• ২৩শে অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৭ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২০শে রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

একদিনে দৃশ্যপট পাল্টে এখন মামা ভাগনা

sylhetnewspaper.com
প্রকাশিত জুলাই ৬, ২০২১
একদিনে দৃশ্যপট পাল্টে এখন মামা ভাগনা

চালিবন্দরে জায়গা দখল : ভাগনার পর যা বললেন মামা, ভূমি আত্মসাতের অভিযোগ দুজনের বিরুদ্ধে। পরস্পর পরস্পরকে দায়ি করে করেছেন সংবাদ সম্মেলন। পাল্টাপাল্টি এই সংবাদ সম্মেলনের পর অবস্থান থেকে সরে আসলেন দু’জনেই। হয়ে গেলেন নিকটাত্মীয়। অর্থাৎ অভিযুক্ত দু’জন একে অপরের মাম-ভাগনা। বিষয়টি খোলাসা করেন ২৭ জুন একটি সংবাদ সম্মেলনে। এর আগের অভিযোগকে ভুল বোঝাবুঝি আখ্যা দিয়ে দু’জনেই জানালেন সমঝোতা হয়ে গেছে। এর পর এই ঘটনায় শুরু হয় তোলপাড়। কি সেই সমঝোতা এবং কিভাবেই সমঝোতা-বিষয়টি নিয়ে কৌতুহল সৃষ্টি হয় সবার মাঝে। অভিযুক্ত এবং নতুন সম্পর্কিত মামা-ভাগনা দু’জন হলেন, দক্ষিণ সুরমার জৈনপুরের প্রবাসী গোলাম কিবরিয়া হিরা ও নগরীর ছড়ারপাড়ের হাবিবুর রহমান মজলাই।

অভিযোগের শুরুটা হয় ২৩ জুন। ওই দিন সিলেটের দুটি প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন প্রবাসী গোলাম কিবরিয়া হীরা। সংবাদ সম্মেলনে তিনি হাবিবুর রহমান মজলাইসহ একটি গ্যাং কে দায়ি করে তাদের বিরুদ্ধে ৪০০ শতক ভূমি দখল অপচেষ্টার অভিযোগ তোলেন।
সেখানে তিনি উল্লেখ করেন ৪০০ শতকের অন্তর্গত ১১২ শতক ভূমি আব্দুল মছব্বির ও আব্দুল বারীর কাছ থেকে ২০০১ সালে ক্রয় করেন। তাঁর সাথে ক্রেতা রয়েছেন অপর প্রবাসী ফয়সল আহমদ। তাদের ক্রয়কৃত জায়গাও জাল কাগজপত্র তৈরির মাধ্যমে ওই চক্র আত্মসাত ও জবরদখলের অপচেষ্টা চালাচ্ছে।

এর তিনদিন পর পাল্টা অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করেন ছড়ারপাড় নিবাসী (বর্তমানে মাদানী সিটি, চালিবন্দর) হাবিবুর রহমান মজলাই। রোববার (২৭ জুন) ওই সংবাদ সম্মেলনে গোলাম কিবরিয়া হীরা নামের জনৈক লোককে প্রতারক ও ভুমি আত্মসাৎকারী বলছিলেন হাবিবুর রহমান মজলাই। ওইদিন তিনি গোলাম কিবরিয়া হীরাসহ গং দের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ তুলেন।

উভয়ের সংবাদ সম্মেলনের একদিন পর পাল্টে যায় দৃশ্যপট। অভিযোগ থেকে সরে আসেন দু’জনই এবং দুজনই্ একসাথে সংবাদ সম্মেলন করে ভুল বোঝাবুঝির অবসান হয়েছে বলে জানান সংবাদকর্মীদের। সেখানে অভিযুক্ত গোলাম কিবরিয়া হীরাকে নিজের মামা বলেও পরিচয় দেন হাবিবুর রহমান মজলাই।

মঙ্গলবার (২৯ জুন) সংবাদ সম্মেলনে হাবিবুর রহমান মজলাই বলেন, দক্ষিণ সুরমার জৈনপুরের প্রবাসী গোলাম কিবরিয়া হিরার সাথে একটি ভুল বুঝাবুঝি সৃষ্টি হয়েছিল এবং তার অবসান হয়েছে। এর আগে চালিবন্দরের কয়েক কোটি টাকা মূল্যমানের জমি নিয়ে এ দু’জন একে অপরকে নিয়ে যে পাল্টা পাল্টি অভিযোগ করেছিলেন তাও প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে দু’জনের পক্ষ থেকে বলা হয়,সিলেট সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদের মধ্যস্থতায় এই ভুলবুঝাবুঝির নিষ্পত্তি হয়েছে। তাই এসব অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিয়েছেন তারা।

এর আগে রোববার (২৭ জুন ) গোলাম কিবরিয়া হীরার বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলনে হাবিবুর রহমান মজলাই বলেন, চালিবন্দর এলাকার মাদানি সিটিতে গায়ের জোরে কয়েকটি প্লট দখলসহ নানা জালিয়াতির ঘটনায় জড়িত প্রবাসী গোলাম কিবরিয়া হীরা। তিনি মাদানি সিটির ভূমি রক্ষা ও গোলাম কিবরিয়া হীরার কবল থেকে মুক্তির জন্য আইনানুগ হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

লিখিত বক্তব্যে মজলাই উল্লেখ করেন, গোলাম কিবরিয়া হীরা নিরীহ ও অসহায় মানুষের জায়গা দখল করেছেন। কাষ্টঘরের সুবোধ শ্যামকে নি:সন্তান দেখিয়ে কোটি টাকার সম্পদ আত্মসাত করেছেন। এ নিয়ে ২০১২ সালে তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করা হয়। দক্ষিণ সুরমার জৈনপুরের মহালক্ষীবাড়ির দেবোত্তার সম্পদ ও শুক্লা চক্রবর্তীদের ভিটেমাটিও তিনি আত্মাৎ করেছেন।

তার বিরুদ্ধে ২০১৯ সালে আদালতে মামলাও হয়। তাছাড়া, ২০০১ সালে আব্দুল মছব্বিরের কাছ থেকে মাদানি সিটিতে জায়গা ক্রয়ের কথা বলেছেন। অথচ মছব্বির যুগ্ম জেলা জজ আদালতে হীরার বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। প্রকৃত পক্ষে হীরাই একজন জালিয়াত। কিন্তু তিনি ঢালাওভাবে মাদানি সিটির সাথে সংশ্লিষ্ট মনিন্দ্র রঞ্জন দে, অ্যাডভোকেট মহানন্দ পাল, সুকেশ দাস ও আবু সাইদ অভির বিরুদ্ধে অপপ্রচার করেন। দীর্ঘদিন ধরে হীরা ও তার সহযোগিরা ভূমি জালিয়াতি ও উচ্চ আদালতে নির্দেশ অমান্য করে আসছেন। হাবিবুর রহমান মজলাই মাদানি সিটি রক্ষা ও তাদের উপর দায়ের করা মামলা থেকে মুক্তি পেতে প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেন।

ভুল বোঝাবুঝির সমাধান হলেও ভূমি আত্মসাতের বিষয়টি কিভাবে সমাধান হল-এমন প্রশ্নের জবাবে গোলাম কিবরিয়া হীরা বলেন,সিসিক কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদ দু’জনকে বিরোধ থেকে সরে আসার অনুরোধ করেছেন। বিষয়টি দেখভালের জন্য তিনি দায়িত্ব নিয়েছেন।

আপনার উপর সুবোধ শ্যামের জায়গা দখল,দক্ষিণ সুরমার জৈনপুরের মহালক্ষীবাড়ির দেবোত্তার সম্পদ ও শুক্লা চক্রবর্তীদের ভিটেমাটি আত্মসাতের যে অভিযোগ উঠেছে-সেটির বিষয়ে কি বলবেন ? এমন প্রশ্নের জবাবে গোলাম কিবরিয়া হীরা বলেন, অভিযোগ সবই মিথ্যা।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন