• ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৫ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

সিলেটে ভয়ঙ্কর ‘ডলির’ বিয়ে বাণিজ্য: ধ্বংসের মুখোমুখি যুবসমাজ!

sylhetnewspaper.com
প্রকাশিত সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৪
সিলেটে ভয়ঙ্কর ‘ডলির’ বিয়ে বাণিজ্য: ধ্বংসের মুখোমুখি যুবসমাজ!

সিলেটে অপরাধ জগতে দিন দিন নারীদের আনাগোনা বেড়েই চলছে। নারীকেন্দ্রিক অপরাধ নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছে। রয়েছে তাদের ‘শক্তিশালী সিন্ডিকেট’। মাদক সেবন, বিক্রি, চুরি-ছিনতাই, দেহ ব্যবসা প্রতারণা ইত্যাদি অপরাধে সক্রিয় এখন নারীরা। তারা নতুন করে জাড়াচ্ছে ইয়াবা পাচার ও দেহ ব্যবসায়। সে দৃশ্যপটের অনেকখানি পরিবর্তন এসেছে।

সম্প্রতি সিলেটে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে অপরাধে জড়িত এরকম বেশ কয়েকজন নারীর তথ্য এসেছে। নগরীতে এমন অনেক নারী রয়েছে যারা বিভিন্ন অপরাধ চক্রের নেতৃত্ব দিচ্ছে। অভিজাত আবাসিক এলাকায় বিভিন্ন বাসা-বাড়ি ভাড়া নিয়ে এরকমই নারীরা নিরাপদে অপরাধকর্ম পরিচালিত করছে। কখনো কখনো কেউ সামাজিক কর্মকান্ডের আড়ালেও চালাচ্ছেন এসব ব্যবসা। ঠিক তেমনি সিলেটে একাধিক বিয়ে বাণিজ্যের ঘটনায় ভয়ঙ্কর ‘ডলি’ নামের এক নারী আলোচনায় এসেছেন।

নাম রোমেনা বেগম ডলি। সে সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর উপজেলার শ্রীরামসী এলাকার মৃত আলতাব আলী ওরফে কাঁচা মিয়ার মেয়ে। ২০০৮ সালের (৬ই জুন) বিশ্বনাথ উপজেলার উলুপাড়া দেওকলস এলাকার মোঃ তেরাব আলীর পুত্র লন্ডন প্রবাসী মুজিবুর রহমানের সঙ্গে বিয়ে হয় তার। ২০২১ সালের শেষের দিকে ডলি স্বামীর সংসার ছেড়ে দেন এমনকি দেনমোহর বাবদ হাতিয়ে নেন কয়েক লাখ টাকা।

এখান থেকেই শুরু হয় ডলির বিয়ে বাণিজ্যের যুগল জীবন। এখন তার পেশায় পরিনত হয়েছে বিয়ে আর তরুণদের সাথে প্রতারণা করা। তার নাম যেমন চেহরাও তেমন। আর এই চেহরা দিয়েই যুবসমাজকে ধ্বংসের দিকে নিচ্ছে এই ডলি।

ডলি সুনামগঞ্জসহ সিলেটের বিভিন্ন এলাকার একাধিক যুবককে ফাঁদে ফেলে তাকে বিয়ে করতে বাধ্য করেন আবার মাস খানিকটা যেতেই না যেতে দেনমোহরের টাকার জন্য তাদের বিরুদ্ধে মামলা মোকদ্দমাও দায়ের করেন। এভাবেই ডলি হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা। ডলি নিজেকে কখনো শিক্ষিকা আবার অভিবাহিতা বলে দাবি করেন। আর তরুণদেরকে তার প্রতি আকৃষ্ট করেন। সেই সাথে তরুণদের মোবাইল নম্বার নিয়ে যোগাযোগ করেন। সেই আলাপের মাধ্যমে শুরু হয় ডলির প্রতারণার ফাঁদ। কিছুদিন আলাপের পর দেহিক সম্পর্ক। এরপর বিয়ের জন্য চাপ প্রয়োগ। বিয়ের কিছুদিন অতিবাহিত হলে শুরু হয় অন্য পুরুষ খোঁজার কাজ। তবে ডলি বেশিরভাগ টার্গেট করেন প্রবাসী ও টাকা-পয়সাওয়ালা বড়লোকদের।

অনুসন্ধানে উঠে আসে ডলির একাধিক বিয়ে বাণিজ্যের তথ্য। ২০২১ সালের শেষের দিকে প্রথম স্বামী প্রবাসী মুজিবুর রহমানের সঙ্গে তালাকের পর ২০২৩ সালে গোলাপগঞ্জের অলিউর রহমানের সঙ্গে পরিচয় হয় ডলির। আর মাসখানেকের ভিতরেই ডলির জালে আটকা পড়ে বড় অংকের দেনমোহর দিয়ে তাকে বিয়ে করতে বাধ্য হন অলিউর রহমান। তবে বিয়ের কয়েক মাস যেতেই না যেতে এই স্বামীর সংসারও ছেড়ে দেন ডলি এমনকি দেনমোহর বাবদ হাতিয়ে নেন কয়েক লাখ টাকা। এরই ধারাবাহিকতায় ডলি ফাঁদে ফেলেন লালাবাজারের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক যুবককে। ওই যুবক জানান- প্রথমে তিনি ডলির ফাঁদ বুঝতে না পারলেও নানান দিকে বিবেচনা করে বড় অংকের দেনমোহর দিয়ে ডলিকে বিয়ে করতে বাধ্য হতে হয়েছিলো তাকে কিন্তু ১ মাস যেতেই না যেতে কয়েছ নামের শিবগঞ্জের এক যুবকের সহায়তায় ডলি তার কাছ থেকেও হাতিয়ে নেয় দেনমোহর বাবদ ৪ লাখ টাকা। এখানেই শেষ নয় ওসমানীনগর এলাকার রানু নামের এক যুবককে বিয়ে করে লন্ডনে নিয়ে যাওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে তার কাছে চর্তুথ বিয়ে বসেন ডলি। কিন্তু লন্ডনে নিয়ে যাওয়ার প্রসেস করার নাম করে তার কাছ থেকে নগদ হাতিয়ে নেন কয়েক লাখ টাকা এমনকি নিজ থেকে একপর্যায়ে তাকে তালাক প্রদান করেন ডলি বলে জানা গেছে।

এদিকে ডলির এসব অপকর্মের সহযোগী হিসেবে দফায় দফায় উঠে আসে নগরীর শিবগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা কয়েছ আহমেদ এর নাম। তিনি কখনো নিজেকে বিএনপির বড় নেতা আবার কখনো রেমিট্যান্স যোদ্ধা হিসেবেও দাবি করেন। জানা গেছে- কয়েছ আহমেদের স্ত্রী-সন্তান দেশের বাহিরে থাকেন। সেই সুবাধে কয়েছ আহমেদ ডলিকে বিয়ে না করেও স্ত্রী পরিচয়ে নগরীর জেরজেরি পাড়া, রোড নং- ১৩, বাসা নং- ০৩ এ বসাবাস করেন। মূলত কয়েছ আহমেদ এর সহযোগিতায় ডলি দিন দিন আরো বেপরোয়া হয়ে উঠছে। আর কয়েছ-ডলির বিয়ে নামের বাণিজ্যের ফাঁদে পড়ে সিলেটের যুবসমাজ ধ্বংসের মুখোমুখি হচ্ছে।

এ ব্যাপারে রোমেনা বেগম ডলি ও কয়েছ আহমেদ এর ব্যবহৃত সেলফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করলে তারা উভয়ে ফোনকল রিসিভ না করায় তাদের বক্তব্য সংগ্রহ করা যায়নি।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন