বিশেষ প্রতিবেদক:: সিলেট শহরতলীর ৪নং খাদিমপাড়া ইউনিয়নের পিরের বাজারস্থ এম.কে মার্কেটর ব্রাদাস এন্টারপ্রাইজের ফ্লেক্সিলোডের সেলিমের দোকান বহুদিন হইতে দ্বিতীয় শাহপরান মাজার পুলিশ ফাঁড়ি হিসেবে পরিনত হয়েছে।
সে এই দোকানের অন্তরালে পুলিশের এজেন্ট হিসেবে কাজ করছে বহুদিন হইতে।সে তার এলাকাসহ আশেপাশের বিভিন্ন এলাকার ওয়ারেন্ট ভুক্ত আসামিদের খুঁজ খবর নিয়ে পুলিশের হাতে ধরিয়ে দিয়ে হাতিয়ে নেয় সোর্স মানি।
এছাড়াও শাহপরান মাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সারোয়ার হোসেন ভূইয়ার সঙ্গে তার গভীর সংখ্যাতা থাকার সুবাধে বিভিন্ন ঘটনায় কাউকে শাহপরান মাজার পুলিশ ফাঁড়ি আটক করলে শুরু হয় তার দৌড়ঝাপ আর দালালি।
এক কথায় তার কারণে উপকৃত হন ইনচার্জ সারোয়ার হোসেন ভূইয়া অন্যদিকে উপকৃত হন অপরাধী পক্ষ।
তার চেয়েও বড় কথা সে একজন মানবতার ফেরিওয়ালা।শাহপরান মাজার পুলিশ ফাঁড়িতে কেউ কোন বিপাকে পরলেই এগিয়ে যান সেই মানবতার ফেরিওয়ালা সেলিম।
সেলিম ছাড়া যেন ফাঁড়িতে হয় না কোন রফাদফা।সেলিমই হলেন ইনচার্জের বিশ্বস্ত কাছের লোক।
তাছাড়া অবসর সময় সহ ডিউটিরত অবস্থায় শাহপরান মাজার পুলিশ ফাঁড়ি ইনচার্জ সারোয়ার হোসেন ভূইয়া থেকে শুরু করে ফাঁড়ির সকল পুলিশ সদস্যদের তার দোকানে প্রতিনিয়ত বসে থাকতে দেখা যায়।
যার জন্য বাজারের অনেকেই তার দোকান কে বলেন দ্বিতীয় পুলিশ ফাঁড়ি।সকাল নেই,দুপুর নেই, রাত নেই,সময়ে-অসময়ে তার দোকানে পুলিশ ফাঁড়ির বিভিন্ন পুলিশ সদস্যদের আড্ডায় মগ্ন থাকতে দেখা যায়।
তাছাড়া গেলো বছর শাহপরান মাজার পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বরত এএসআই আয়াতুল্লাহ তক্ষক কান্ডে বির্তকিত হয়ে মোগলাবাজার থানায় বদলী হলেও সময় অসময়ে থাকেও তার দোকানে ফাঁড়ির অন্যান্য পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে আড্ডায় মগ্ন থাকতে দেখা যায় প্রায় সময়ই।
সব মিলিয়ে বলা যায় তার এই দোকান দ্বিতীয় পুলিশ ফাঁড়ি।
সেলিম পুলিশ সদস্যের সঙ্গে এমন গভীর সংখ্যাতা গড়ে তুলে এলাকায় নিজেকে পুলিশের এজেন্ট দাবী করেন।
সে ইনচার্জের বিশ্বস্ত মানুষ হিসেবে সে চোরাকারবারিদের চোরাই পন্য পাচারের জন্য মাসিক ও সাপ্তাহিক চুক্তিতে চোরাই পন্য পাচারের ব্যবস্থা করে দিচ্ছে বলে একাধিক সুত্র তা নিশ্চিত করেছে।
শুধু তাই নয় যারা তার মাধ্যমে মাসিক কিংবা সাপ্তাহিক উৎকোচ ইনচার্জের নিকট পৌছায় না শুধু তাদের অল্প কিছু চোরাই পন্য আটক করে জনগণের আইওয়াশ করেন শাহপরান মাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ।
এমন একটি চোরাই চালান আটক করাকে কেন্দ্র করে তুলকালাম সৃষ্টি হয়েছে শাহপরান মাজার পুলিশ ফাঁড়িতে।
সুত্র মতে ইনচার্জের সোর্স সেলিমের সঙ্গে বনিবনা না হওয়াতে সেলিমের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে চলতি বছরের (১৪ই এপ্রিল) রাত ১০ ঘটিকার দিকে পিরেরবাজারে জৈন্তাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ লিয়াকত আলীর পুত্র-ভাতিজা ও চালক সহ তিনজনকে ভারতীয় চোরাই মোবাইলসহ আটক করে শাহপরান মাজার পুলিশ ফাঁড়ি।
পরে বহু সময় সেলিমের মাধ্যমে রফাদফার চেষ্টাও চালান ইনচার্জ। তবে অল্প সময়ের মধ্যে এই বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কানে পৌঁছালে রফাদফায় ব্যর্থ হন সেলিম ও ইনচার্জ।
তোপের মুখে পরে গড়িমসি করে ইনচার্জ সারোয়ার হোসেন ভূইয়া সাংবাদিকদের ১০০টি ভারতীয় মোবাইল সেট সহ তিনজনকে আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেন পর দিন দুপুরে অর্থাৎ (১৫ই এপ্রিল) ১২ টার পর।
এখানে কথা থেকে যায় আটক করেন(১৪ই এপ্রিল) রাত ১০টার দিকে আর সাংবাদিকদের তথ্য প্রদান করেন পরের দিন।
এর আগে এ বিষয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে তিনি জানান মামলা রুজু করার পর বিষয়টি আপনাদের জানানো হবে।
যাইহোক এই ঘটনা ধামাচাপা হতে না হতেই শুরু হয় শাহপরান মাজার পুলিশ ফাঁড়ি পুলিশ সদস্যদের বদলির হিড়িক।
জানা গেছে(২৫-২৬-৩০ মে)২০২২ ইং তারিখে বাংলাদেশ পুলিশের হেডকোয়ার্টার্স হইতে শাহপরান মাজার পুলিশ ফাঁড়ি ১০ জন পুলিশ সদস্যদের বদলির আদেশ হয়।
তাদের মধ্যে- ইনচার্জ সারোয়ার হোসেন ভূইয়া,টু আইসি উত্তম রায়,এএস আই সব্যসাচী দাস, এএস আই মোঃকামাল হোসেন,কনস্টেবল-শাহিন মজুমদার,মানস কুমার দাস,পরিমল সরকার, মোঃ তাওয়াবুর রহমান (বাবলু),মোঃসিদ্দিকুর রহমান ও মোঃ রবিউল আলম।
তবে”শাহপরান পুলিশ ফাঁড়ি রসের হাঁড়ি”বলেই কথা না হলে ইনচার্জ সারোয়ার হোসেন ভূইয়াকে গত(০২ জুন)২০২২ ইং তারিখে এন্টি টেররিজম ইউনিট ঢাকা ও কনস্টেবল মোঃ তাওয়াবুর রহমান (বাবলু)-কে গত (২৯ মে) ২০২২ ইং তারিখে কে এমপি খুলনায় বদলিকৃত কর্মস্থলে যোগদানের উদ্দেশ্যে তাৎক্ষণিক অবমুক্ত (Stand Release) করা হলেও এখনো পর্যন্ত তারা শাহপরান মাজার পুলিশ ফাঁড়িতে দায়িত্ব পালন করেই যাচ্ছেন।
তাহলে কি এখানের মায়া ছাড়তে পারছেন না তারা?
উল্লেখ্য চলতি বছরের (১৪ই এপ্রিল) রাত ১০ ঘটিকার দিকে পিরেরবাজারে জৈন্তাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ লিয়াকত আলীর পুত্র-ভাতিজা ও চালক সহ তিনজনকে ১০০ পিস ভারতীয় চোরাই মোবাইলসহ আটক করেছে মর্মে পুলিশ জানালেও এই ঘটনায় পিআইও এর একটি ইউনিট বিষয়টি নিয়ে তদারকি করছেন বলে বিশস্ত সুত্রে জানা গেছে। আর তাতেই ধীরে ধীরে বেড়িয়ে আসতে শুরু হয়েছে তলের বিড়াল।
মোবাইল সহ তিনজনকে আটকের সময় ডিউটিতে থাকাকালীন এবং সদ্য (Stand Release) হওয়া একজন কনস্টেবল শাহপরান মাজার পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বরত অন্য একজন কনস্টেবলের সঙ্গে এই মোবাইল আত্মসাতের ব্যাপারে কথোপকথনের একটি অডিও রেকর্ড চলে আসে ইতিমধ্যে প্রতিবেদকের নিকট।
রেকর্ডটি পর্যালোচনা করে যা শুনা যায় তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কথাগুলো পাঠকের বুঝার জন্য হুবুহু তুলে ধরা হলো-“এই মামলার জব্দ তালিকায় যে সাক্ষী হয়েছে তাকে ১টি মোবাইল ফোন দিয়েছেন ইনচার্জ সাহেব।কামাল স্যারে তার আত্মীয় কারে মোবাইল কয়টা দিছইন এটাও পিআইও এর কাছে খবর চলে গেছে।ইতা খবর কিলা গেলো পিআইও এর কাছে।আল্লায় জানে ইতার তো আইমি নাম্বার নাই আর আইমি নাম্বার ছাড়া তারা বার করবে কিলা।হুনলাম কামাল স্যারে সোর্সের লাগি মোবাইল যেগুন নিছে ইগুনও সোর্সরে দিছে না।আল্লায় জানে তে একলা মারি দিতো নি বেটা।এরপর বাবলুরে আইসি স্যারে মনে হয় একটা না দুইটা মোবাইল দিছে এখন হে আর আয় না ফাঁড়িত, সিক দেখাইয়া বিশ্রাম করের।ইতা সব দোষ দুই জনের।তারার লাগি ইতা বেরা লাগছে।ওতায় লিস্ট দিছে আমরার।সকাল বেলা কামালে মোবাইল লইয়া যাইতে সময় এটি এস আই সাইফুলের সামনে দিয়া লইয়া গেছে এখন হেও সাক্ষী দিতো। হে কিতা সাক্ষী দিতো।যে সময় কামাল স্যারে সোর্সের লাগি ৫টা আর তার একটা মোবাইল লইয়া যায় এসময় সাইফুলে কইছে তারে একটা মোবাইল দেওয়ার লাগি কামাল স্যারে আবার কইছে জব্দ তালিকায় সাক্ষী হইবায় নি।কইছে ওইমু পরে মনে হয় একটা হাতে লইছিল কইছে ইতা সোর্সের পরে তার লইয়া গেছে গি।এখন সাক্ষী হে নিজে থাকি ওইছে না তারা সাক্ষী নিছে।এখন ব্রাকের হকলরে পিআইও আর পুলিশ হেডকোয়ার্টার থাকি সাক্ষীর লাগি ডাকের কে কিতা জানইন কইতা।আমরারে ভরলে আমরা মুখ খুলতে পিছপা হইতাম নায় সবতা খইমু”।
এছাড়াও এই বিষয়ে আরো বহুরূপী কথাবার্তা বলতে শুনা যায় এই দুই কনস্টেবলকে একে অপরের সঙ্গে।
প্রশ্ন থেকে যায় তাহলে ওই দিন কতোটা মোবাইল ছিলো? আর তথ্য দিলে কি এরকম জব্দকৃত মাল সোর্সদের দেওয়ার নিয়ম আছে? যদি ১শ’টির বেশি মোবাইল জব্দ করা হয় তাহলে মোবাইল গুলো কোথায়? তাহলে এদিন কয়শ’টি মোবাইল আটক করা হয়েছিলো? এই প্রশ্নের উত্তর অজানাই থেকে গেলো সিলেটের সাংবাদিক সমাজ সহ সিলেটবাসীর আপামরজনসাধারণের!
এ ব্যাপারে এএস আই মোঃকামাল হোসেনের সঙ্গে মুঠোফোন যোগাযোগ করলে তিনি ফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য সংগ্রহ করা সম্ভব হয় নি।
এ ব্যাপারে শাহপরান মাজার পুলিশ ফাঁড়ি ইনচার্জ সারোয়ার হোসেন ভূইয়ার ব্যবহৃত সরকারি নাম্বারে যোগাযোগ করলে জানা যায় তিনি ছুটিতে বিধায় বক্তব্য সংগ্রহ করা সম্ভব হয় নি।
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন