নিজস্ব প্রতিবেদক:- ২০২৪ সালের ৫ আগষ্ট গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিষ্ট হাসিনা সরকারের পতন হওয়ার পর কথিত কিছু বিএনপি নেতার কপাল খুলে গেছে!
সেই সাথে গজিয়ে উঠা আওয়ামিলীগের দালালরা খোলস পাল্টিয়ে বিএনপি নেতা পরিচয় দিয়ে নিজেদের ফায়দা হাসিলে ব্যাস্হ হয়ে পড়েছেন আর এদের কারনে দলীয় ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে।
এসব কথিত নেতা নিরীহ মানুষের বিরুদ্ধে দায়ের করছে মিথ্যা মামলা, হয়রানি করার উদ্দ্যেশ্যে মিথ্যা মামলা দায়েরের পর দেয়া হচ্ছে হুমকি। মামলা থেকে বাচঁতে জায়গা জমির বিরোধ শেষ করার প্রস্তাবসহ লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে।
নিজেদের পুরনো বিবাদকে কেন্দ্র করে অপর পক্ষকে শায়েস্তা করার জন্য মামলায় নাম ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে। খোজ নিয়ে জানা গেছে, বেশ কিছু মামলার বাদী নিজেও জানে না সে মামলার বাদী। এতে একদিকে যেমন মামলা গুলো নষ্ট হচ্ছে অপর দিকে জনগন বিএনপির উপর থেকে আস্হা হারিয়ে ফেলার উপক্রম হয়ে দাড়িয়েছে।
এসব চাঁদাবাজি ও মামলা বানিজ্যর সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে সিলেট মহানগরের ২৪ নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারন সম্পাদক ও মহানগর বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ রহিম আলী রাসুর এবং আওয়ামিলীগের টিলাগড় গ্রুপের দোসর, নব্য গজিয়ে উঠা কথিত বিএনপি নামধারি জাকির হোসেন পারভেজের বিরুদ্ধে।
তবে জাকিরের ফেসবুক প্রোফাইলে দেখা গেছে তিনি নিজেকে ছাত্রদলের ২৪ নং ওয়ার্ডের প্রতিষ্টাতা সিনিয়র সহ-সভাপতি, ছাত্রদল সিলেট জেলার সাবেক সহ- সাধারন সম্পাদক এবং সদস্য সিলেট মহানগর বিএনপি উল্ল্যেখ করে রেখেছেন।
বিএনপি সুত্র বলছে বিগত ১৬ বছর থাকে দেখা যায়নি বিএনপির কোন প্রোগ্রামে, উল্টো তিনি বিগত আওয়ামিলীগের সরকারের আমলে টিলাগড় গ্রুপের হয়ে কাজ করে গেছেন।
আমাদের বিশ্বস্হ সুত্র জানায়, পারভেজ ও রাসু মিলে তাদের পারবারিক জায়গা জমি নিয়ে যাদের সাথে বিরোধ ছিল তাদেরকে মামলায় ঢুকিয়ে চাঁদা দাবী এমনকি মামলা থেকে বাঁচতে হলে জায়গার বিরোধ অর্থাৎ জায়গা দখল দেয়ার হুমকি দিচ্ছেন।
এসব মামলার বাদীর খোজ নিয়ে জানা যায়, গত ৪ আগষ্ট অনেকেই সিলেটে ছিলেন না, অথচ তার নাম ব্যবহার করে এই চক্র মিথ্যা মামলা দিয়ে লোকজনকে হয়রানি করছে।
অপরদিকে অন্য বাদীদের ম্যানেজ করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। পরে সেসব মামলার ভয় দেখিয়ে চাঁদা গ্রহন করা হয়েছে বলেও সুত্র নিশ্চিত করেছে।
সুত্র থেকে জানা যায়, কয়েকজনের জাতীয় পরিচয় পত্র সংগ্রহ করে জাল দস্তখত দিয়ে আদালতের মাধ্যমেও মামলা দায়ের করা হয়েছে। আর এসবের পিছনে রাসু ও পারভেজের হাত রয়েছে।
ইতিমধ্যে রাসুর অডিও কল ভাইরাল হয়েছে। সে তার আপন শালা ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী সাব্বিরকে মামলা থেকে বাঁচানোর জন্য চেষ্টা করছিল।
সেই সাথে রাসুর বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজ ও দলের ভাবমূর্তি বিনষ্টের সুনির্দিষ্ট অভিযোগে নোটিশও দেয়া হয়েছে। সেই নেটিশে রাসুর বিরুদ্ধে ২০২৪ সালের জুলাই আগষ্টের ছাত্র জনতার আন্দোলন পরবর্তী সময়ে মামলা দিয়ে সাধারণ মানুষদেরকে হয়রানি করা ও নিজের ফায়দা হাসিলের অভিযোগ আনা হয়েছে।
গত ৯ জানুয়ারি গণমাধ্যমে প্রেরিত বিজ্ঞপ্তিতে রাসুর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ দলের ভাবমূর্তি বিনষ্ট ও দলীয় শৃঙ্খলার পরিপন্থী বলে উল্ল্যেখ করা হয়।
রাসু – পারভেজের তথ্য সংগ্রহে মাঠে নামে প্রথম সকালের একটি টিম। দীর্ঘ অনুসন্ধান করে বিভিন্ন সুত্রের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়।
সুত্র জানায়, রাসুর জায়গা নিয়ে যাদের সাথে বিরোধ যেমন, নগরীর তেররতন, সৈদানীবাগ, সাদাটিকর, সোনারপাড়া, মিড়াপাড়া, উপশহর, টুলটিকরসহ বিভিন্ন এলাকার কয়েকজনের নাম তথাকথিত মামলায় ঢুকানো হয়েছে। এদের সবার সাথে রাসু ও পারভেজের পুরাতন বিরোধ রয়েছে বলে জানা গেছে।
তেররতন এলাকার কয়েকজনের সাথে আলাপ কালে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, রাসুুর পরিবারের সাথে অন্যান্য পরিবারের জায়গা জমি নিয়ে দীর্ঘদিন থেকে বিরোধ চলে আসছে।
গত ৫ আগষ্ট শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর যখন দেশে মামলা দায়ের শুরু হয়, তখন রাসু তার ব্যাক্তিগত আক্রোশ মেটানোর জন্য বেশ কিছু নিরীহ লোকদের মামলায় ঢুকিয়ে দেয়। সেই সাথে জায়গা নিয়ে বিরোধে রাসুর বিপক্ষে যারাই কথা বলেছে সবাইকে সে মামলায় ঢুকায়।
তারা আরো বলেন, মামলার বাদী নিজেও জানে না মামলা কবে হয়েছে কিভাবে হয়েছে বা কেন করা হয়েছ। কিছু জাতীয় পরিচয় পত্র সংগ্রহ করে জাল দস্তখতের মাধ্যমে আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে আর এ কাজে রাসুকে সহযোগিতা করেছেন মিড়াপাড়ার জাকির হোসেন পারভেজ নামের কথিত এক বিএনপি সমর্থক।
সুত্র জানায়, পারভেজ শাপলাবাগ এলাকার মৃত মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালামের ছেলে সেলিমকেও মামলায় ঢুকি্যেছেন। জানা যায়, সেলিমের সাথে পারভেজের জায়গা নিয়ে পুর্বের বিরোধ ছিল। অথচ সেলিম বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক নিখোঁজ এম ইলিয়াস আলীর খুব কাছের পরিচিত একজন ছিলেন।
সেই সাথে সেলিম বিএনপির সাথে ৯০ সাল থেকে জড়িত। ইতিমধ্যে সেলিম তার মামলার ব্যাপার নিয়ে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক নিখোঁজ এম ইলিয়াস আলীর স্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা তাহসিনা রুশদীর লুনার সাথে যোগাযোগ করে ন্যায় বিচার চেয়েছেন বলেও সুত্র নিশ্চিত করে।খবর প্রথম সকাল ডটকম
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সৈদনীবাগ এলাকার কয়েকজন জানান, রাসু আমাদের এলাকার নিরীহ কয়েকজনের নামে মামলা দিয়েছে। তার কথায় মামলায় নাম ঢুকানো হয়েছে। অথচ এরা কোন রাজনৈতিক সংগঠনের সাথে জড়িত না।
তারা বলেন, আমরা এসব বিষয় নিয়ে এলাকায় বৈঠক করে সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপির শীর্ষস্হানীয় নেতৃবৃন্দের সাথে দেখা করব।
খোজ নিয়ে জানা যায়, রাসুর জায়গা নিয়ে যে বা যার বিবাদীর হয়ে কথা বলেছে সবাইকে সে মামলায় ঢুকিয়েছে।
রাসু পারভেজের এমন মামলা বানিজ্য নিয়ে নগরীর তেররতন, সৈদানীবাগ, সাদাটিকর, সোনারপাড়া, মিড়াপাড়া, উপশহর, টুলটিকরসহ আশপাশ এলাকাবাসী আতংকে রয়েছেন।
এ ব্যাপারে শাহপরান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনির হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আদালত থেকে যেসব মামলা তদন্তের জন্য আমাদের কাছে আসে আমরা সে মামলা গুলো সুষ্ঠু তদন্ত করে রিপোর্ট দেই।
তিনি বলেন, থানায় যেসব মামলা দায়ের করা হয়েছে সেগুলোও ভাল করে তদন্ত করে নথীভুক্ত করা হয়। কোন নিরীহ লোক যাতে আসামী না হয় সে দিকে নজর রেখে পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, আমাদের আইজি স্যারের নির্দেশ যে কোন মামলা তদন্ত করে নথীভুক্ত করা।
তিনি আরো বলেন, আমাদের কাছেও এরখম অনেক অভিযোগ আসছে, আমরা সে গুলো তদন্ত করে ব্যবস্হা নিচ্ছি।
এ বিষয়ে সৈয়দ রহিম আলী রাসুর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমাকে রাজনৈতিকভাবে হেয় করার উদ্দ্যেশ্যে একটি কুচক্রি মহল মিথ্যা বানোয়াট তথ্য দিচ্ছে।
তিনি বলেন, আমার জায়গা জমি নিয়ে কারো সাথে বিরোধ নাই, তবে সরকারের সাথে আমার জায়গা নিয়ে মামলা রয়েছে। তিনি বলেন, দলীয় নোটিশের জবাব আমি দিয়েছি। দল যে সিদ্ধান্ত নিবে আমি তা মেনে নিব।
তিনি আরো বলেন, আমার দলীয় কার্যক্রমে অগ্রনী ভুমিকা দেখে একদল হিংসাপরায়ন হয়ে আমাকে দলের কাছে ছোট করার জন্য মিথ্যা অভিযোগ দিচ্ছে। মামলার ব্যাপারে তিনি বলেন, আমি কোন মামলা করাই নাই এসব তথ্য সঠিক নয়।
অপর দিকে অভিযোগের বিষয়ে জাকির হোসেন পারভেজের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে থাকে পাওয়া যায়নি। তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন