• ২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২২শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

গৌরাঙ্গ খুনি নন, তিনি খুন হয়েছেন

sylhetnewspaper.com
প্রকাশিত জুন ২২, ২০২১
গৌরাঙ্গ খুনি নন, তিনি খুন হয়েছেন

সিলেটের ওসমানীনগরে শিক্ষিকা তপতী রানী দে (৬০) হত্যার ঘটনায় গৌরাঙ্গ বৈদ্যকে বলির পাঠা বানানো হচ্ছে বলে দাবি করেছে তার পরিবার।গৌরাঙ্গের ভাইয়ের দাবি, তপতী রানীর সাথে একইদিনে গৌরাঙ্গও খুন হন।গত শনিবার মধ্যরাতে ওসমানীনগর উপজেলার দয়ামীর ইউনিয়নের সোয়ারগাঁও এলাকার নিজ বাড়ির বদ্ধ ঘর থেকে শিক্ষিকা তপতীর গলাকাটা ও গৌরাঙ্গ বৈদ্যের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তপতী রানীর বাড়িতে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করতেন গৌরাঙ্গ। তার বাড়ি সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলায়।

পুলিশের ধারণা, তপতী রানীকে গৃহকর্মী গৌরাঙ্গ বৈদ্যই খুন করেছেন। গৃহকর্ত্রীকে গলাকেটে হত্যার পর গৌরাঙ্গ নিজে ফাঁস লেগে আত্মহত্যা করেন, এমনটি ধারণা করছে পুলিশ।তপতী রানীর পরিবারের অভিযোগও গৌরাঙ্গের দিকে। মা হত্যার ঘটনায় রোববার রাতে ওসমানীনগর থানায় মামলা দায়ের করেন তপতীর চিকিৎসক ছেলে তন্ময় দে বিপ্লব। মামলায় নিহত গৌরাঙ্গ বৈদ্যকে একমাত্র আসামি করা হয়েছে।

গৌরাঙ্গের বড় ভাই মোহরচাঁদ সরকার বলেন, আমার ভাই নিরীহ মানুষ। ওই রাতে সেও খুন হয়েছে। তাদের দুজনকে হত্যা করেছে খুনিরা। অথচ বিষয়টি ধামাচাপা দিতে পরিকল্পিতভাবে আমার ভাইকে অভিযুক্ত করা হচ্ছে।তপতী ও গৌরাঙ্গ হত্যার ঘটনা ধামাচাপ দিতেই এমনটি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তার। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে ভাইয়ের ‘খুনিদের’ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন তিনি।মোহরচাঁদ বলেন, গৌরাঙ্গ হত্যার ঘটনায় আমরা পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় পৃথক হত্যা মামলা দায়ের করবো।তবে পুলিশ বলছে, গৌরাঙ্গের মৃত্যুর ঘটনায় তার পরিবারের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে অপমৃত্যু মামলার বাদী গৌরাঙ্গ বৈদ্যের আরেক ভাই গোবিন্দ বৈদ্য বলেন, ময়না তদন্তের কথা বলে পুলিশ আমার স্বাক্ষর নিয়েছিল। আমি কোনো অপমৃত্যু মামলা করিনি। পরিকল্পিতভাবে শিক্ষিকাকে খুনের পর আমার ভাইকে হত্যা করে খুনিরা লাশ ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রেখেছে।

তাপতী রাণী দে উপজেলার সোয়ারগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা। তার স্বামী বিজয় দে পেশায় চিকিৎসক। তাদের দুই ছেলেমেয়েও চিকিৎসক।পুলিশ জানিয়েছে- তপতীর মৃতদেহের পাশ থেকে একটি ছুরি ও একটি বটি উদ্ধার করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডে এ দু’টি অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে। তপতীর ঘাড়ের ডান দিকে একটি কোপ ও ঘাড়ের পিছনে ছুরির আঘাত রয়েছে। শনিবার সন্ধ্যার পর কোনো এক সময়ে এ হত্যাকাণ্ডটি ঘটতে পারে বলে ধারণা পুলিশের।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, শনিবার বিকেলে প্রাইভেট প্র্যাকটিসে গিয়েছিলেন তপতীর স্বামী ও ছেলে। ঘরে তপতী ও গৌরাঙ্গ ছিলেন। রাত ১১টার দিকে এক প্রতিবেশি বাথরুমের জানালা দিয়ে গৌরাঙ্গর ঝুলন্ত দেহ দেখতে পান। এসময় তপতীর স্বামী বিজয় দেও বাড়ি ফিরে একই দৃশ্য দেখে পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ গিয়ে দরজা ভেঙে মেঝে থেকে তপতীর গলাকাটা ও গৌরাঙ্গর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে।

ওসমানীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শ্যামল বণিক বলেন, শিক্ষিকার ছেলের দায়েরকৃত অভিযোগের ভিত্তিতে থানায় হত্যা মামলা করা হয়েছে। পুলিশ তদন্ত করছে।নিহত গৃহকর্মী গৌরাঙ্গ বৈদ্যের ভাইয়ের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, সব বিষয়গুলো পুলিশের তদন্তে রয়েছে। ময়না তদন্তের রির্পোটসহ সবদিক পর্যালোচনার পর এ ব্যাপারে বিস্তারিত বলা যাবে।

এ হত্যাকান্ড প্রসঙ্গে রোববার দুপুরে সিলেটের পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন বলেন, আমরা ধারণা করছি শিক্ষিকাকে বটি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে নিজে গলায় গামছা পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছেন গৃহকর্মী গৌরাঙ্গ।

তিনি বলেন, তপতী রানী যে বাড়িতে থাকতেন সেই বাড়ির নিরাপত্তা ব্যাবস্থা খুবই শক্ত। ভেতর থেকে সকল দরজা ও ফটক তালা দেওয়াই ছিলো। ফলে বাইরে থেকে কেউ ভেতরে প্রবেশের কোনো আলামত পাইনি। ক্ষোভের বশে গৌরাঙ্গই তপতী রানীকে হত্যা করতে পারে। আপাতত এই ধারণা থেকেই তদন্ত এগোচ্ছি। তবে তদন্ত শেষে বিস্তারিত বলা যাবে।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন