বিশেষ প্রতিবেদকঃ সিলেটের ঐতিহ্যবাহী জাফলংকে খাবলে খাচ্ছে স্থানীয় প্রভাবশালী পাথর খেকো একটি সিক্রিকেট। দীর্ঘদিন থেকে বন্ধ থাকা কোয়ারী এলাকায় জমে থাকা লাভ-লাখ ঘণফুট পাথর এখন শেষের পথে।
গত ৫ আগস্টের পর থেকে জাফলংয়ে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন ও চাঁদাবাজী করছে এই সিন্ডিকেটটি। এদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলেও কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেনা স্থানীয় প্রশাসন। বরং সংবাদ প্রকাশের জেরে এক সাংবাদিককে প্রাণে হত্যার হুমকি দিচ্ছে চক্রের সদস্যরা।
ফলে গত নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তা চেয়ে গত ৭ জানুয়ারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেন দৈনিক আলোকিত সিলেটের বার্তা সম্পাদক আবুল হোসেন।
অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, জাফলং এলাকার পাথর লুটপাটকারী সিন্ডিকেট প্রধান বহিষ্কৃত বিএনপি নেতা শাহ আলম স্বপন, উপজেলা যুবদলের যুগ্ন আহবায়ক মিজানুর রহমান হেলোয়ার, যুবদলের যুগ্ন আহবায়ক ইউসুফ আহমদ, পূর্ব জাফলং ইউনিয়ন ছাত্রদলের বহিষ্কৃত সভাপতি আজির উদ্দিন, আওয়ামী লীগ নেতা সমেদ মিয়, আমজাদ বক্স, মাসুদ রানা, সফিউল আলম সেলিম মিয়া সহ ২০-৩০ জনের একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট তাকে সংবাদ প্রকাশেরজন্য হত্যার হুমকি দিচ্ছে।
চক্রটি গত ৫ আগস্টের পর থেকে জাফলং জিরো পয়েন্ট, পিয়াইন নদী ও কোয়ারী এলাকাগুলো থেকে অবৈধ ভাবে বালু-পাথর লুটপাট করে আসছে। কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে এদের বিরুদ্ধে কোন আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না। ফলে এরা ব্যাপরোয়া হয়ে লুটপাটের পাশাপাশি কোটি কোটি টাকা চাঁদাবাজি করছে প্রতিদিন। দিনে রাতে এরা ফেলুডার এক্সেভেটার দিয়ে অবৈধ ভাবে বিভিন্ন স্থান থেকে পাথর উত্তোলন করলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও থানার ওসি রহস্যজনক কারণে চুপ রয়েছেন।
যদিও প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাঝে-মধ্যে জাফলং এলাকায় অভিযান চালানো হয় কিন্তু স্বপন বাহিনীর ধারে কাছে যাচ্ছেনা অভিযানকারী দল। যার ফলে প্রকাশ্যে দৈনিক লাখ-লাখ টাকা চাঁদা তুলছে চক্রের সদস্যরা। যদিও এই সিন্ডিকেটের সাথে কোন ভাবেই স্থানীয় তৃণমূল বিএনপির নেতৃবৃন্দ জড়িত নন। চাঁদাবাজির টাকার একটি অংশ স্থানীয় কিছু সাংবাদিকদের বিকাশে পাঠান চক্রের সদস্যরা, ফলে তারাও এখন নিরব দর্শক। এছাড়া থানা পুলিশ ও আনসার সদস্যরা নিয়মিত ডিউটি পালন করলেও তারা চাঁদাবাজদের কোন বাধা প্রদান করছেনা বরং চাঁদাবাজদের কাছ থেকে অর্থনৈতিক সুবিধা নিচ্ছেন।
বর্তমানে জাফলং এলাকায় স্বপনের একক রাজত্ব চলছে। তার রয়েছে বিশাল লাটিয়াল বাহিনী। এই বহিনীর সদস্যরা সর্বদা এলাকায় প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া দিয়ে থাকেন। সবশেষ জাফলংয়ের নয়াবস্তি এলাকার গ্রাম পুলিশ ও শারীরিক প্রতিবন্ধি ইউসুফ আলীর ভূমি দখল নিয়ে জাফলং এলাকায় রাতভর অস্ত্রের মহড়া দেয় স্বপন বাহিনী। এ ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ করেন পূর্ব জাফলং ইউনিয়নের মৃত ইব্রাহিম আলীর ছেলে মোঃ ইউসুফ আলী। অভিযোগ দায়েরের ২০ দিনের বেশী সময় অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত অভিযোগটি এফআইআর হিসেবে রেকর্ড করেনি গোয়াইনঘাট থানা পুলিশ। প্রশাসের সাথে যোগসূত্র থাকায় পাথর খোকো চক্রের বিভিন্ন রকম হুমকিতে নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তাহীনতায় ভোগছেন ঐ সাংবাদিক।
এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তর সিলেটের সহকারী পরিচালক জানান, তিনি অবৈধ পাথর উত্তোলনের জন্য কাউকে আশ্বাস দেননি এবং এ বিষয়ে কারো সঙ্গে সমঝোতাও হয়নি।
অবৈধ পাথর উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে পরিবেশ ধংশের অভিযোগে মামল প্রস্তুতি চলমান রয়েছে। গোয়াইনঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সরকার তোফায়েল অহমদ জানান, অবৈধ পাথর উত্তোলন বন্ধে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বার্হী অফিস সূত্র অভিযোগ প্রাপ্তির কথা স্বীকার করে বলে, অভিযোগটি আমলে নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। সিলেটের জেলা প্রশাসক শের মোহাম্মদ মাহবুব মুরাদ জানান, গত ৫ আগষ্টের পর প্রকৃতি কন্যা জাফলংয়ের পাথর কোয়ারীতে ব্যাপক লুটপাট হয়েছে শুনেছেন। ইতোমধ্যে পাথর লুটপাটে জড়িতদের বিরুদ্ধে থানায় মামলাও হয়েছে। তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন