইকান্দি এলাকায় ১০ শতক জমি তাজ উদ্দিনের নামে কিনে দেয়ার কথা বলে তার কাছ থেকে ১১লাখ টাকা আনেন। পরে ঐ জমি এককভাবে তাজ উদ্দিনের নামে দলিল না করে মৌলানা কাউসার জমির দলিলে তাজ উদ্দিনের নামের সাথে নিজের নাম ও তার সিন্ডিকেটের আরেক সদস্য আব্দুল কাদিরের নাম ঢুকিয়ে দেন। অথচ জমির পূরো টাকা তাজ উদ্দিনের কাছ থেকেই আনেন মৌলানা কাউসার।
এছাড়াও আরো ৬শতক জমি কিনে দেওয়ার নাম করে তাজ উদ্দিনের কাছ থেকে ৯লাখ টাকা আনেন মৌলানা কাউসার। জমি কিনে না দিয়ে সম্পূর্ণ টাকা আত্মসাত করেন। মৌলানা কাওসার তার সিন্ডিকেটের সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে প্রবাসী তাজ উদ্দিনের বড়লেখাস্থ তাজমহল কমিউনিটি সেন্টারের মালপত্র লুটে নেন এর তার একটি দোকান তালা লাগিয়ে দেন।
মৌলানা কাউসার এলাকার প্রভাবশালী কতিপয় দাদন ব্যবসায়ীদের নিয়ে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট করে সুদের ব্যবসা প্রতারণা ও আত্মসাতমূলক এসব কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছেন। কথিত এ কাউসার সিন্ডিকেটের স্থানীয় অন্য সদস্যরা হচ্ছেন এলাকার সন্ত্রাসীদের গডফাদার ফজলুর রহমান ফজলু, আব্দুল খালিক, আব্দুল কাদের মোল্লা, আব্দুল শহীদ মুক্তা,ওবায়দুল্লাহ, সামছুল হক, গিয়াস উদ্দিন, মুজিবুর রহমান জয়নাল, জাহিদুল ইসলাম ও কয়েছ মিয়া।
কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের পর কাউসার সিন্ডিকেট প্রবাস ফেরত তাজ উদ্দিনকে হত্যার চেষ্টা করে তার বাড়িতে হামলা চালায়। এ ঘটনায় তাজ উদ্দিন ২০২০ সালের ৬ আগস্ট মৌলভীবাজার নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রটের আদালতে একটি মামলা (নং-১৭/২০২০) করেন। এ মামলায় দীর্ঘদিন পলাতক থাকার পর মৌলানা কাউসার ও তার সিন্ডিকেট সদস্যরা মুচলেকামূলে মুক্তি লাভ করেন।
কাউসার সিন্ডিকেটের এহেন প্রতারনা ও আত্মসাতের প্রতিকার চেয়ে তাজ উদ্দিন সম্প্রতি মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার ও বড়লেখার থানার ওসি বরাবরে একাধিকবার লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন, যা তদন্তাধীন।
এসব অভিযোগের বিষয়ে মৌলানা কাউসারের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে প্রবাস ফেরত তাজ উদ্দিনের সাথে তার বিরোধের কথা তিনি স্বীকার করে বলেন- স্থানীয় গণ্যমান্যদের সালিশে বিষয়ের সমাধান হলেও তাজ উদ্দিন তা না মেনে মামলার পথকে বেছে নিয়েছেন। আদালত তাদেরকে তার একটি মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন বাকি আইন দেখছে বলে জানান তিনি।
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন