পোস্ট রিপোর্ট :সিলেটের দক্ষিণ সুরমার লালাবাজারের হযরত রহিম শাহ (র.)-এর বাজারটি সরকারী খাস খতিয়ানে ভূমি। এটাকে সরকারের তত্বাবধানে ও রাজস্ব খাতে না নেওয়ায় এই মাজারকে ঘিরে রকমফের প্রতারনার ফাঁদ পেতে বসেছে স্থানীয় অর্থখেকো ও নারীখোকোরা। মাজারের নজর নেয়াজ লিল্লাহ ও চাঁদা আত্মসাতের পাশাপাশি চলছে বাউল সঙ্গীতের নামে যুবনারীদের নৃত্য এবং অন্ধকার জগতের অনেক আমোদ প্রমোদ। এক সময় র্যাবের হাতে গ্রেপ্তারকৃত আব্দুস শহিদকে খাদিম সাজিয়ে বসানো হয়েছ প্রতারণার এ ফাঁদ ।
বাউল কল্যাণ সমিতি ও শাসকদল আওয়ামী লীগ নেতা পরিচয়ের জনৈক কাউরা’ই এই মাজারের অর্থ লুটপাটসহ নানা অশ্লীল অপকর্মের মূল হোতা। সেই কাউরা’রই নির্দেশে তার লালিত ও কথিত খাদিম আব্দু শহীদ চক্র মাজারের মূল ভক্ত ও খেদমতগারলোকজন এবং মিডিয়া কর্মীদের ওপর হামলা মামলাসহ নানা প্রকার জুলুম ও হয়রানি করে চলেছে। এ বিষয়ে ২০২০ সালের ৭ সেপ্টেম্বর সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ (এসএমপি) কমিশনার বরাবরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়।
অভিযোগে বলা হয়, লালাবাজারের ফকিরের গাওয়ের মৃত আজমান আলীর ছেলে আব্দুস শহীদ একজন প্রতারক। ২০১২ সালের ৩ অক্টোবর স্থানীয়ভাবে রহিম শাহ’র মাজার কমিটি গঠন করা হয়। উক্ত কমিটি গঠন করার সময় আব্দুস শহীদ কমিটির সহ সাধারন সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করেন। পরে মাজারের উন্নয়ন ও বার্ষিক ওয়াজ ও মাহফিল আয়োজন করার জন্য মাজারের ভক্তগন বিভিন্ন তারিখ ও সময়ে বিভিন্ন অংকের টাকা পয়সা দান করেন। উল্লেখিত তারিখ হতে মাজারের রেজিষ্ট্রারী খাতায় প্রায় ২০,০০,০০০/- (বিশ লক্ষ) টাকার হিসাব থাকায় মাজারের কমিটির অন্যান্য সদস্যগন শহিদের কাছে উক্ত টাকার হিসাব চান। এ নিয়ে গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গের শালিস বসলে আব্দুস শহীদ তাদের সাথে বিভিন্ন ধরনের টাল বাহানা করতে থাকেন। এমনকি শহীদ কমিটির দায়িত্বে থাকা অবস্থায় নিজের নামের আগে শাহ উপাধী লাগিয়ে ভিজিটিং কার্ড তৈরি করেন। নিজের বাড়ির সামনে রাস্তার সম্মুখে “খাদেম বাড়ি” বলে রাতের আধারে একটি গেইটও নির্মান করেন। এর ফলে গ্রামবাসীর মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করে ।
এছাড়াও নিজেকে হযরত শাহ আব্দুর রহিম (রহ.) মাজার এর খাদিম পরিচয় দিয়ে উক্ত মাজারের ভক্তবৃন্দদের সামনে নিজেকে পীর দাবি করে তেল পড়া, পানি পড়া, তাগাপড়া, মাটিপড়া, সহ বিভিন্ন তাবিজ কবজ দিয়ে প্রতারনার আশ্রয়ে টাকা কড়ি ও নজর নিয়াজ গ্রহণ করতে থাকেন। মাজারের মহিলা ইবাদত খানায় আগত নারীদের সাথে অশালীন ও অশুভ আচরন করতে থাকেন। এতে মাজারের ভার্বমূর্তি নষ্ট হতে শুরু করে। ২০১৪ সালের শেষের দিকে মাজার পরিচালনা কমিটি ও এলাকাবাসী শহীদকে কমিটি থেকে বহিস্কার করে দেন। পরে আবারো গত ২০১৫ সালের ৩ অক্টোবর নতুন কমিটি গঠন করা হয়। গত ২০১৯ সালের ৩ মার্চ আবারো উল্লেখিত মাজারের একটি নতুন কমিটি গঠন করা হয়।
উক্ত কমিটি গঠন করার পর থেকে শহীদ বিভিন্ন তারিখ ও সময়ে দলবল সঙ্গে নিয়ে মাজারে প্রবেশ করে মাজারের দান বাক্সের নগদ টাকা সহ দানকৃত খাসি, গরু, মোরগ, মাজার থেকে জোর পূর্বক নিয়ে যেতে শুরু করেন।
উক্ত বিষয়ে এলাকাবাসী প্রতিবাদ করলে তথাকথিত খাদিম ও কথিত পীর শহীদ হামলা-মামলা ও খুনখারাপি সহ বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি দেখাতে থাকেন।এমনকি শহীদ তার বাড়িতে মদ, গাঁজা, ইয়াবাসহ বিভিন্ন অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত থাকায় গ্রামবাসী তার অসামাজিক কাজে বাধা প্রদান করেন। এতে ২০২০ সালের ১৪ আগস্ট শহীদ মাজার কমিটির লোকদের ওপর হামলা চালান।
এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে দক্ষিণ সুরমা থানায় মামলা (নং-১৩ (৮)১৪) দায়ের করা হয়। এই মামলায় র্যাব-৯ শহীদকে গ্রেপ্তার করে। পরবর্তীতে শহীদ জামিনে বের হয়ে আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। ২০২০ সালের ১ সেপ্টেম্বর বিকেলে শহীদ দলবল নিয়ে মাজারের ভিতর অনাধিকার প্রবেশ করে মারপিট চালান। এসময় ২টি খাসি যার মূল্য অনুমান ১৬ হাজার টাকা ও রক্ষিত মাজারে নগদ দানকৃত ১০ হাজার টাকা নিয়ে যায়।
বাউল কল্যাণ সমিতির সভাপতি পরিচয়ের শাসকদলীয় নেতা জনৈক কাউরা সব সময় শহিদকে থানা পুলিশ দিয়ে শেল্টার দিয়ে থাকেন। বিনিময়ে নারী সাপ্লাইয়ার ওই কাউরা কথিত খাদেম-পীর শহীদের কাছ থেকে তার ও থানা পুলিশের ভাগ গ্রহণ করে থাকেন।
রহিম শাহ (র) মাজারের নানা অপকর্ম ও আত্মসাত তুলে ধরে সিলেট জেলা প্রেসক্লাব সদস্য সাংবাদিক নিজাম উদ্দিন লিটন পর পর তিনটি সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। এর জের ধরে এ বছরের ৯ মার্চ সাংবাদিক নিজাম উদ্দিনকে শহীদ-কাউরা ও তাদের সন্ত্রাসীরা অন্যায়ভাবে আটক করে। পূর্ব হতে কিনে রাখা এক কেজি গাঁজা সাংবাদিক লিটনের ব্যাগে ঢুকিয়ে গণপিটুনী দিয়ে তাদের পার্টনার দক্ষিণ সুরমা থানা পুলিশের হাতে তুলে দেয় এবং কাউরা’র সন্ত্রারীরা গণপিটুনির লাইভ ফেইসবুকে প্রচার করে তা ভাইরাল করে দেয়। মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে থানা পুলিশ আটককারী কাউকে বাদী না করে নিয়ম বহির্ভুতভাবে থানার এসআই বিষ্ণু নিজে বাদী হয়ে সাংবাদিক নিজামুল হক লিটনের বিরুদ্ধে মাদক আইনে মামলা করেন। মামলার পর তাকে রিমান্ডে নিয়ে তার উপর চালানো হয় অমানুষিক নির্যাতন।
মামলা ও রিমান্ডকালে শহীদ ও বাউল কল্যাণ সমিতির কাউরা থানায় উপস্থিত হয়ে সাংবাদিক লিটনের উপর অমানুষিক নির্যাতন চালায়। পরে তাকে সিলেট কোতোয়ালি মডেল থানার আরেকটি চুরির মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। দীর্ঘ ২ মাস জেল-জুলুম-রিমান্ডে কাটানোর পর জামিনে মুক্তি পান সাংবাদিক লিটন। মিথ্যে ও সাজানো মামলায় নির্যাতন নিপীড়ন ও কাউরা চক্রের অপপ্রচারে মানসিক ভাবে চরম ভেঙ্গে পড়া সাংবাদিক লিটন শুক্রবার (৪মে) ভোররাতে আত্মহত্যা করেন। তার আত্মহত্যার মূলে শহীদ-কাউরার প্ররোচনা দায়ী বলে সচেতন মহল মনে করছেন।
সাংবাদিক ও সচেতন মহল প্ররোচক শহীদ-ও তার সহযোগীদীদের তাবেদার পুলিশের বিচার দাবি করেছেন।
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন