বিশেষ প্রতিবেদক:: মরিয়ম আক্তার মুন্নী। বয়স ত্রিশ। সর্বত্ত পরিচয় দেন শিবগঞ্জের হাতিমবাগ এলাকার বাসিন্দা। পিতার নাম জাকির হোসেন। একাধিক বিয়ে,পরপুরুষকে নিয়ে রোমান্সসহ নানা ঘটনায় সিলেটে এই আলোচিত মুন্নী।সিলেট নগরীর কয়েকটি অভিজাত বাসায় রয়েছে মরিয়ম আক্তার মুন্নীর যাতায়াত। তবে সে একেক সময় সে একেক বাসায় বসবাস করে। কখনো গোপনে,কখনো আবার প্রকাশ্যে তার বসবাস।
২০২০ সালের ১৪ নভেম্বর শনিবার সকালে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল নগরীর সোনারপাড়া ঊর্মি ৪৭/২ বাসা থেকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বিপুল পরিমান ইয়াবা ট্যাবলেটসহ তাকে গ্রেফতার করে।
সোনারপাড়া ওই বাসায় মুন্নি আশ্রিতা হিসেবে বসবাস করতো। এবং সিলেট শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে ইয়াবা পাইকারি দরে কিনে এনে বিক্রি ও সেবন করতো।ওই বাসায় ইয়াবা বিক্রি ও সেবনের আস্তানা গড়ে তুলেছিল মুন্নি। এর আগেও সে সিলেট নগরীর বিভিন্ন স্থানে বাসা ভাড়া নিয়ে ইয়াবা বিক্রি ও সেবনের আস্তানা হিসেবে ব্যবহার করে আসছিল।
দীর্ঘদিন কারাভোগেরপর সিলেটের এক অভিজাত পরিবার মুন্নিকে জেল থেকে জামিনে ছাড়িয়ে আনেন। শর্ত থাকে মুন্নি এসব অপকর্ম ছেড়ে দেয়ার। মুন্নিও তাতে সাড়া দিয়ে জেল থেকে বের হয়। পরে ওই অভিজাত পরিবার মুন্নিকে ঢাকায় নিয়ে যায়। ঢাকা থেকে সিলেটে ফেরার পর অভিজাত পরিবার তাকে সিলেটের মেন্দিবাগের গার্ডেন টাওয়ারের একটি ফ্ল্যাট ভাড়া করে দেন।
এক সময় সিলেটের লন্ডনি যুবকদের কাছে তার পরিচিতি ছিল ব্যাপক। টাকাওয়ালা পরিবারের দিকে থাকতো চোখ। অনেক চেষ্টা করেও সেই অভিজাত পরিবার মুন্নিকে বদলাতে পারেন নি। টাকার নেশার সেই চোখ এখনো বদলায়নি তার। মুন্নির চলাফেরা আচ করতে পেরে গার্ডেন টাওয়ার কর্তৃপক্ষ তাকে সেখান থেকে ফ্ল্যাট ছেড়ে দেয়ার জন্য নির্দেশ দেন। অভিজাত পরিবারও মুন্নির হাল ছেড়ে দেন। এখানেই শেষ নয়।
জেল থেকে বেরোনোর পর নেশার পাশাপাশি মুন্নি এবার নতুন প্রতারণা শুরু করেছে। ব্ল্যাকমেইলিং!
তার ব্ল্যাকমেইলের শিকার অনেকেই। সেই অভিজাত পরিবারও এখন তার কাছে জিম্মি। এখনও সেই অভিজাত পরিবার সম্মানের ভয়ে তাকে মাসোহারা দেন। মানসম্মানের ভয়ে কেউই মুখ খুলছেন না। প্রশ্ন জাগতে পারে সেই অভিজাত পরিবার কারা? পর্বে তারও পরিচয় মিলবে।
স্থানীয় একটি সূত্র জানায়, নগরীর উপশহরের একটি মোবাইল ফোনের দোকানের মালিক পরিচয় দিয়ে মুন্নি অপু (ছদ্মনাম) নামের কাছ থেকে প্রদারণা করে বিপুল পরিমান টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। বিষয়টি মামলা পর্যন্ত গড়াচ্ছে। টাকা চাইতে গিয়ে অপুকে মুন্নি একটি ভিডিও দেখায়। সেই ভিডিও দেখে অপু বুঝতে পারে সে প্রতারণার শিকার! মুন্নি উল্টো অপুর কাছেও টাকা দাবি করছে। এমনকি পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে দেয়ারও হুমকি দিচ্ছে মুন্নি।
সূত্র আরো জানায়, সম্প্রতি সিলেটের একটি আঞ্চলিক পত্রিকার ফটো সাংবাদিক মুন্নিকে সিলেটের আলোচিত পকেটমার ও ছিনতাইকারি পপি‘র সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। বর্তমানে সেখানেই মুন্নির আস্তানা। সে পপির বাসায় কখনও সিএনজি, কখনও কার যোগে যাতায়াত করে। সেখানেই ঘন্টার পর ঘন্টা বসে তার কার্যকলাপ চালায়।বিষয়টি জানতে মুন্নির মুঠোফোনে কল করলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
এরআগে মুন্নীর বিরুদ্ধে ২০২০ সালের ৩রা অক্টোবর শাহপরান থানায় একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের করা হয়েছিল। ওই মামলায় আসামি ছিলো মুন্নীর ভাই রাব্বীও। মামলার পর ভাই রাব্বীকে পুলিশ গ্রেফতার করলেও মুন্নী দীর্ঘদিন পলাতক ছিল। পরে ২০২০ সালের ১৪ নভেম্বর শনিবার সকালে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল সোনারপাড়া ঊর্মি ৪৭/২ বাসা থেকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বিপুল পরিমান ইয়াবা ট্যাবলেটসহ তাকে গ্রেফতার করে।
সূত্র জানায়, মুন্নীর বিরুদ্ধে মাদক বিক্রিসহ নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে। সিলেটের অপরাধ জগৎ-এর বড় বড় অপরাধীর সাথেও তার বেশ সখ্যতা।
শাহপরান থানা পুলিশ জানায়, গত ২৯শে সেপ্টেম্বর মুন্নীর ভাই রাব্বী তালুকদার একই এলাকায় বসবাস করা এক কিশোরীকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। এরপর তাকে নিয়ে যায় ঢাকার মানিকগঞ্জে। এ ঘটনায় ওই কিশোরীর মা শাহপরান থানায় এজাহার দাখিল করেছিলেন। কিন্তু পুলিশ তখন এজাহারটিকে তদন্ত পর্যায়ে রেখেছিল। এরই মধ্যে ঢাকা থেকে বড় বোন মুন্নীর অস্থায়ী সোনারপাড়াস্থ বাসায় এসে আশ্রয় নিয়েছিলো রাব্বী ও ওই কিশোরী। পরে স্থানীয় মুরুব্বিরা বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করেন। মুন্নীও তাতে সায় দেন। কিন্তু পরবর্তীতে মুরুব্বিদের রায় মানেননি মুন্নী। উল্টো পুলিশ দিয়ে সবাইকে শায়েস্তা করার হুমকি দেন বলে এলাকার লোকজন জানিয়েছেন। পরে এলাকাবাসীর পরামর্শে ১লা অক্টোবর মামলার বাদী ওসি আব্দুল কাইয়ূমের শরণাপন্ন হন। পরে শাহপরান থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে ওই দিন রাতেই মুন্নীর অস্থায়ী বাসা থেকে কিশোরীকে উদ্ধার করে। গ্রেফতার করে আসামি রাব্বী তালুকদারকে। তবে ওই সময় পুলিশ মুন্নীকে খুঁজলেও পায়নি।……
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন