নিজস্ব প্রতিবেদক :: সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আবুল কালাম আজাদ লায়েককের সাথে আটক হওয়া নারীকে নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা বিরাজ করছে। আটক হওয়া সুবর্ণা খান সুমি নিজেকে লায়েকের স্ত্রী দাবি করছেন।
কিন্তু লায়েকের স্ত্রী-সন্তানরা এই নারীকে চিনেন না। সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আবুল কালাম আজাদ লায়েককে রাজধানী থেকে গ্রেপ্তার করেছে সিলেট কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশ। গত শনিবার ভোররাতে রাজধানী ঢাকার একটি আবাসিক এলাকা থেকে এক নারীসহ লায়েককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এসময় তার সাথে এক নারীও ছিলেন। সুবর্ণা খান সুমি (২৫) নামের ওই নারী পুলিশের কাছে নিজেকে লায়েকের স্ত্রী দাবি করেছেন।
সুমি কাজলশাহ এলাকার ইউসুফ খানের মেয়ে। তবে লায়েকের স্ত্রী নাসিমা আক্তার রুমি এ দাবি নাকচ করে দিয়েছেন। সাবেক কাউন্সিলর লায়েকেরবিরুদ্ধে সিলেটের বিভিন্ন থানায় ১৩টি মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। তিনি সিলেট মহানগর আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রতিষ্ঠাকালীন কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং নগরীর মুন্সিপাড়া এলাকার ১৯১ নম্বর বাসার মৃত আব্দুর রশীদের ছেলে।
পুলিশসূত্র জানায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে শিক্ষার্থীদের উপর হামলা, নাশকতাসহ বিভিন্ন অভিযোগে গেফতার করা হয়েছে। এরপর তাকে সড়ক পথে সিলেট নিয়ে আসা হয়। গত শনিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার পর কোতোয়ালি থানা হেফাজতে নেওয়া হয়। দুপুরে তার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া বিভিন্ন মামলায় রিমান্ডে নিতে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নেয় পুলিশ। নেওয়ার পথে উপস্থিত জনতা তার ওপর আক্রমণ চালায়। এ সময় তাকে মারধর করা হয়।
পরে পুলিশ জনতার কবল থেকে তাকে উদ্ধার করে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যায়। পুলিশ আরও জানায়, রোববার রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হয় আদালতে। দুপুরে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হয়। তবে আবেদনের শুনানি পরে অনুষ্ঠিত হবে নিশ্চিত করেছেন কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জিয়াউল হক।
ওসি জানান, লায়েকের বিরুদ্ধে আদালত ও থানায় ১৩টি মামলা রয়েছে। এগুলো ৫ আগস্টের আগে আন্দোলন চলাকালীন নাশকতা, হত্যাচেষ্টা ও হত্যার অভিযোগে এসব মামলা হয়। এর মধ্যে বন্দরবাজার এলাকার একটি ঘটনায় তাকে ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হয়। তবে শুনানি না হওয়ায় রিমান্ডে নেওয়া যায়নি। প্রসঙ্গত, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর সিলেট সিটি করপোরশনের আওয়ামীপন্থী কাউন্সিলররা আত্মগোপনে চলে যান।
আত্মগোপনে ছিলেন লায়েকও। টানা দুইবার নির্বাচিত হওয়ার পর সরকারি চাল সরিয়ে ফেলা, ভাতার জন্য চাঁদা দাবি করা ও নিজের কার্যালয়ে হামলার নাটক সাজানোসহ নানা অভিযোগে বিতর্কিত ছিলেন লায়েক। উল্লেখ্য, বিভিন্ন কারণে একাধিকবার সমালোচিত হয়েছেন আবুল কালাম আজাদ লায়েক। ২০২০ সালের ১ এপ্রিল করোনাকালে রাতের আধারে নিয়ম বহির্ভূতভাবে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের খাদ্য ফান্ডের ১২৫ বস্তা চাল জোর করে নিজ বাসায় নিয়ে যান কাউন্সিলর লায়েক। বিষয়টি জানাজানি হলে সিসিক কর্তৃপক্ষ ৩ এপ্রিল লায়েকের বাসা থেকে চাল উদ্ধার করে। ২০২১ সালের ২৩ এপ্রিল লায়েকের বাসা ও কার্যালয়ে হামলার ঘটনা ঘটে। ওই বছরের ৮ জুন সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে স্থানীয় সাংবাদিক সোয়েব বাসিত জানান, মুন্সীপাড়ার মসজিদ ও ক্লাব কমিটি নিয়ে বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে কাউন্সিলর লায়েক নিজেই তার বাসা ও অফিস ভাঙচুর করিয়েছেন।
এর প্রেক্ষিতে ১৩ জুন পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করে এর প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন লায়েক। সেই সংবাদ সম্মেলনে নিজেকে সিলেট মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রতিষ্ঠাকালীন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলে দাবি করেন তিনি। ২০২২ সালের ২২ অক্টোবর উত্তরাধীকার সনদ প্রদানের জন্য এক ব্যক্তির কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ উঠে লায়েকের বিরুদ্ধে।
এ সংক্রান্ত অডিও ও ভিডিও ক্লিপ সে সময় ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এছাড়াও জনসাধারণ এবং সিলেট সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তা কর্মচারীদের সাথে চরম দুর্ব্যবহারের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে কাউন্সিলর লায়েকের বিরুদ্ধে। ৩ নং ওয়ার্ডে তিনি ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিলেন বলে অভিযোগ রয়েঝে। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে আত্মগোপনে ছিলেন লায়েক।
অবশেষে শুক্রবার রাতে রাজধানীর বসুন্ধরা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার হন তিনি। তার গ্রেপ্তারের খবরে স্বস্তি ফিরে এসেছে মুন্সীপাড়ায়। এলাকার বাসিন্দারা উচ্ছাস প্রকাশ করেছেন তার গ্রেপ্তারে।
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন