বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস আলী ও তার গাড়িচালক আনসার আলী রাজধানী থেকে নিখোঁজের পর নয় বছর পেরিয়ে গেলেও তাদের ফিরে আসার অপেক্ষায় আছেন পরিবার।
এখন পর্যন্ত আদালত কিংবা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছ থেকে কোনো ধরনের সমাধান পায়নি তাদের পরিবার। পরিবার জানে না কোথায় আছেন ইলিয়াস আলী ও আনসার আলী।
বিএনপির তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক (সিলেট বিভাগ) ও তার গাড়ির চালক ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল রাতে রাজধানীর বনানী থেকে নিখোঁজ হন। বিএনপির অভিযোগ, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাদের তুলে নিয়ে যায়।
এরপর সাবেক এই সংসদ সদস্যকে ‘গুমের’ অভিযোগে সারাদেশে হরতাল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে বিএনপি।
ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহমিনা রুশদির লুনা ২০১২ সালের ১৯ এপ্রিল এ বিষয়ে হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করেন। সেখানে বলা হয় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তার স্বামীকে বেআইনিভাবে আটক করে রেখেছে। এ ছাড়া ইলিয়াস আলীর মুক্তির জন্য তিনি হাইকোর্টে আবেদন করেন।
ইলিয়াস আলীকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আটক করেছে- স্ত্রীর এই অভিযোগের পর, ইলিয়াস আলীকে আদালতে হাজির করার নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, সরকারকে তা জানাতে বলেন আদালত।
স্বরাষ্ট্রসচিব থেকে শুরু করে থানার ওসি পর্যন্ত ১০ জনকে ১০ দিনের মধ্যে এই রুলের জবাবও দিতে বলা হয়।
এরপর নয় বছর পেরিয়ে গেলেও সরকার এ বিষয়ে আর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি এবং হাইকোর্টও এ বিষয়ে কোনো পক্ষের শুনানি গ্রহণ করেননি। ফলে বিষয়টি এখনো অমীমাংসিতই রয়ে গেছে।
অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস সূত্র জানায়, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী পাঁচটি সংস্থার পক্ষ থেকে হাইকোর্টে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে।
সংস্থাগুলোর দাবি, ইলিয়াস আলীকে তারা তুলে নেয়নি বা আটক করেনি এবং ইলিয়াস আলী তাদের জিম্মায়ও নেই।
এই পাঁচটি সংস্থার মধ্যে রয়েছে ইনস্পেক্টর জেনারেল অব পুলিশ (আইজিপি)-এর কার্যালয়, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট (সিআইডি), স্পেশাল ব্রাঞ্চ (এসবি) ও বনানী থানা। এছাড়া সংস্থাগুলো জানিয়েছে তারা ইলিয়াস আলীকে খুঁজে বের করতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
তাহমিনার আইনজীবী এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন গতকাল শুক্রবার বলেন, ‘আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলো দাবি করেছে তারা ইলিয়াস আলীকে আটক করেনি। তাই হাইকোর্টে ইলিয়াস আলীর শুনানির বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছি না। এ কারণেই এখন পর্যন্ত কোনো সমাধান পাননি তার স্ত্রী।’
‘আমরা হাইকোর্টের রুলের বিষয়ে শুনানির উদ্যোগ নিলে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে দাবি করা হবে তারা ইলিয়াস আলীকে আটক করেনি,’ যোগ করেন মাহবুব উদ্দিন খোকন।
তিনি আরও বলেন, ‘ইলিয়াস আলী ও আনসার আলীর পরিবার এখনো তাদের বাড়ি ফেরার অপেক্ষায় আছেন।’
তবে ইলিয়াস আলীর বিষয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে এ বছর কোনো কর্মসূচি নেই বলেও জানান তিনি।
অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি ইলিয়াস আলীর মামলার বিষয়ে কিছু জানি না। যখন মামলাটি করা হয়, তখন আমি অ্যাটর্নি জেনারেল ছিলাম না। সুতরাং এ বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করবো না।’
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন