• ১৮ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ২রা কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১৫ই রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

ছাত্রলীগের ক্যাডার মাজিদুল যেভাবে হলেন পুলিশের এসআই!

sylhetnewspaper.com
প্রকাশিত অক্টোবর ১৮, ২০২৪
ছাত্রলীগের ক্যাডার মাজিদুল যেভাবে হলেন পুলিশের এসআই!

মোঃ রায়হান হোসেন, পটুয়াখালী থেকে ফিরে:
ক্ষমতার অপব্যবহার, অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে অর্ধকোটি টাকার মালিক বনে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে বাংলাদেশ পুলিশের এক সাব-ইন্সপেক্টর (এসআই)র বিরুদ্ধে।

মাজিদুল হক খাঁন পটুয়াখালী জেলার দুমকি চরবয়ড়া এলাকার আব্দুস ছত্তার খাঁনের পুত্র। তিনি ২০১৯ সালে বাংলাদেশ পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর (এসআই) ব্যাচ-৩৭। ছাত্রলীগের সাবেক এই নেতার পুলিশের চাকুরীতে যোগদান নিয়ে এলাকায়ও রয়েছে নানা গুঞ্জন।

সরজমিনে নাম না প্রকাশের শর্তে স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা জানান- বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট মোঃ আফজাল হোসেনের কলকাঠিতেই পুলিশে সাব-ইন্সপেক্টর (এসআই) হিসেবে চাকুরী পেয়েছেন ছাত্রলীগের সাবেক এই নেতা। বাংলাদেশ পুলিশে (এসআই) হিসেবে চাকুরী হওয়ার আগে মাজিদুল পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি (২০১৭/২০১৮) এবং শের-ই বাংলা হল ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করছেন।

পারিবারিকভাবে অসচ্ছল (এসআই) মাজিদুল হক খাঁন পুলিশের প্রশিক্ষণ শেষে বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ থানা, গৌরনদী থানা, উজিরপুর থানা এবং সর্বশেষ ঢাকা বংশাল থানায় বদলি হলেও দিনে দিনে আরোও বেসামাল হচ্ছেন তিনি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ঢাকার বংশাল থানায় কর্মরত ছিলেন তিনি। মাজিদুল চাকুরীতে প্রবেশের আগে ছাত্রলীগের চিহ্নিত ক্যাডার ছিলেন। তার বিরুদ্ধে দলীয় ক্ষমতার অপব্যবহার, ইভটিজিং, দেশীয় অস্ত্রের ব্যবহার, মারামারি, উশৃংখলতা করায় থানা ও কোর্টে একাধিক অভিযোগ রয়েছে বলে সুত্র জানায়।

এদিকে তিনি সাংগঠনিক পরিচয় বহন করে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে (এসআই) পদে যোগ দেন বলে বিশস্ত সুত্র নিশ্চিত করে। কর্মস্থলে দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে ঘুষ বাণিজ্য ও ক্ষমতার অপব্যবহারসহ একাধিক অনিয়মে জড়িত থাকায় দফায় দফায় বদলীর সম্মুখীন হতে হয়েছে তাকে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে রাজধানী ঢাকার প্রাণ কেন্দ্র বংশাল থানা কর্মস্থল হওয়ায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দলকানাকর্মী হিসেবে আন্দোলনরত ছাত্রদের উপর অতি উৎসাহী হয়ে অমানবিক, নৃশংসতা তিনি চালিয়েছেন বলে সুত্র জানায়।

বিভিন্ন হল ও বাসা থেকে ছাত্রদের ধরে এনে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তবে যারা টাকা দিতে ব্যর্থ হতো তাদের উপরে নির্মম-নির্যাতন চালাতেন তিনি ও তার গ্রুপ। সরজমিন অনুসন্ধানে জানা গেছে- পুলিশের (এসআই) মাজিদুল পারিবারিকভাবে অস্বচ্ছল হলেও অবৈধ আয়ের ফলে মাত্র ছয় বছর চাকুরী করে গ্রামের বাড়িতে প্রায় ১৫ লাখ টাকা খরচ করে দালান-কোঠা নির্মাণ করেন এবং নিজ জেলা পটুয়াখালী শহরে ৩৭ লাখ টাকায় ১৪ শতাংশ/৭ কাঠার একটি প্লট ক্রয় করেছেন বলে জানিয়েছেন তার এলাকার একাধিক বাসিন্দা। অল্প সময়ের ব্যবধানে নিজের গ্রামের বাড়ি ও শশুড় বাড়ির এলাকায় প্রচুর সম্পত্তি ক্রয় করেছেন বলেও একাধিক এলাকাবাসী নিশ্চিত করেছেন। (এসআই) মাজিদুলের এলাকার কিংবা তার পরিচিত কোন ভুক্তভোগী মামলা বা অভিযোগ নিয়ে গেলে অভিযোগকারী বিপক্ষের কেউ হলে তিনি জোর তদবির চালানো ও নিজের পদবি গোপন রেখে সিনিয়র অফিসার পরিচয়ে বিভিন্ন মহলে ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগও পাওয়া গেছে।

এ প্রসঙ্গে ঢাকার বংশাল থানায় কর্মরত (এসআই) মাজিদুল হক খাঁনের সঙ্গে সরাসরি দেখা করে আলাপকালে এক সময়ের ছাত্রলীগের কর্মী থাকার সত্যতা নিশ্চিত করে তিনি বলেন- পুলিশে চাকুরী নিজ যোগ্যতায় পেয়েছেন, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেনের সুপারিশে নয়। তবে ছাত্রলীগের আগে ছাত্রদলের রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন বলে দাবিও করেন তিনি। মূলত রাজনীতি করা তার উদ্দেশ্যে ছিলো না, রাজনীতির পরিচয় বহন করে নিজের জীবনের চাকা ঘুরানোই ছিল তার স্বপ্ন। এক কথায় তাকে হাইব্রিড নেতা ধরা যায় বলেও দাবি করেন তিনি। আর পটুয়াখালীতে তিনি কোন প্লট ক্রয় করেননি। ছাত্র আন্দোলনে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন।

উল্লেখ্য, এসআই মাজিদুলের সঙ্গে দেখা করে তার বক্তব্য সংগ্রহ শেষে তিনি প্রতিবেদকের হাতে জোরপূর্বক ২ হাজার টাকা ধরিয়ে দেন। এটা কিসের টাকা? আর কেনই বা তাকে দিলেন? প্রতিবেদকের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি মুচকি হেসে বলেন এটা আপনাকে খুশি হয়ে চা-নাস্তার জন্য দিয়েছি। এক পর্যায়ে প্রতিবেদক টাকাগুলো ফেরত দিতে চাইলে তিনি টাকাগুলো ফেরত না নিয়ে জোরপূর্বক পকেটে ঢুকিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন