প্রতিষ্ঠার ৫৬ বছর পেরিয়ে গেলেও বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজে শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়নি। ফলে দূরদূরান্ত থেকে আসা দরিদ্র পরিবারের সন্তানেরা বাড়তি অর্থ খরচ করে মেস ও বাসা ভাড়া করে বাইরে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন। কেউ আবার শ্রেণীকক্ষে অনিয়মিত। আবাসন সংকটের কারণে ঐতিহ্যবাহী এই প্রতিষ্ঠানের সুদূরপ্রসারী শিক্ষা প্রসারে বিঘ্ন ঘটছে।
জানা গেছে, ১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠিত কলেজটি এরশাদ সরকারের আমলে সরকারীকরণ করে কর্তৃপক্ষ। কলেজটিতে একাদশ, দ্বাদশ, ডিগ্রি পাস কোর্সসহ বর্তমানে ৭টি বিষয়ে অনার্স কোর্স চালু রয়েছে। কলেজের বর্তমান শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার। এরমধ্যে চার হাজারের অধিক শিক্ষার্থী উপজেলার বাইরে থেকে এসে পড়াশোনা করছেন। একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, ২০১১-১২ সালে বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজে আবাসন নির্মাণের জন্য একটি প্রকল্প গ্রহণের চিঠি দেয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ছাত্রাবাসে মারামারি হবে-এমন ঠুনকো কারণে আবাসন ব্যবস্থা নির্মাণে অনাগ্রহ দেখায় কলেজ কর্তৃপক্ষ। এরপর এ বিষয়ে কেউই আর কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। তাছাড়া কলেজ কর্তৃপক্ষের দেয়া ফিরতি চিঠিতে জমি সংকটের বিষয়টিও তুলে ধরা হয়।
কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থী ও শিক্ষক বলেন, আবাসিক ব্যবস্থা না থাকায় অনেক দরিদ্র পরিবারের সন্তানেরা শহরের বিভিন্ন এলাকায় মেস এবং বাসা ভাড়া করে থাকছেন। এতে তাঁদের বাড়তি অর্থ খরচ হওয়ায় অনেকে কঠিন অবস্থায় পড়েছেন। কেউ আবার ভর্তি হয়ে নিয়মিত শ্রেণীকক্ষে উপস্থিত হতে পারেননা। বিয়ানীবাজার পৌরশহরের নয়াগ্রামের একটি মেসে থাকেন কলেজের ৩ শিক্ষার্থী। ওখানে থাকা ছাত্র ইসরাফিল হোসেন বলেন, প্রতি মাসে তাঁদের পাঁচজনের ৩ হাজার মেস-ভাড়া, গ্যাস ও রান্নার লোকসহ খাবারের জন্য প্রায় ২১ হাজার টাকা খরচ পড়ে যায়। কলেজের ছাত্রাবাসে থাকলে এর অর্ধেক অর্থ খরচ হতো।
বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক মো. জহির উদ্দিন বলেন, জকিগঞ্জ, বড়লেখাসহ বিভিন্ন উপজেলার অনেক ছাত্র এই কলেজে পড়েন। কলেজে আবাসিক ব্যবস্থা থাকলে এসব শিক্ষার্থীরা অল্প খরচে পড়ালেখার সুযোগ পেতেন। এ ছাড়া ছাত্রাবাসে নিরাপত্তার পাশাপাশি সময় এবং যাতায়াতের কষ্টও লাঘব হতো। কলেজের সাবেক ভিপি সাইফুল ইসলাম নিপু বলেন, শিক্ষার্থীদের বিশেষ করে দরিদ্র ছাত্ররা অপেক্ষাকৃত কম খরচে থাকার ব্যবস্থা করতে ছাত্রাবাসের প্রয়োজন রয়েছে। ছাত্রাবাস হলে রাজনৈতিক কার্যক্রমেও ছাত্রদের উপস্থিতি বাড়বে।
উপজেলা ছাত্র শিবিরের সভাপতি আহবাবুর রহমান মুরাদ বলেন, কলেজের নিজস্ব আবাসিক ব্যবস্থা না থাকায় সুবিধা বঞ্চিত শিক্ষার্থীরা অধিক খরচ করে মেস করে বা বাসা ভাড়া করে থাকছে। কেউ তাদের খোঁজ রাখছেনা। বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজ ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব শহিদুল ইসলাম বলেন, ১০ বছরের শিক্ষামন্ত্রী একটি ছাত্রাবাস তৈরি করতে পারেননি। কী উন্নয়ন করেছেন, তা এই কলেজের দিকে থাকালেই বুঝা যায়।
বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক হাবীবুর রহমান জানান, মূলত: আমাদের জমি সংকট প্রবল। আর এই সংকটের কারণে আমরা পিছিয়ে আছি। তাছাড়া কখনো ছাত্রাবাস নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা কেউ অনুভব করেনি। তিনি বলেন, বিগত দিনে এ ধরণের কোন পত্রালাপ হয়েছে কি-না, তা জানা নেই। আমি নতুন করে সংশ্লিষ্টদের কাছে চিঠি দিবো।
সিলেট শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ‘ছাত্রাবাসের মতো বড় প্রকল্পের জন্য শিক্ষামন্ত্রীর শরণাপন্ন হতে হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর এ বিষয়ে আমাদের কাছে জানতে চাইলে, আমরা চাহিদার কথা জানাব।
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন