• ২৭শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১২ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২৫শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

মশার কাছে জিম্মি নগরবাসী

sylhetnewspaper.com
প্রকাশিত নভেম্বর ১৯, ২০২১
মশার কাছে জিম্মি নগরবাসী

স্টাফ রিপর্টারঃসিলেট নগরে দিন দিন বেড়েই চলছে মশার উপদ্রব। দিনের বেলায় কিছুটা রেহায় পাওয়া গেলেও রাতে নিস্তার মিলছে না। সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) কার্যকর উদ্যোগ না থাকায় মশার উৎপাত বাড়ছে বলে দাবি নগরবাসীর। মশক নিধনে মাঝে মধ্যে ওষুধ ছিঁটানো হলেও এতে কোনো কাজ হচ্ছে না বলে দাবি তাদের। মশা নিধনের ওষুধের কার্যকরিতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।

নগরবাসীর দাবি, নিয়মিত ভালো মানের মশক নিধন ওষুধ প্রয়োগ করলে মশার যন্ত্রণা থেকে কিছুটা পরিত্রাণ পাওয়া যেত বিগত বছরের এ সময়ে সিলেট সিটি করপোরেশনের পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন বিভাগের লোকজন এলাকার নালা-নর্দমা ও ভবনের আশপাশে মশা জন্মাতে পারে এমন স্থানে ওষুধ ছিঁটিয়ে দিতেন। তবে এ বছর নালা-নর্দমায় মশার ওষুধ ছিঁটাতে সিসিকের সংশ্লিষ্ট কর্মীদের তেমন দেখা যায়নি।যদিও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বিভাগের দাবি,মশা নিধনে নগরীর নালা-নর্দমায় নিয়মিত ওষুধ ছিঁটানোর কার্যক্রম চলছে।

এ বিষয়ে মশার উৎপাতে অতিষ্ঠ নগরবাসীর দুর্ভোগ কমাতে এবং দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়ে গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়েছেন সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক  দি সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রাক্তন প্রশাসক আসাদ উদ্দিন আহমদ।

তিনি গণমাধ্যমে প্রেরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলেন- মশার উৎপাতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে সিলেট নগরবাসীর জনজীবন। রাত্রে তো বটেই, দিনেও মশার আক্রমণ থেকে তারা রক্ষা পাচ্ছে না। দিনের বেলায়ও অনেকে মশারী টানিয়ে রক্ষা পাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে।বাসা-বাড়ি,অফিস-আদালত,অভিজাত এলাকা থেকে শুরু করে সর্বত্র মশা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।কোথাও স্বস্তিতে কাজ করতে পারছেন না মানু্ষ।কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য,মশা নিধনে সিলেট সিটি করপোরেশনের কোনো উদ্যোগ পরিলক্ষিত হচ্ছে না।পাড়া-মহল্লায় মাঝে মাঝে বিকট শব্দের ফগার মেশিনে ওষুধ ছিটানো হলেও শব্দ দূষণ ব্যতীত তেমন কোনো কাজ হচ্ছে না।মশার উৎপত্তিস্থল ধ্বংস না করে এভাবে ধোঁয়া দিয়ে মশা নিধন করা যে সম্ভব নয়,তা ইতোমধ্যে প্রমাণিত হয়েছে।

তাছাড়া যেসব ওষুধ ছিটানো হয়, তাতে ভেজাল রয়েছে বলেও বিভিন্ন সময়ে অভিযোগ উঠেছেসৈদানিবাগ,তেররতন,পশ্চিম তেররতন,সাদারপাড়া,এলাকায় মশার উপদ্রব বেশি বলে জানিয়েছেন এসব এলাকার বাসিন্দারা।নগরের প্রায় সবকটি ওয়ার্ডেই বেড়েছে মশার উৎপাত। নগরবাসীর অভিযোগ, সিসিকের মশক নিধন শাখার অবহেলা ও দায়িত্বহীনতার কারণে মশক নিধন কার্যক্রমের কোনো সুফল আসে না।

সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে যারা মশার ওষুধ ছিটান তারা বেশিরভাগই অদক্ষ এবং কমবয়সী। যার ফলে কর্মীরা বাসার পিছনের ড্রেনে স্প্রে না করে বাসা বাড়ির সামনে ওষুধ ছিটিয়ে চলে আসেন। বেশির ভাগ এলাকায় সড়ক সংলগ্ন বাসাগুলোতেই মশার স্প্রে করা হয়। এলাকার ভিতরের বাসাগুলোতে স্প্রে করতে যান না সিসিকের কর্মীরা।জালালাবাদ,ফাজিলচিশত, কালীবাড়ি,মদিনা মার্কেট, আখালিয়া, বন্দর, চৌহাট্টা, জিন্দাবাজারসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলে মশা উপদ্রব নিয়ে অভিযোগ পাওয়া গেছে। নগরবাসীর অভিযোগ দিন দিন যাবত মশার উৎপাত বেড়ে গেছে। বাসা-বাড়ি, অফিস-আদালত সব জায়গায়ই মশার উৎপাত বেড়েছে।চৌহাট্টাস্থ সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ঘুরতে আসা কয়েকজন বলেন,শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে আমরা প্রায়ই এসে আড্ডা দেই। গত কয়েকদিন যাবত দেখছি এখানে মশার উপদ্রব অনেক বেশি।

নগরীর ফাজিলচিশত এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা বলেন,কয়েক ফোঁটা বৃষ্টির পর থেকেই মশার উৎপাত বেড়েছে। তার উপর আমাদের বাসার পাশেই বড় ড্রেন।এই কয়দিন যাবত দিনের বেলায়ও মশারি টানিয়ে বাচ্চাদেরকে ঘুম পাড়িয়েছি।ছোট বাচ্চাদের জন্য আরও বেশি চিন্তা।এই মশার কামড়ে না আবার ডেঙ্গু হয়ে যায়। এ বিষয়ে আসাদ উদ্দিন আরো বলেন অথচ সিটি করপোরেশনে মশা নিধনের জন্য বিরাট অংকের টাকা বরাদ্দ রয়েছে। এসব অর্থের যথাযথ ব্যবহার না হওয়ার বিষয়টি নিয়েও বিভিন্ন সময়ে পত্র-পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। তাতে যে কোনো লাভ হয়নি বা হচ্ছে না, তা মশা নিধন কার্যক্রমে শৈথিল্য থেকে বোঝা যাচ্ছে। ফলে, সিলেট নগরবাসীর জনজীবনে অন্যান্য সমস্যার মধ্যে এটিও এখন একটি মারাত্মক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি আরো বলেন, সিলেট সিটি কর্পোরেশন একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। নাগরিক সেবা নিশ্চিত করা এই প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কাজ। কিন্তু ইদানিং লক্ষ্য করা যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি নাগরিক সেবা নিশ্চিত করার পরিবর্তে অন্যান্য কাজ নিয়ে ব্যতিব্যস্ত রয়েছে।

শীতের সময় সাধারণত মশার উপদ্রব বৃদ্ধি পায়। এ সময় বৃষ্টিপাত না হওয়ায় মশার উৎপত্তিস্থল হিসেবে পরিচিত ড্রেন, নর্দমা ও জলাশয়গুলোতে পানিধারা থাকে না। নোংরা পানি জমে থাকায় তা মশার প্রজনন ক্ষেত্রে পরিণত হয়। এ বিষয়টি সকলেরই জানা। এ সময় যদি এগুলো পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন ও সচল রাখা হয়, তবে মশা নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয়ে যায়। কিন্তু, সেবামূলক প্রতিষ্ঠান সিটি করপোরেশন এ কাজটি করতে ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে।যখনই মশার উৎপাত নিয়ে লেখালেখি হয়, তখন তারা জেগে উঠে। ক্যামেরা ট্রায়ালের মাধ্যমে মশা নিধন কার্যক্রম শুরু করে। কিছুদিন এ কার্যক্রম চলার পর থেমে যায়। বিবৃতিতে তিনি গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়ে সিসিক কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় হতাশা ব্যক্ত করে অনতিবিলম্বে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মশা নিধন কার্যক্রম শুরু ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানান।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন