বিদ্যুৎ-সংকট মোকাবিলায় দেশজুড়ে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিংয়ের সিদ্ধান্তের অংশ হিসেবে সিলেটেও গত মঙ্গলবার থেকে লোডশেডিং শুরু হয়েছে।
তবে বিদ্যুৎ বিভাগ সিলেটে লোডশেডিংয়ের যে সময়সূচি করেছে,তা মানা হয়নি। গতকাল প্রথম দিনেই এমন অবস্থা হওয়ায় গ্রাহকেরা পড়েছেন ভোগান্তিতে।
গ্রাহকদের অভিযোগ, বিদ্যুৎ বিভাগের পূর্বঘোষিত সময়সূচি অনুযায়ী প্রথম দিন লোডশেডিং করা হয়নি। কোথাও কোথাও দুই ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিং ছিল। এ ছাড়া কোথাও কয়েক দফায় লোডশেডিং হয়েছে। এলাকাভেদে লোডশেডিংয়ের বিষয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচারের পর গ্রাহকেরা আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। তবে রুটিন অনুযায়ী লোডশেডিং না হওয়ায় অনেকে বিপাকে পড়েছেন।
নগরের বালুচরের সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের এলাকায় রুটিন অনুযায়ী গতকাল মঙ্গলবার বেলা দেড়টা থেকে তিনটা পর্যন্ত দেড় ঘণ্টা লোডশেডিং হওয়ার কথা ছিল। অথচ সেখানে আধা ঘণ্টা বেশি লোডশেডিং হয়েছে। বেলা সাড়ে তিনটা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী এলাকায় লোডশেডিং ছিল। ওই এলাকা বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিউবো) বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-২-এর অধীন।
বিউবো বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-২-এর নির্বাহী প্রকৌশলী শামছ-ই-আরেফিন বলেন, এলাকাভিত্তিক সূচি মেনেই লোডশেডিংয়ের চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে শুরুতে কিছু কিছু ক্ষেত্রে সূচিতে ব্যাঘাত ঘটছে। দ্রুতই এটা ঠিক হয়ে যাবে।
তবে বিউবো বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-২-এর একটি সূত্র জানিয়েছে, তাদের অধীন থাকা এলাকায় গতকাল মঙ্গলবার বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ৩৩ মেগাওয়াট। এর বিপরীতে সরবরাহ ছিল ২০ মেগাওয়াট। ফলে সূচি অনুযায়ী, ১০ শতাংশ লোডশেডিংয়ের কথা থাকলেও করতে হয়েছে ৩৫ শতাংশ।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সিলেট বিভাগের চার জেলায় পিডিবির অধীন গ্রাহক আছেন ৪ লাখ ৮৫ হাজার। অন্যদিকে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির গ্রাহক আছেন প্রায় ১৯ লাখ। পিডিবি ও পল্লী বিদ্যুৎ মিলিয়ে বিভাগে বিদ্যুতের চাহিদা আছে প্রায় সাড়ে ৫০০ মেগাওয়াট। এর মধ্যে বিভাগের চার জেলায় গতকাল পিডিবির গ্রাহকদের বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ২১০ মেগাওয়াট।
এ অবস্থায় গতকাল ১২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিড থেকে সরবরাহ করা হয়েছে। ফলে ৮৫ মেগাওয়াট লোডশেডিং বিউবো কর্তৃপক্ষকে করতে হয়েছে। একইভাবে পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহকেরাও চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ পাননি।
একাধিক গ্রাহক বলেছেন,সূচি অনুযায়ী লোডশেডিং না হওয়ায় অনেক বাসাবাড়ির মালিকেরা রুটিনমাফিক পাম্প দিয়ে পানি তোলার কাজ করতে পারেননি। সূচিতে দুই দফা লোডশেডিংয়ের কথা থাকলেও কোথাও তিন দফা লোডশেডিং হয়েছে। লোডশেডিংয়ের কারণে বিভিন্ন দোকানপাট ও বিপণিবিতানের মালিকপক্ষ নিজস্ব জেনারেটর দিয়ে বিদ্যুতের চাহিদা মিটিয়েছেন।
সিলেট নগরের আখালিয়া নোয়াপাড়া এলাকার বাসিন্দা রোকেয়া বেগম (৫০) বলেন,তাঁদের এলাকায় একাধিকবার লোডশেডিংয়ের ঘটনা ঘটেছে। ফলে পাম্প দিয়ে পানি তোলা যায়নি। প্রায় এলাকাতেই সূচি মেনে লোডশেডিং না করায় গ্রাহকেরা ভোগান্তিতে ছিলেন।
সিলেট বিভাগীয় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবদুল কাদির প্রথম আলোর কাছে স্বীকার করেছেন, চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ না পাওয়ার কারণে সূচি অনুযায়ী লোডশেডিং করা সম্ভব হচ্ছে না।
ফলে সময়সূচিতে ওলট–পালট হচ্ছে। তবে দ্রুতই তা সমন্বয় করে সূচি অনুযায়ী সামনের দিনগুলোতে লোডশেডিং করা হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।খবর দৈনিক প্রথম আলো,
এদিকে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে গতকাল রাত আটটার পর থেকে ব্যবসায়ীরা দোকানপাট ও বিপণিবিতান বন্ধ রেখেছেন কি না, তা পর্যবেক্ষণ করেছে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে জেলা প্রশাসনের তিনটি পৃথক দল।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো.মজিবর রহমান প্রথম আলোকে বলেন,সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে রাত আটটার পর কোনোভাবেই দোকানপাট ও বিপণিবিতান চালু রাখতে দেওয়া হবে না। সার্বক্ষণিক বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করা হবে।
তবে স্বপ্রণোদিত হয়েই সিলেটের ব্যবসায়ীরা প্রথম দিন নিজেদের প্রতিষ্ঠান নির্দিষ্ট সময়েই বন্ধ করেছেন।
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন