• ২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২৩শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

চা শ্রমিকদের টিকা প্রদানের আলাদা উদ্যোগ নেওয়া হোক

sylhetnewspaper.com
প্রকাশিত আগস্ট ৩, ২০২১
চা শ্রমিকদের টিকা প্রদানের আলাদা উদ্যোগ নেওয়া হোক

গত বছর করোনা সংক্রমণের প্রথম ধাক্কায় যখন সারাদেশে লকডাউন চলছিলো, সবকিছুই বন্ধ। তখনও খোলা ছিলো চা বাগানগুলো। বাগানগুলোতে চলেছে নিয়মিত কার্যক্রম। এখন যে লকডাউন চলছে এবারও চা বাগানগুলোকে লকডাউনের আওতার বাইরে রাখা হয়েছে।যুক্তি হিসেবে বলা হয়েছে- চা শ্রমিকরা প্রাকৃতিক পরিবেশে কাজ করেন তাই তাদের সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি নাই, কিন্তু এসব যুক্তিকে ভুল প্রমাণ করে চা বাগানে করোনা সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন চা বাগানে সংক্রমণের পর মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে, এবং উপসর্গ নিয়েও অনেকে মৃত্যুবরণ করছেন।

চা বাগানে উপসর্গ নিয়েই মৃত্যুর বেশি ঘটনা ঘটছে। এর কারণ অনেক। প্রথমত অসচেতনতা। চা শ্রমিকরা অধিকাংশই জানেন না করোনার উপসর্গ কী কী? প্রচার মাধ্যমে যেসব প্রচারণা হয় তারা সেসব থেকে অনেক দূরে বাস করেন। বেশিরভাগের ঘরে টেলিভিশন বা কোন প্রচারমাধ্যম নেই। গত ১৬ মাসে সরকার বা বাগান মালিকদের উদ্যোগে কোন সচেতনতামূলক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়নি। করোনার উপসর্গ সম্পর্কে না জানার ফলে এবং চা বাগানে কোন টেস্টিং বুথ না থাকায় উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুর হার বেশি। শহর এবং প্রত্যন্ত এলাকার একজন শ্রমিকের পক্ষে বিভাগীয় শহরে এসে করোনা টেস্ট করা প্রায় অসম্ভব।

এছাড়া রয়েছে আতংক যদি টেস্টের রেজাল্ট পজিটিভ হয় তখন তাকে একঘরে করা হবে এবং তার পরিবারের চরম দূর্দশা নেমে আসবে, করোনা আক্রান্ত একজন শ্রমিক বা তার পরিবারের জন্য সরকার বা বাগানের তরফ থেকে কোন রকম পদক্ষেপ নেই যাতে একজন শ্রমিক আশ্বস্ত হতে পারে।

শহরের কোন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে যখন সিট নেই, তখন চা বাগান থেকে আসা একজন মুমূর্ষ রোগী যার অর্থনৈতিক কোন সামর্থ্যই নেই সে কিভাবে চিকিৎসা সেবা আশা করতে পারে?

মহামারীকালিন ১৬ মাসেও চা শ্রমিকদের জন্য কোন আইসোলেশন সেন্টার বা কোন ফিল্ড হসপিটাল প্রস্তুত করা হয়নি, এমনকি তাদের যে ডিসপেনসারিগুলো আছে সেগুলোর ও কোন রকম সক্ষমতা বাড়ানো হয়নি, সুতরাং এক চরম অপ্রস্তুত মহামারীর সম্মুখীন হতে যাচ্ছে দেশের অন্যতম লাভজনক শিল্পখাতের সবচাইতে নিম্নমজুরির শ্রমিক জনগোষ্ঠী।

তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত ১৬ মাসে তাদেরকে কয়েকবার ওয়ানটাইম মাস্ক দেয়া হয়েছিল। ১০০/১২০ টাকা মজুরি থেকে প্রতিদিন নতুন মাস্ক কেনা তাদের পক্ষে সম্ভব না, সম্ভব হয় না ক্ষারযুক্ত সাবান কেনা নিয়মিত হাত ধোয়ার জন্য। ফলে করোনা ভাইরাস থেকে নিরাপদ থাকার জন্য যে স্বাস্থ্যবিধি তার কোনটাই মেনে চলা তাদের জন্য সম্ভব নয়।

চা বাগানগুলোকে যেহেতু উৎপাদনের ক্ষতির কথা চিন্তা করে লকডাউনের আওতামুক্ত রাখা হয়েছে তাই প্রথমসারিতে তাদের টিকা পাওয়ার কথা। অথচ এখনো এ সম্পর্ক কোন পদক্ষেপ নেই, গণটিকা শুরু হলে কতজন স্বেচ্ছায় টিকা নেবে তার কোন নিশ্চয়তা নাই।

আশংকার কথা হচ্ছে, অবিলম্বে যদি চা বাগানে টেস্ট বুথ না করা হয় এবং উপসর্গ নিয়ে ঘুরতে থাকা আক্রান্তদের মাধ্যমে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন একবার ঘটে যায় তখন ভয়াবহ বিপর্যয় ঘটতে পারে।

কারণ শ্রমিকরা খুব ঘনবসতিপূর্ণভাবে বসবাস করে। তাই বাগানে সংক্রমণ দেখা দিলে তা প্রতিরোধ করা যাবে না এবং তাদের জীবনমান এরকম যে শিশুদের মাঝে ৯৫ ভাগ অপুষ্টিতে ভুগছে বয়স্করা ও একই রকম অপুষ্টির শিকার, তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রাণসংহারী এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়তে পারবে না।

চা একটি শ্রমঘন শিল্প। শ্রমিকদের অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতা চা শিল্পকে সমৃদ্ধ করছে। দক্ষ এবং অভিজ্ঞ শ্রমিকরা নতুনদের সাথে তাদের অভিজ্ঞতা বিনিময় করে তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি করেন, এসব দক্ষ এবং অভিজ্ঞ শ্রমিক যাদের অনেকের বয়স ৪০-এর বেশি এবং তারা সবচেয়ে ঝুঁকিতে আছেন। তাদের মাঝেই আক্রান্ত হচ্ছেন বেশি। তারা যদি করোনায় মৃত্যুবরণ করেন তখন এই শিল্পখাত হুমকির মুখে পড়বে। শিল্প বাঁচাতে হলে শ্রমিককে বাঁচাতে হবে। তাই দেরি না করে চা শ্রমিক দের জন্য আলাদা টেস্ট বুথ চালু করার পাশাপাশি তাদের জন্য জরুরিভাবে ভ্যাকসিন দেয়ার ব্যবস্থা এবং আইসোলেশন সেন্টার চালু করা হোক।

এছাড়া স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ করার জন্য কাপড়ের মাস্ক ও জীবানুনাশক সরবরাহ করা হোক এবং তাদের স্বাস্থ্য সেবার মান উন্নত করা হোক। বাগান এলাকাগুলোতে সচেতনতামূলক প্রচারণা শুরু করা হোক। কয়েক লক্ষ মানুষের জীবন বিপন্ন করে চা উত্তোলন, রপ্তানি এবং বাণিজ্য চলতে পারে না। এটা অমানবিক, তাই শ্রমিকদের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অবিলম্বে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন