বিশ্বনাথ প্রতিনিধি : সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার খাজাঞ্চী ইউনিয়নের রাজাগঞ্জ বাজারস্থ পুষণী গুচ্ছ গ্রামে জনৈক দরিদ্র এক কৃষকের মেয়েকে বিয়ে করতে এসে ভুয়া বর, ঘটক ও ভুয়া সাংবাদিক (দৈনিক সবুজ সিলেট পত্রিকার বিশ্বনাথ প্রতিনিধি) পরিচয়দানকারী প্রতারক সামছুল ইসলামসহ ৩ জন আটকের পর মুচলেকা দিয়ে মুক্তি পেয়েছেন।
আটককৃত প্রতারক সামছুল কখনও এমপি প্রার্থী, কখনও উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী, কখনও কাতার যুবলীগের সভাপতি, আবার কখনও আওয়ামী লীগের বড় নেতা, আবার কখনও ভুয়া সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে এলাকার সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা করে মানুষকে হয়রানি করে আসছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
সর্বশেষ সোমবার (১২ জুলাই) রাতে দরিদ্র কৃষকের কন্যাকে বিয়ে করতে এসে সামছুলসহ ভুয়া বর ও ঘটক স্থানীয় জনতার হাতে আটক হয়। এরপর মঙ্গলবার (১৩ জুলাই) বিকেলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও পৌর প্রশাসক সুমন চন্দ্র দাশের কার্যালয়ে স্থানীয় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এসএম নুনু মিয়া, খাজাঞ্চী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন, ৪নং ওয়ার্ডের মেম্বার সিরাজ উদ্দিন ও বিশ্বনাথ সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি সাইফুল ইসলাম বেগ’র উপস্থিতিতে মুচলেকা দিয়ে রক্ষা পায় তারা।
স্থানীয় জনতার হাতে আটককৃত তিন প্রতারক হল- উপজেলার রামপাশা ইউনিয়নের নওধার গ্রামের জুনাব আলীর পুত্র ভুয়া বর ফারুক আলী (৩৯), একই গ্রামের শওকত আলীর পুত্র দৈনিক সবুজ সিলেট’র সাংবাদিক পরিচয়দানকারি সামছুল ইসলাম (৪০) ও খাজাঞ্চী ইউনিয়নের প্রতাপপুর গ্রামের মৃত ইউনুছ আলীর পুত্র বিয়ের ঘটক কচির আলী (৩৮)।
মুচলেকায় ভুয়া সাংবাদিক সামছুল ইসলাম বলেছে, সে আর কোন দিন দৈনিক সবুজ সিলেট কিংবা সাংবাদিক পরিচয় দিবে না। কোন ধরনের প্রতারণা করবে না। সে যা করেছে ভুল করেছে বলে উপস্থিত সবার কাছে পা ধরে ক্ষমা চায়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঘটক কচির আলীর মাধ্যমে পূষণী গুচ্ছগ্রামের হানিফ আলীর মেয়ের সাথে বিয়ে ঠিক হয় ফারুক আলীর। সময় নির্ধারণ হয় সোমবার রাতে। বিয়ের সব আয়োজন সম্পন্ন করেন কনেপক্ষ। নির্ধারিত সময়ে ঘটক কচির আলী ও সামসুল ইসলামকে সাথে নিয়ে কনের ঘরে আসেন বর ফারুক আলী। এসময় সামসুল নিজেকে দৈনিক সবুজ সিলেট পত্রিকার সাংবাদিক হিসেবে পরিচয় দেন।
কনের পিতা হানিফ আলী জানান, ‘বিয়ের আগ মূহুর্তে আমরা জানতে পারি বর ফারুক আলী বিবাহিত। তার সন্তানও রয়েছে। অথচ, বিয়ের আলাপকালে বিষয়টি বর গোপন রাখেন। তার স্ত্রী-সন্তান আছে জেনে আমরা বুঝতে পারি তিনি প্রতারণায় আশ্রয় নিয়ে আমার মেয়েকে বিয়ে করতে এসেছেন। তাদের সাথে থাকা সাংবাদিক পরিচয়দানকারী সামছুল ইসলামও সাংবাদিক নন। ভূয়া সাংবাদিক। পরে আমরা তাদেরকে আটকে রেখে স্থানীয় ইউপি সদস্য সিরাজ উদ্দিনকে অবহিত করি।
খাজাঞ্চী ইউনিয়ন পরিষদের ৪নং ওয়ার্ডের মেম্বার সিরাজ উদ্দিন বলেন, সোমবার রাতে ওই তিন প্রতারককে আমার জিম্মায় রেখে আজ (মঙ্গলবার) দুপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মহোদয়ের নির্দেশে তার অফিস নিয়ে যাই।
খাজাঞ্চী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন জানান, মঙ্গলবার বিকেলে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এসএম নুনু মিয়া, উভয় পক্ষের স্থানীয় ইউপি সদস্য ও সংবাদকর্মীসহ আমার উপস্থিতিতে ওই তিনজন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মহোদয়ের কাছে মুচলেকা এবং কনে পক্ষের ক্ষতিপূরণের টাকা দিয়ে ছাড়া পেয়েছেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও পৌর প্রশাসক সুমন চন্দ্র দাশ বলেন, তারা ভবিষ্যতে এমন কাজ করবে না মর্মে মুচলেকা দিয়েছেন। সেই সাথে কনে পক্ষের ক্ষতিপূরণের টাকাও দিয়েছেন।
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন