সিলেট ওসমানীনগরের শেরপুর ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেডের (ইউসিবিএল) এটিএম বুথে ডাকাতির ঘটনায় আরও একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
গ্রেপ্তার সাফি উদ্দিন জাহিরকে হবিগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করে সিলেট জেলা গোয়েন্দা পুলিশ।
বৃহস্পতিবার সকালে নিজ কার্যালয় সংবাদ সম্মেলন করে এমন তথ্য জানান সিলেটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন।
বুধবার সন্ধ্যায় হবিগঞ্জ সদর উপজেলার পাড়িয়া গ্রাম থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয় জানিয়ে পুলিশ সুপার বলেন, জাহির এটিএম বুথ লুটের সাথে সরাসরি জড়িত। এবং তিনি এই ডাকাতির ঘটনার অন্যতম পরিকল্পনাকারী।
জাহিরকে গ্রেপ্তারে সময় একটি পালসার মোটর সাইকেল জব্দ করা হয় এবং ডাকাতির কাছে ব্যবহৃত একটি শাবল উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
টানা তিন দিন হবিগঞ্জ শহরে অবস্থান করে জাহিরকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয় বলে জানান এসপি।
ফরিদ উদ্দিন বলেন,এটিএম বুথ লুটের ঘটনা খুব বির। এ ধরণের ঘটনা আমাদের বিস্মিত তরেছে। এমন ডাকাদতির পুণরাবৃত্তি ঠেকাতে ব্যংক কর্তৃপক্ষকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আরও জোরদার করতে হবে।
গত ১৩ সেপ্টেম্বর ভোররাতে সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলার শেরপুর পশ্চিম বাজারে ইউসিবিএল-এর এটিএম বুথে ডাকাতির ঘটনা ঘটে।
ওই দিন চার মুখোশধারী বুথে ঢুকে নিরপত্তাকর্মীকে অস্ত্রের জিম্মি করে ২৪ লাখ ২৫ হাজার ৫ শ’টাকা লুট করে নিয়ে যায়।
সিসি ক্যামেরায় ধারণ হওয়া দৃশ্যে দেখা যায়, ডাকাতদের মধ্যে তিনজনের মাথায় লাল কাপড় বাধা ছিলো ও একজনের মাথায় ক্যাপ। সবার মুখই মাস্ক দিয়ে ঢাকা ছিলো।
চাঞ্চল্যকর এ ঘটনার পর কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি ওসমানীনগর থানালিশ।
পরবর্তীতে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ মামলা করার পর থানা থেকে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাইবার ইউনিটের কাছে সহযোগিতা চাওয়া হয়।
সে মোতাবেক কাজ শুরু করে ডিএমপির সাইবার ইউনিট।
বিভিন্ন সূত্র ধরে তদন্তের পর ঢাকা থেকে নূর মোহাম্মদ নামে এক দর্জিকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হবিগঞ্জের হাওর এলাকা থেকে ডাকাতির ঘটনায় শামীম আহম্মেদ ও তার সহযোগী আব্দুল হালিমকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তাদের গ্রেপ্তারের তথ্য জানাতে বুধবার দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
এতে ডিএমপির যুগ্ম-কমিশনার হারুন অর রশীদ বলেন, বুথের পাহারাদারদের হাত-পা বেধে ও মুখ স্কচটেপ দিয়ে আটকে তারা ভেতরে প্রবেশ করে।
শাবল দিয়ে বুথ ভেঙে ২৪ লাখ ২৫ হাজার ৫০০ টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়।
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকতৃরা জানায়,সিরিয়াল দেখে টাকা লুটের এ পরিকল্পনা করা হয়। দলের প্রধান শামীম আহম্মেদ।
একসময় ওমান প্রবাসী শামীম কয়েক বছর আগে দেশে ফেরেন। দেশে এসে তেমন কোনো কাজ-কর্ম করতেন না।
প্রযুক্তি জ্ঞান সম্পন্ন শামীম নিয়মিত ভারতের মেগা সিরিয়াল সিআইডি দেখতেন। সিআইডি দেখেই পরিকল্পনা করে এটিএম বুথে লুট করেন তারা।
হারুন অর রশীদ বলেন, ‘সিসি ক্যামেরায় কালো রং এর স্প্রে করা, মুখমন্ডলে কাপড় পেচিয়ে শাবল দিয়ে বুথ ভাঙ্গা সবই ভারতের সিরিয়াল দেখে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন তারা।’
লুটের দশ লাখ টাকা উদ্ধার করেছে পুলিশ। টাকার একটি অংশ দিয়ে তারা জুয়া খেলেছে। এছাড়া লুট করার কাজে ব্যবহৃত মোবাইল, ছুরি, প্লাস ও মাথায় ব্যবহার করা তিনটি কাপড় উদ্ধার করা হয়েছে। তবে তাদের মধ্যে জহির নামে একজন এখনো পলাতক।
হারুন অর রশীদ বলেন, ‘ঘটনাটি ডিএমপির মধ্যে সংঘটিত না হলেও আমরা কাজ করেছি। অপরাধীদের জানাতে চাই, দেশের যেখানেই এধরনের অপরাধ করা হোক না কেন, কেউ পার পাবে না।’
সাইবার ইউনিটের উপ পুলিশ কমিশনার শরীফুল ইসলাম বলেন, ‘লুট করা টাকা দিয়ে তারা জুয়া খেলেছে বলে প্রাথমিকভাবে জানিয়েছে। তদন্ত চলছে, সিলেট পুলিশ তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করবে। তখন আরও বিস্তারিত জানা যাবে।
এদিকে ডিবি পুলিশ বলছে, ১৩ সেপ্টেম্বরের ওই ঘটনায় মোট ২৪ লাখ লুট করা হয়। এরমধ্যে ১০ লাখ টাকা উদ্ধার করেছে পুলিশ। টাকার একটি অংশ দিয়ে তারা জুয়া খেলেছে।
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন