মাদক মামলায় চার দিনের রিমান্ডের শুরুর দিনই গোয়েন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদে ডিবি কর্মকর্তা গোলাম সাকলায়েন শিথিলের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে ওঠার তথ্য দেন পরীমণি।
আলোচিত এই অভিনেত্রী জানান,বোট ক্লাবসংক্রান্ত মামলার তদন্ত করতে গিয়ে পরীমণির সঙ্গে পরিচয় হয় সাকলায়েনের। এরপর গড়ে ওঠে ‘প্রেমের সম্পর্ক’। সাকলায়েন বিবাহিত হলেও পরিচয় দিয়েছিলেন অবিবাহিত হিসেবে।
জিজ্ঞাসাবাদে পরীমনি জানান, ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার সাকলায়েনের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে ওঠার পর তারা একে অপরের বাসায় নিয়মিত যাতায়াত করতেন। এ তথ্যের সূত্র ধরেই সাকলায়েনের সরকারি বাসভবন রাজারবাগের মধুমতির ফ্ল্যাটের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে গোয়েন্দা বিভাগ।
সবশেষ গত ১ আগস্ট সাকলায়েনের সরকারি বাসভবন রাজারবাগের মধুমতির ফ্ল্যাটে যান পরীমনি। সেদিনের সিসিটিভি ফুটেজে স্পষ্ট হয়েছে সাকলায়েনের বাসায় ১৮ ঘণ্টা সময় কাটান এই অভিনেত্রী।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মহানগর গোয়েন্দা বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘সাকলায়েন-পরীমণির ঘনিষ্ঠতার তথ্যটি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জন্য খুবই বিব্রতকর। ঘটনাটি সামনে আসার পর অস্বস্তিতে পড়েছেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। কারণ, পরীমণির বোট ক্লাবের ঘটনার পর থেকে তার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছিল গুলশান গোয়েন্দা বিভাগ।’
ওই কর্মকর্তা জানান, বোট ক্লাবে পরীমনি ইস্যুতে আবাসন ব্যবসায়ী নাসির ইউ মাহমুদের বিরুদ্ধে মাদকের যে মামলাটি করেছিল ডিবির গুলশান বিভাগ, সেটি তদারকিও করছিলেন গুলশান গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার গোলাম সাকলায়েন।
গ্রেপ্তার হওয়ার পর জিজ্ঞাসাবাদে পরীমনি জানান, বোটক্লাবের ঘটনার পর তাকে ডিবি কার্যালয়ে ডাকা হয়েছিল। সেখানেই সাকলায়েনের সঙ্গে তার প্রথম পরিচয়। এরপর থেকে মামলার বিষয়ে নিয়মিত কথা ও দেখা হতো। কয়েক দিনের মধ্যে ভালো লাগা তৈরি হলে একে অপরের বাসায় যাতায়াত শুরু করেন।
ঘনিষ্ঠতার একপর্যায়ে গত জুলাই মাসে সাকলায়েন তিন দিন পরীমণির বাসায় রাত কাটান। এরপর সবশেষ ১ আগস্ট সকাল থেকে মাঝরাত পর্যন্ত সাকলায়েনের রাজারবাগের সরকারি বাসায় ১৮ ঘণ্টা সময় কাটান পরীমনি।
জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, বাসায় র্যাব অভিযান চালানোর সময়ে পরীমনি প্রথমে সাকলায়েনকেই ফোন করেছিলেন। এরপর তিনি ফেসবুকে লাইভ শুরু করেন।
ওই গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, ‘সাকলায়েনের বিবাহিত জীবন সম্পর্কে শুরুতে জানতেন না পরীমনি। আটক হওয়ার দুই দিন আগে তিনি সাকলায়েনের বিয়ে সম্পর্কে জানতে পারেন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে ঝগড়াও হয়। এ বিষয়টির কারণে পরীমনি বাসা থেকে বের হননি ও অসুস্থ ছিলেন।’
সাকলায়েনের সঙ্গে সম্পর্কের কথা পরীমনি তার পরিবারের সদস্যদের জানিয়েছিলেন বলেও জানান গোয়েন্দা বিভাগের ওই কর্মকর্তা।
বিষয়টি নিয়ে পরীমণির গাড়িচালক নাজির হোসেনের সঙ্গে কথা হয়।তিনি গত দুই মাস আগে মাসিক ১৫ হাজার টাকা বেতনে পরীমণির হ্যারিয়ার গাড়ির চালক হিসেবে চাকরি নেন।
নাজির বলেন, ‘দুই মাস ধরে চাকরি করলেও তার খুব বেশি ডিউটি করতে হতো না। যখন প্রয়োজন পড়ে তখনি পরীমনি কল দিয়ে ডেকে নিতেন তাকে।’
নাজির জানান, এখন পর্যন্ত তার ডিউটির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বোট ক্লাব, অল কমিউনিটি ক্লাবে যাওয়া। এ ছাড়া কয়েক দিন হাতিরঝিলে ঘোরাঘুরি ও সবশেষ ১ আগস্ট রাজারবাগে সাকলায়েনের বাসায় যাওয়া।
১ আগস্টের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে নাজির বলেন, ‘সেদিন সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ম্যাডাম আমাকে ফোন করে ডিউটিতে আসতে বলেন। আমি ৮টার মধ্যে বনানীর বাসায় এসে দেখি, ম্যাডাম আর অফিসার স্যার (সাকলায়েন) পার্কিংয়ে গাড়ির চাবি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। সঙ্গে লাগেজ নিয়ে দিপু সাহেবও ছিলেন।
‘স্যারের কথামতো আমি গাড়ি চালিয়ে তাদের তিনজনকে রাজারবাগের বাসায় নামিয়ে দিয়ে বাসায় চলে আসি। এরপর আবার রাত ৯টার দিকে ম্যাডাম আমাকে ফোন দিয়ে বলেন বনানীর বাসা থেকে তার খালাতো বোন আর বোনজামাইকে নিয়ে রাজারবাগে স্যারের বাসায় যেতে। আমি তাদের দুজনকে নিয়ে ১০টায় রাজারবাগে স্যারের বাসায় যাই।’
নাজির বলেন, ‘ম্যাডামের খালতো বোন আর তার জামাই আমাকে নিচে রেখে স্যারের বাসায় যান। আমি নিচে অপেক্ষা করতে থাকি। এরপর রাত প্রায় আড়াইটার দিকে ম্যাডাম, ম্যাডামের বোন, বোনজামাই ও দিপু সাহেব ওই বাসা থেকে বের হয়ে গাড়িতে ওঠেন। আমি তাদের নিয়ে বাসায় চলে আসি। এরপর থেকে আটক হওয়ার আগে ম্যাডাম আর বাসা থেকে বের হননি।’
অনুসন্ধানে জানা যায়, ১ আগস্ট রাতে পরীমণির খালাতো বোন শায়লা ও তার স্বামী গোলাম সাকলায়েনের বাসায় গিয়েছিলেন। তারপর থেকে তারা পরীমণির বাসায় ছিলেন। এমনকি র্যাবের অভিযানের দিনও শায়লা ও তার স্বামী পরীমণির বাসাতেই ছিলেন।
বিষয়টি নিয়ে শায়লা ও তার স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয় তবে তারা কোনো কথা বলতে রাজি হননি। পরীমণির বাসায় গেলে শনিবার বাসার নিরাপত্তাকর্মী পরীমণির বাসায় যোগাযোগ করে জানান, সেখানে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার মতো কেউ নেই।
ইতোমধ্যে গোলাম সাকলায়েনের সরকারি বাসভবনের সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশ পেয়েছে। সেখানে দেখা যায়, ১ আগস্ট সকাল ৮টার দিকে পরীমণির হ্যারিয়ার গাড়ি নিয়ে গোলাম সাকলায়েন রাজারবাগের মধুমতি ফ্ল্যাটে যান। পরে রাত ১০টার দিকে পরীমণির খালাতো বোন শায়লা ও তার স্বামীও সেখানে যান। রাত ২টার দিকে পরীমনিসহ চারজন গোলাম সাকলায়েনের বাসা থেকে বের হয়ে যান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাকলায়েন শনিবার কাছে দাবি করেন, পরীমণির সঙ্গে তার কোনো প্রেমের সম্পর্ক নেই, কাজের সুবাদে পরিচয় ও কথা হয়েছে। এর বাইরে যা কিছু সংবাদমাধ্যমে এসেছে তার সবই মিথ্যা। সিসিটিভি ফুটেজের কথা বলা হলে কোনো মন্তব্য না করে ফোন কেটে দেন সাকলায়েন।
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন