• ২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২২শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

জাফলংয়ে শ্রমিকের মৃত্যু: ১০ লুটেরাদের নোটিশ দিয়েও ব্যবস্থা নেয়নি পরিবেশ!

sylhetnewspaper.com
প্রকাশিত ডিসেম্বর ১১, ২০২৩
জাফলংয়ে শ্রমিকের মৃত্যু: ১০ লুটেরাদের নোটিশ দিয়েও ব্যবস্থা নেয়নি পরিবেশ!

নিজস্ব সংবাদদাতা: সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলংয়ের ইসিএ ঘোষিত এলাকা খাবলে খাচ্ছে বালু ও পাথর লুটেরা। এতে বিনষ্ট হচ্ছে প্রাকৃতিক পরিবেশ ও প্রতিবেশ। এমন কি প্রায় ঘটছে শ্রমিক মৃত্যুর ঘটনাও।

গতকাল রোববার (১০ ডিসেম্বর) ভোরে ইজারাবিহীন ইসিএ এলাকা থেকে অবৈধ বালু-পাথর উত্তোলন করতে গিয়ে মাটিচাপায় এক বৃদ্ধ পাথর শ্রমিকের করুণ মৃত্যু হয়েছে।

মৃত পাথর শ্রমিক গোয়াইনঘাট উপজেলার লাখেরপাড় গ্রামের মৃত ফিরোজ মিয়ার পুত্র মানিক মিয়া (৫৭)।

প্রত্যক্ষদর্শী ও সহযোগী শ্রমিকদের তথ্যমতে- মাটিচাপায় মৃত মানিক মিয়া মারা গেলেও ঘটনার মোড় ঘুরিয়ে বালু-পাথর লুটেরাদের বাঁচাতে গোয়াইনঘাট থানার ওসি কেএম নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানিয়েছেন মানিক মিয়া ঠান্ডায় স্ট্রোক জনিত কারণে মারা গেছেন।

অভিযোগ রয়েছে, একটি স্বার্থান্বেষী বালু-পাথর লুটেরা মহল দীর্ঘদিন ধরে জাফলংয়ের ইসিএ এলাকায় অবৈধভাবে বালু-পাথর উত্তোলন করে আসলেও রহস্যজনক কারণে লুটেরাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না সিলেট বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তরসহ গোয়াইনঘাট উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন। গোয়াইনঘাট থানা পুলিশের নাকের ডগায় পরিবেশ বিধ্বংসী পাথর-বালু লুটতরাজ অব্যাহত থাকলেও অজ্ঞাতকারণে এসব দেখেও না দেখার ভান করে চলেছে থানা পুলিশ।

চলতি বছর অথাৎ ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে জাফলং ইসিএ’র ১০ জনকে বালু ও পাথর লুটেরাকে অভিহিত করে পরিবেশ ধ্বংসের নোটিশ দেওয়া হলেও অজ্ঞাতকারণে পরবর্তীতে কার্যকরী কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি তাদের বিরুদ্ধে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এ বছর অথাৎ ২০২৩ সালের জুন মাসে ইজারাবিহীন ও বেআইনীভাবে ইসিএ থেকে বালু-পাথর উত্তোলন এবং পরিবেশ ও প্রতিবেশ ধ্বংসের অভিযোগে এই ১০ জন লুটেরাদের বিরুদ্ধে আইনী পদক্ষেপ নেওয়ার নোটিশ করে সিলেট বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তর। নোটিশে বলা হয়েছিলো বিগত ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩-এর মধ্যে নোটিশের যথাযথ জবাব না দিলে তাদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করা হবে। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে প্রায় ৩ মাস অতিক্রম হতে চললেও এই ১০ লুটেরাদের বিরুদ্ধে কার্যকরী কোন ব্যবস্থা নিতে পারে নি পরিবেশ অধিদপ্তর। সচতেন মহলের কেউ কেউ বলছেন অবৈধ টাকার গন্ধে যেনও অন্ধ হয়ে গেছেন সিলেট বিভাগীয়ও পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক। এতে করে সাধারণ জনতার নিকট গোটা পরিবেশ অধিদপ্তর সেক্টরের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে বলেও মনে করছেন তারা। হাতেগোনা অসাধু দুই একজন কর্মকর্তার জন্য এরকম গোটা পরিবেশ অধিদপ্তর সেক্টর ভাবমূর্তি নষ্ট না করে এই ১০ লুটেরাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের সকল উর্ধ্বতন কর্মকর্তার নিকট আশু হস্তক্ষেপ কামনাও করেন তারা।

সিলেট বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তর হইতে নোটিশ প্রাপ্তরা হচ্ছেন- গোয়াইনঘাট উপজেলার মামার দোকান মেলার মাঠের বর্তমান বাসিন্দা, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় ধর্ম বিষয়ক উপকমিটির সাবেক সদস্য ও কথিত সাংবাদিক ইমরান হোসেন সুমন ওরফে জামাই সুমন, উপজেলার জাফলং আসামপাড়ার সামসুল আলম, জাফলং নয়াবস্তী গ্রামের আলিম উদ্দিন, জাফলং কান্দুবস্তী গ্রামের ফিরোজ আহমদ, জাফলং নয়াবস্তী গ্রামের ছাবেদ মিয়া, নয়াবস্তী গ্রামের আতাউর রহমান আতাই, সুনামগঞ্জ জেলার ছাতকের ফয়জুল ইসলাম, জাফলং নয়াবস্তী গ্রামের সাবু মিয়া ও নয়াবস্তী গ্রামের রহমত মিয়া।

কিন্তু অজ্ঞাত কারণে পরবর্তীতে এই ১০ লুটেরাদের বিরুদ্ধে সিলেট বিভাগীয়ও পরিবেশ অধিদপ্তর কার্যকরী কোন আইনী ব্যবস্থা না নেওয়ায় আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠেছেন তারা। এই ১০ লুটেরাদের অধীনে জাফলংয়ে বেআইনী বালু-পাথর উত্তোলন করতে গিয়ে গতকাল রোববার (১০ডিসেম্বর) ভোরে মাটি চাপায় মানিক মিয়া (৫৭) নামের ওই পাথর শ্রমিকের মৃত্যু ঘটে।

সিলেটের গোয়াইনঘাট থানার ইন্সপেক্টর (ওসি তদন্ত) মেহেদী হাসান পাথর শ্রমিকের মৃত্যুর সত্যতা নিশ্চিত করে জানান- ইজারাবিহীন এলাকায় অবৈধ বালু উত্তোলন করতে গিয়ে মানিক মিয়ার মৃত্যু ঘটে। ময়না তদন্তের জন্য তার লাশ সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলজ মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে।

এব্যাপারে সিলেট বিভাগীয়ও পরিবেশ অধিদপ্তর অফিসের পরিচালক মোহাম্মদ এমরান হোসেনের ব্যবহৃত সরকারি সেলফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করলে তিনি ফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন