• ২৭শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১২ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২৫শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

নগরীর সবুজবাগ এলাকায় প্রবাসী মহিলা সখিনার রহস্যজনক মৃত্যু, ধামাচাপা দিতে মরিয়া স্বজনরা !

sylhetnewspaper.com
প্রকাশিত এপ্রিল ৮, ২০২১
নগরীর সবুজবাগ এলাকায় প্রবাসী মহিলা সখিনার রহস্যজনক মৃত্যু, ধামাচাপা দিতে মরিয়া স্বজনরা !

বিশেষ প্রতিবেদক :: নগরীর শিবগঞ্জের সবুজবাগ আবাসিক এলাকায় একজন যুক্তরাজ্য প্রবাসী মহিলার রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে তোলপাড় চলছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ ওই প্রবাসী মহিলাকে হত্যা করা হয়েছে। তবে নিহতের আত্মীয়দের দাবি প্রবাসী মহিলা মানসিক অসুস্থ ছিলেন! আত্মীয়দের দাবি বুধবার সকালে প্রবাসী ওই মহিলার মৃত্যু হয়।

এলাকার স্থানীয়বাসিন্দারা জানান-এর আগে মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে ওই প্রবাসী মহিলা- নিজেকে বাঁচাতে চিৎকার করেন।

এসময় এলাকার দুই যুবক মহিলার চিৎকার শুনে বাঁচাতে গেলে ওই প্রবাসী মহিলার আত্মীয় জুনেদ তাদের জানায়- তিনি মানসিক রোগী, পারিবারিক সমস্যা হয়েছে। তখন সেই দুই যুবক ফিরে আসার সময় ওই মহিলা তাদেরকে বলে- আমি মরে গেলে আপনারা আল্লাহর কাছে দায়ি থাকবেন!

পরে বুধবার সকালে প্রবাসী মহিলার মৃত্যুর ঘটনা শুনে ওই দুই যুবক বিষয়টি এলাকার স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের বিষয়টি জানালে এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করে চলে যায়!

এদিকে এমন অভিযোগের পরেও পুলিশ লাশটি সিলেট ওসমানী হাসপাতালে না নেয়ায় এ ব্যাপারে সন্দেহ আরো গভীর হয়েছে।

যুক্তরাজ্য প্রবাসী মহিলার নাম সখিনা বিবি (৫৮)। গেলো মাসে প্রবাস থেকে ফিরে তিনি নগরীর শিবগঞ্জের সবুজবাগ আবাসিক এলাকার ২নং রোডের হোসেন মঞ্জিলের বোনের বাসায় বেড়াতে এসেছেন।

বোনের ছেলের সাথে সখিনা বিবি তার এক মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। বর্তমানে তারা প্রবাসে রয়েছেন।

এদিকে- স্থানীয়দের ধারণা মহিলাকে হত্যার পর স্থানীয় একটি প্রাইভেট হাসপাতালের ডেথ সার্টিফিকেট পুলিশকে দেখিয়ে লাশটি দাফন কার্যক্রম চালাতে মরিয়া লাশের আত্মীয়স্বজন।

তাদের দাবি সিলেট ওসমানী হাসপাতালে না নিয়ে ময়না তদন্ত ছাড়া বিষয়টি ধামাচাপা দিচ্ছেন জুনেদসহ তার আত্মীয়রা! বুধবার দুপুরে ঘটনা নিয়ে সবুজবাগ আবাসিক এলাকার ক্লাবের সেক্রেটারিসহ অন্যান্য সদস্যদের অসৌজন্যমূলক ব্যবহার ও মারমুখী আচরণ করেন লাশের স্বজনরা।

স্থানীয় একটি সূত্র জানায়, গ্রামের বাড়ির জমিজমা নিয়ে মেয়ের জামাইয়ের সাথে বিরোধ ছিলো মৃত প্রবাসী সখিনা বিবির সাথে। এনিয়ে কদিন পরপর তাদের মধ্যে ঝগড়া হত।

শিবগঞ্জের সবুজবাগ আবাসিক এলাকার স্থানীয় দুই যুবক আতিকুর রহমান চৌধুরীর ছেলে তাজ ও আমিনুল ইসলামের ছেলে মারুফ সিলেট লাইভকে জানায়, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে ওই প্রবাসী মহিলা- নিজেকে বাঁচাতে চিৎকার করেন।

আমরা দু’জন মহিলার চিৎকার শুনে বাঁচাতে গেলে ওই প্রবাসী মহিলার আত্মীয় জুনেদ জানায়- তিনি মানসিক রোগী, পারিবারিক সমস্যা হয়েছে।

তখন আমরা ফিরে আসার সময় প্রবাসী মহিলা আমাদেরকে বলেন- আমি মরে গেলে আপনারা আল্লাহর কাছে দায়ি থাকবেন! পারিবারিক সমস্যা হয়েছে এই ভেবে আমরা ঘটনাস্থল থেকে চলে আসি।

পরে আজ শুনি ওই মহিলা মারা গেছেন! পরে আমরা এলাকার স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের বিষয়টি জানাই।

ঘটনাস্থলের পাশের বাড়ির বাসিন্দা বৃদ্ধ হাজি ফয়জুর রহমান  জানান, মঙ্গলবার রাতে ওই প্রবাসী মহিলা নিজেকে নিজেকে বাঁচাতে চিৎকার করেন। আমি বৃদ্ধ লোক তাদের বাসার লোকদের সুরচিৎকার শুনে ভয়ে যেতে পারিনি।

সবুজবাগ আবাসিক এলাকার ক্লাবের সেক্রেটারি রুম্মান আহমদ বলেন, বিষয়টি রহস্যজনক।

এলাকার যুবকদের কথা শুনে আমরা প্রশাসনকে বিষয়টি অবগত করি। পরে শাহপরান (র:) মডেল থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করে চলে যায়।

তিনি মানসিক রোগী ছিলেন বলে জানান, প্রবাসী মহিলার আত্মীয় জুনেদ। তবে প্রবাসী মহিলা মানসিক রোগীর কোনো সত্যতা দেখাতে পারেননি জুনেদ।

তবে প্রবাসী মহিলা কিভাবে মারা গেলেন এর কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি জুনেদ।

বিষয়টি শুনে ঘটনাস্থলে আসেন শাহপরান (র:) মডেল থানার উপশহর পুলিশ ফাড়িঁর ইনচার্জ এসআই সমিরন। তিনি জানান, প্রবাসী মহিলা সখিনা বিবি অসুস্থ ছিলেন।

তার আত্মীয়রা নগরীর ইবনে সিনা হাসপাতালের ডেথ সার্টিফিকেট দেখিয়েছেন। এছাড়া প্রবাসী মহিলার এক মেয়ে ভিডিও কলের মাধ্যমে তার মায়ের অসুস্থতা নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে, মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে বিষয়টি ধামাচাপা দিচ্ছেন ওই প্রবাসীর আত্মীয়রা এমনটাই দাবি স্থানীয়দের।

শাহপরান (র:) মডেল থানা পুলিশও ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করে চলে যায়। এলাকার যুবকদের কথার বিষয়ে কোনো পাত্তাই না দেয়া, ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে না পাঠিয়ে ময়না তদন্ত ছাড়া লাশটি দাফন হচ্ছে।

এ নিয়ে তাদের মনে আরো সন্দেহ ও রহস্য সৃষ্টি হয়েছে। তারা বিষয়টি সুষ্ঠ তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।

বিষয়টি জানতে শাহপরান (র:) থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ আনিসুর রহমানের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলে তার ফোন ব্যস্ত থাকায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন