• ১৫ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ১লা আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ১৯শে জিলহজ, ১৪৪৬ হিজরি

জৈন্তাপুরে আওয়ামীলীগ বিএনপি একাট্টা, লুটপাটের অভিযোগ

sylhetnewspaper.com
প্রকাশিত মে ২৮, ২০২৫
জৈন্তাপুরে আওয়ামীলীগ বিএনপি একাট্টা, লুটপাটের অভিযোগ

বিশেষ প্রতিবেদক :: মন্ত্রী ইমরান আহমদের দুই খলিফা। তারা ছিলেন অসম্ভব বেপরোয়া।স্থানীয় বিএনপি-জামায়াত কিংবা সাধারণ মানুষ কাউকেই মানুষ বলে মনে করত না। এমনকি পাত্তা দিত না আওয়ামী লীগের সাধারণ নেতাকর্মীদের।গড়ে তুলেছিলেন নিজস্ব লুটেরা সিন্ডিকেট।

জিম্মি করে রাখতো সাধারণ ব্যবসায়ীদের। তামাবিল স্থলবন্দর, গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুরের পাথরের রাজ্য ভোগ করেছিলেন তারা। সহযোগী ছিল স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ। দেশের অত্যন্ত সম্ভাবনাময়ী তামাবিল স্থল বন্দর সংশ্লিষ্টরা ভক্তি দিয়ে চলতে হতো তাদের।না হয় লজ্জাজনক বদলি।

কিন্তু স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতনে হতভম্ব তারা। এরমধ্যে খবর আসে তাদের আশ্রয়দাতা সিলেট-৪ আসনের সাবেক এমপি ও প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নেমেছে দুদক।

সাবেক এমপি ও মন্ত্রী কারাগারে গেলেও তার এই দুই খলিফা এখনো রাজার বেসে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এই দুই খলিফার মধ্যে অন্যতম জৈন্তাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও তামাবিল স্থলবন্দর চুনাপাথর ও কয়লা আমদানিকারক গ্রুপের সভাপতি লিয়াকত আলী।

তিনি ছিলেন এমপি ইমরানের স্বঘোষিত এপিএস। তিনি তামাবিল স্থল বন্দরের ‘ডন’। তামাবিল স্থলবন্দরকে নিজের ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছিলেন তিনি। কামিয়েছেন শত শত কোটি টাকা।

দেশে ও ভারতে রয়েছে পৃথক পৃথক স্ত্রী, নামে বেনামী ব্যাংক একাউন্ট ও অঢেল সম্পদ। সম্পদের বিস্তৃতি রয়েছে ইউরোপ-আমেরিকায়ও। লিয়াকত আলীর ক্ষমতার কাছে গোয়াইনঘাট জৈন্তাপুর থানা পুলিশ ছিল নির্দেশের গোলাম। নতুবা বদলি।

থানার ওসি, এসিল্যান্ড ও ইউএনও পছন্দ করে আনতেন তারা। কারণ মন্ত্রী ইমরান আহমদের এক ফোনেই সমাধাণ হয়ে যেত পোষ্টিং। পোষ্টিং পর কর্মকর্তারা কৃতজ্ঞতা দেখাতে কখনো কার্পণ্য করেনি।তার বিরুদ্ধে দুদকে মামলা থাকলেও কে নাড়াবে সেই মামলা, তিনি মন্ত্রীর লোক।

তার অন্যান্য সহযোগীদের একজন জৈন্তাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের অর্থবিষয়ক সম্পাদক জালাল উদ্দিন। কথিত এই ব্যবসায়ীরও সম্পদ বেহিসাব। দেশে ও ভারতে পৃথক স্ত্রী ও সম্পদের পাহাড়। তামাবিল স্থলবন্দরে যেভাবে খুশি সেভাবে নিয়ন্ত্রণ করতেন তিনিও। কারণ মন্ত্রীর খাস খলিফাদের একজন তিনি।জুলাই গণহত্যায় অর্থ দিয়ে সহযোগিতার এক মহানায়ক কারন তার কাছে রয়েছে হাজার হাজার কোটি টাকা।

মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে ভারত থেকে কত পণ্য নিয়ে এসেছেন তার কোন হিসেব নেই। জাহির করেছেন লেবার হেন্ডেলের শ শ কোটি টাকা, কারণ স্থানীয়ভাবে তাকে আটকাতে পারবে এমন কেউ থাকলেও অসহায়।

একবার শুল্ক গোয়েন্দার হাতে ধরা খেয়ে ৫০ লাখ টাকা জরিমানা গুনেছিলেন। তারপর গড়ে তুলেন শুল্ক গোয়েন্দাদের সাথে খাতির। পরবর্তীতে বেপরোয়া হয়ে উঠেন তিনিও। সরকার দলীয় প্রভাবে তারা ছিলেন দেশের প্রচলিত নিয়ম কানুনের ঊর্ধ্বে। সাধারণ ব্যবসায়ীরা ছিলেন তাদের কাছে জিম্মি। তাদের মর্জি রক্ষা করতে না পারলে ব্যবসা বন্ধ। তাই ম্যানেজ করেই তামাবিল স্থলবন্দরে ব্যবসায়িক কাজ করতে হতো তাদের। এভাবে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন

এই দুই খলিফা। তামাবিল স্থলবন্দর কেন্দ্রিক ব্যবসা বাণিজ্য হয়ে উঠে তাদের মূল আখড়া। তারা সেখানে একক আধিপত্ব বজায় রাখেন। স্থল বন্দরে প্রতিদিন কাস্টমস এলাকায় লেবার হোল্ডিংয়ে নামে ১১০০ টাকা সার্ভিস চার্জ। প্রতি গাড়ি থেকে আরো ৫০০ টাকা নিতেন দলীয় চাঁদা। ট্রাকের মাল প্রতি টন ৪৭০ টাকা করে নিতেন বখরা।

তামাবিল মহাসড়কে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন চলাকালীন সময়ে শিক্ষার্থীসহ আন্দোলনকারীদের উপর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ দ্বারা হামলার মূল পরিকল্পনাকারী ও অর্থযোগানদাতা একাধিক মামলার আসামি হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট কারী জালাল উদ্দীন,ও লিয়াকত আলী এখনও দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।

শিক্ষার্থীসহ আন্দোলনকারীদের উপর হামলার মূল অর্থযোগানদাতা-পরিকল্পনাকারী হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে জালাল উদ্দীন । কৌশলে তিনি বিভিন্ন মামলা থেকে নিজের নাম সরিয়ে নিতে রফিকুল ইসলাম শাহপরান ও ফখরুল ইসলামের মাধ্যমে চালিয়ে যাচ্ছে তোরজোর,।

এমনকি জুলাই গণহত্যায় অর্থধানকারিকে পুনর্বাসনের চেষ্টায় মাঠে রয়েছেন সিলেট জেলা বিএনপির বহিস্কৃত যুগ্ম সম্পাদক রফিকুল ইসলাম শাহপরান,ও জাতীয় পার্টির নেতা ইউপি চেয়ারম্যান বাট্টি ফখরুল ইসলাম।

যার জন্য খরচ করেছেন লাখ লাখ টাকা। সরাসরি সম্পৃক্ত থাকার পরও জৈন্তাপুর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ কোটি কোটি টাকা লোপাট কারি জালাল উদ্দীন প্রশাসনের চোখ ফাকি দিয়ে এখনো স্বৈরাচার সরকারের বিভিন্ন এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে।

এদিকে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিএনপি’র পক্ষ থেকে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে দলীয়ভাবে কঠোর অবস্থান নিলেও জৈন্তাপুর উপজেলার সুযোগ সন্ধানী কিছু আওয়ামী লীগ নেতাদের বিএনপিতে পুনর্বাসন করার অভিযোগ উঠেছে।

এসব ঘটনায় বিএনপি’র স্থানীয় নেতারা ছাড়াও তৃণমূলের কর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম আওয়ামী লীগ নেতা জালাল উদ্দীন ও লিয়াকত আলী । দুই খলিফা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের এমপি ও মন্ত্রিদের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত।

ও তার নিকট প্রতিবেশী পটপরিবর্তনের পর জাতীয় পার্টির নেতা ইউপি চেয়ারম্যান বাট্টি ফখরুল ইসলাম ও বিএনপির বহিস্কৃত নেতা রফিকুল ইসলাম শাহপরানের সঙ্গে তাদের দহরম বেড়েছে।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা জালাল উদ্দীন, ও লিয়াকত,বহিস্কৃত বিএনপি নেতা রফিকুল ইসলাম শাহপরানের মারফতে সিলেট জেলা বিএনপির এক নেতাকে নিয়মিত অর্থ যোগান দেয়ার তথ্য মিলেছে। মূলত জালাল উদ্দীনের সাথে রফিকুল ইসলাম শাহপরান নিয়মিত যোগাযোগ রেখে চলছেন। তামাবিল স্থলবন্দরের পরিস্থিতির সার্বক্ষণিক আপডেট দিয়ে যাচ্ছেন রফিকুল ইসলাম শাহপরান ।

এদিকে আওয়ামী লীগ নেতাদের দখলে থাকা তামাবিল স্থলবন্দরের দখল নিতে মারিয়া হয়ে উঠেন বিএনপি জামাতে নেতারা।

ছাত্র-জনতা ও প্রশাসনের রোষ থেকে রক্ষা ও নিরাপত্তা দেওয়ার নামে সীমান্ত এলাকার আওয়ামীলীগের টাকাওয়ালাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছেন কোটি কোটি টাকার আর্থিক সুবিধা। স্থালবন্দর দখল নিতে প্রথমেই পুনর্বাসনও করিয়ে দিচ্ছেন আওয়ামী লীগের চাঁদাবাজ হাজার হাজার টাকা লুটেরাদেরকে। সিলেটের ব্যস্ততম স্থলবন্দর তামাবিল দীর্ঘপ্রায় দেড় দশক থেকে দখল করে রেখেছেন জৈন্তাপুর ও গোয়াইনঘাট আওয়ামী লীগের চাঁদাবাজ সন্ত্রাসীরা।

সরকারের পতন হওয়ার সাথে সাথে তামাবিল স্থলবন্দর এমনকি বাড়িঘর থেকে পালিয়ে ভবঘুরে চলে যান আওয়ামী লীগের নেতা ও সন্ত্রাসীরা। আর এ সুযোগে আওয়ামী ব্যবসায়ী ও চাঁদাবাজদের নিরাপত্তা দিতে মরিয়া হয়ে ওঠেছেন সিলেট জেলা বিএনপির এক নেতা।

জানা যায় জেলা বিএনপির এই নেতা প্রথমেই সীমান্তের শীর্ষ চাঁদাবাজ আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের সাথে হাত মিলিয়ে হাতিয়ে নেন জাফলং জিরো পয়েন্টের পাথর ও পিয়াইন নদীতে জব্দ করা দুই কোটি টাকার বালু। তামাবিল স্থলবন্দরে জুলাই গণহত্যায় অর্থদানকারী জৈন্তাপুর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ জালাল উদ্দিনকে পুনর্বাসন করতে বিএনপি বহিস্কৃত নেতার নেতৃত্বে শোডাউন করে আওয়ামী লীগ নেতা চাঁদাবাজ জালাল উদ্দিনকে নিয়ে একসাথে গ্রুপ ছবি উঠান রফিকুল ইসলাম শাহপরান। পরে একটি সভা করেন আওয়ামী লীগ নেতা জালাল উদ্দিনকে সাথে নিয়ে পরিদর্শন করেন স্থলবন্দরের বিভিন্ন স্থান।

স্থানীয়, তামাবিল স্থলবন্দর জাফলং ও জৈন্তাপুরের আওয়ামী লীগ স্বৈরাচার সরকার পতন হলেও একাধিক মামলার আসামি তামাবিল স্থলবন্দরের আতংক লেবার হেন্ডেলের শত শত কোটি টাকা হজমসহ হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট কারি সেই ত্রাস জালাল উদ্দীন এখনো অধরাই থেকে গেছে।

আওয়ামী নেতা জালাল উদ্দীনকে দ্রুত গ্রেফতার করার দাবিও জানিয়েছে ভুক্তভোগী উপজেলাবাসী।

এ ব্যাপারে জানতে ফখরুল ইসলামের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি একজন জনপ্রতিনিধি, জালাল উদ্দীন ও লিয়াকত আলী তারা দুইজনই আমার ভোটার,এর বাহিরে কিছুনা।

এ ব্যপারে জানতে জৈন্তাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ জালাল উদ্দীনের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি দেশের বাহিরে আছি,আমি লেবার হ্যান্ডেল বা পুর্নবাসন এসবে আমি নাই,আমি এখন সৌদি আরবে।

একই বিষয়ে জানতে রফিকুল ইসলাম শাহপরান এর মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন