বিশেষ প্রতিবেদক: সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলং,বল্লাঘাট,জিরো পয়েন্ট সীমান্ত এলাকা (ইসিএ) এলাকায় চলেনা দেশের কোন প্রচলিত আইন-কানুন। সেখানেই সাবেক চেয়ারম্যান লেবু মিয়ারই ভাতিজি জামাই (জামাই) সুমনের তৈরী আইনের উপর চলে সব কিছু।
জামাই সুমনের নেতৃত্বে সেখানে গড়ে উঠেছে শক্তি শালী একটি সিন্ডিকেট।
জামাই সুমন যেটা বলেই, সেখানে সেটাই এখন আইন। এই সুমন সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে বিগত বছরে স্থানীয় পত্রিকায় একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশ হলে সিলেট রেঞ্জ ডিআইজির নির্দেশে একটি তদন্ত টিম ঘটন করা হয়।
তদন্তকালে জামাই সুমন নিজেকে পাথর ব্যবসায়ী হিসাবে পরিচয় দিয়ে বক্তব্য দিলেও তদন্তে মিলে জামাই সুমনের চাঁদাবাজির বিষয়টি। সেই সময় জামাই সুমন সিন্ডিকেটের হয়ে কাজ করার অপরাধে গোয়াইনঘাট থানা থেকে ২ জন এসআইকে অন্যত্র বদলী করা হয়। কিন্তু আজও সেই তদন্ত রির্পোট আলোর মুখ দেখেনি। তবে সেদিন জামাই সুমন এ প্রতিবেদকের সামনে বক্তব্যকালে তার সহযোগী হিসাবে মুজিব, আলা উদ্দিন ও ফয়জুলকে তার ব্যবসায়ী পার্টনার হিসাবে দাবী করে।
এদিকে বাংলাদেশ সরকারের ইকোলজিক্যাল ক্রিটিক্যাল এরিয়াতে সরকারি নির্দেশনা রয়েছে কোন ভাবে সেখানে বালু-পাথর উত্তোলন করা যাবে না। বিষয়টি নিশ্চত করেন জেলা প্রশাসনের রেভিনিউ কর্মকর্তা। স্থানীয় এসিল্যান্ডও বলেন একই কথা। ইসিএ এলাকা বালু পাথর উত্তোলন সম্পন্ন অবৈধ ও বেআইনি। তবে কেউ আইন প্রয়োগ করতে রাজি নন সেখানে। একমাত্র পরিবেশ অধিদপ্তর কর্মকর্তারা মাঝে-মধ্যে সেখানে অভিযান চালাতে দেখা যায়।
তবে সরকারি সকল নিষেধ অমান্য করে স্থানীয় প্রশাসনকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে রয়্যালিটির নামে সেখানে বালু-পাথর উত্তোলনসহ প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি করছে জামাই সুমন সিন্ডিকেট। শুধু পিয়াইন নদীর বালু-পাথর থেকে জামাই সুমন সিন্ডিকেটের প্রতিদিনের আয় কয়েক লক্ষ টাকা। স্থানীয় প্রশাসন থেকে শুরু করে জেলা প্রশাসন পর্যন্ত সকলের একই বক্তব্য জাফলং এলাকায় কোন প্রকার লিজ নেই। তাহলে কার কথায় কারা রয়েল্যাটি আদায় করছে?
সরেজমিন গেলে দেখা যায়, জাফলং ডাউকি থেকে নেমে আসা পিয়াইন নদীর পরিবেশগত নিষেধাজ্ঞা সীমারেখার অতিক্রম করে বারকি নৌকা দিয়ে পাথর উত্তোলন করছেন শ্রমিকরা। সেই সব শ্রমিকদের কাছ থেকে পিয়াইন নদীতেই শুরু যায় চাঁদাবাজি। সেখান থেকে ক্রয়কৃত বালু-পাথর তুলে আনতে হলে সরকার কর্তৃক ভুয়া লিজের নামে গাড়ি মাপঝুক করে প্রতি ফুট বালু-পাথরের বিপরীতে ১৫ টাকা হারে চাঁদা দিতে হচ্ছে জামাই সুমন চক্রকে। প্রকাশ্যে দিবালোকে সরকার কর্তৃক লিজের নাম করে জাফলং সেতুর নীচ, ঝুমপার ও বল্লাঘাট ইসিএ এলাকায় চাঁদাবাজি চলছে।
দূরে দাড়িয়ে তাদের শেল্টার দিচ্ছে স্থানীয় থানার পুলিশ। অনুসন্ধানে জানা যায়, চাঁদাবাজ চক্রের মুলহোতা মামার দোকান মেলার মাঠের বর্তমান বাসিন্দা ও বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় ধর্ম বিষয়ক উপকমিটির সাবেক সদস্য ইমরান হোসেন সুমন ওরফে (জামাই সুমন)।
এই জামাই সুমন কয়েক বছর আগেও একটি বিস্কুট কোম্পানীর সেলম্যান হিসাবে চাকরি করতো। অবৈধ পন্থায় কামাই করে আজ সে কয়েক শত কোটি টাকার মালিক। তার সহযোগী নয়াবস্তি গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা ইনসান আলীর ছেলে আলীম উদ্দিন, কান্দুবস্তির মস্তফার ছেলে ফিরোজ ও বিশ্বনাথের বাসিন্ধা বিশ্বনাথী ফয়জুল ইসলাম।
গোয়াইনঘাটের মাসুক আহমেদ ও মোহাম্মদপুর এলাকার মৃত আসরব আলীর পুত্র উপজেলা যুবলীগ নেতা ও ইমরান হোসেন সুমন ওরফে জামাই সুমনের মেয়ের জামাই পরিচয়দাতা সোহেল। এই সিন্ডিকেট প্রতিটি গাড়ি থেকে রয়েল্যাটির নামে প্রকাশ্যে চাঁদা উত্তোলন করে থাকে। এই চক্রকে শেল্টার দিয়ে থাকেন গোয়াইনঘাট থানার এসআই এমরুল কবির। তিনি জাফলং ইউনিয়নের বিট পুলিশ কর্মকর্তা।
চাঁদাবাজ চক্রের সদস্য মাসুক ও সোহেল রয়্যালিটির ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেন। দিন শেষে রয়্যালিটির নামে টাকা উত্তোলন করে ইমরান হোসেন ওরফে জামাই সুমনের অফিসে জমা দেন। পরে জামাই সুমনের অফিসে এসআই এমরুল কবিরসহ বসে চাঁদার টাকার হিসাবের বৈঠক। জামাই সুমন বখরা হিসেবে প্রতিদিন ও সপ্তাহে স্থানীয় প্রশাসনের সকল সেক্টর ও স্থানীয় সাংবাদিকসহ স্থানীয় কিছু নেতাদের ভাগবাটুয়ারা করে দেন।
আজ থেকে বছর দুই আগেও এই চাঁদাবাজ চক্রের সদস্য আলীম উদ্দিন ও তার পিতা ইনসান আলী ইসিএ এলাকায় বালু-পাথর উত্তোলন চাঁদাবাজি কর্মকান্ড বন্ধের জন্য প্রশাসনের বিভিন্ন সেক্টরে একাধিক লিখিত অভিযোগ দিয়ে ছিলেন। চাদাঁবাজি নিয়ে দ্বন্ধে জড়ান জামাই সুমনচক্র ও আলীম উদ্দিন চক্র। কিন্তু এলাকার রক্ষক আলীম উদ্দিন নিজেই এখন ভক্ষক অথ্যাৎ চাঁদাবাজ চক্রের সদস্য।
সূত্র জানায়, সাবেক উপজেলা প্রশাসন (ইউএনও) রাধানগরের ইকবাল হোসেনকে দিয়ে চাঁদা উত্তোলন করে নিজে একাই সব হজম করে নিতেন। এ নিয়ে সাবেক ওসি ও সাবেক ইউএনও এর মাঝে ঝামেলা সৃষ্টি হলে কিছুদিন বন্ধ থাকে চাঁদাবাজি। পরে সাবেক ওসি ও সাবেক ইউএনও উভয় পক্ষের আলোচনাক্রমে ভাগবাটোয়ারার সেই ৭০% টাকা উত্তোলনের দায়িত্ব অর্পণ করা হয় কনস্টেবল পদে কর্মরত সুনীল তাঁতি ও কাজী মুমিন হোসেন ইমনের উপর। কিন্তু গোয়েন্দা পুলিশের চোখ ফাঁকি দিতে পারেননি এ দুই কনস্টেবল। যদিও পরে ভিন্ন কারণ দেখিয়ে এই দুই কনস্টেবলকে অবশেষে চট্রগ্রামে বদলি করা হয়। কিন্তু অদৃশ্য কারণে গোয়াইনঘাট থানায় এখনও বহাল তবিয়তে রয়েছেন এই দুই কনস্টেবল।
অবৈধ ভাবে বালু ও পাথর উত্তোলনের ফলে এতে জাফলং সেতুর পাইলিং বেরিয়ে পড়েছে। ফলে বড় ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে জাফলং সেতু। সেতুর নিচ থেকে অপরিকল্পিতভাবে বালু ও পাথর উত্তোলনের ফলে সেতুর ২টি পিলার ছাড়া সবকটি পিলারের পাইলিং ৩০ হতে ৩৫ ফিট পর্যন্ত ভুগর্ভস্থ হতে বেরিয়ে পড়েছে। বোমা মেশিনসহ বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি দিয়ে অব্যাহত ভাবে বালু ও পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে। সেতুর উপর হালকা যান চলাচলে এখন মাত্রাতিরিক্ত ঝাঁকুনির সৃষ্টি হচ্ছে।
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন