• ২১শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৬ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১৯শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

নগরীতে সক্রিয় নারী ছিনতাইকারী আপা সিন্ডিকেট!

sylhetnewspaper.com
প্রকাশিত ডিসেম্বর ১৯, ২০২৪
নগরীতে সক্রিয় নারী ছিনতাইকারী আপা সিন্ডিকেট!

বিশেষ প্রতিবেদকঃঃ সিলেট নগরীতে শীর্ষ নারী ছিনতাইকারী মালা সিন্ডিকেট আবারও সক্রিয় এমন অভিযোগ একাধিক ভুক্তভোগীর। নগরীতে নারী ছিনতাইকারী ও পকেট চোর সিন্ডিকেটের অন্যতম তিনজন হচ্ছে মালা, মেঘলা ও নাজম । নগরীর জিন্দাবাজার, সোবানিঘাট, বন্দরবাজার, রিকাবীবাজার, আম্বরখানাসহ অধিকাংশ এলাকার ব্যবসায়ীদের কাছে তারা নারী পকেট চোর ও ছিনতাইকারী হিসেবে পরিচিত মুখ। বর্তমানে দুই বোন এক সাথে চুরি করলেও ঈদ কিংবা পূজা এলেই তাদের দুই জনের নেতৃত্বে একাধিক সংঘবদ্ধ নারী ছিনতাইদল নিয়ে নামে বিভিন্ন মার্কেটে। চুরি করতে গিয়ে তারা নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ধরাও পড়ে। তখন তাদের উদ্ধার করেন কোতোয়ালি থানার এস.আই ইলিয়াসসহ কিছু অসাধু পুলিশ সদস্য, জৈনক সাংবাদিক ও কিছু রাজনৈতিক লেবাসধারী পাতি নেতারা।

সুত্র জানায়, মালা সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে সিলেটের বিভিন্ন থানায় প্রায় শতাধিক মামলা রয়েছে।

ভুক্তভোগীরা বলছেন,মালা,নাজমা সিন্ডিকেট চক্রের সদস্যরা সবাই দেখতে সুন্দরী। এদের পোশাকেও থাকে আভিজাত্যের ছাপ। এই সুযোগকে পুঁজি করে মালা সিন্ডিকেট দাপিয়ে পকেট চুরি ও ছিনতাই করে যাচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে ভয়ে কেউ কথা বলতে পারেনা, এমনকি গণমাধ্যমে সংবাদও প্রকাশ করতে পারে না।

তাদের সহযোগীরা সাধারণত মার্কেট, হাসপাতাল, মাজারে একাকী চলাফেরা করা নারীদের টার্গেট করে তারা। এরপর অনুসরণ করতে থাকে।সুবিধামতো জায়গায় আসার পরে মুহূর্তেই কৃত্রিম জটলা তৈরি করে চোখের পলকে ছিনিয়ে নেয় সর্বস্ব।

সূত্র বলছে, মালা নাজমা বাহিনীতে ১০ থেকে ১৫ জন নারী পুরুষ ছড়িয়ে রয়েছে সিলেটে। যাদের মূল কাজ ছিনতাই। অস্ত্র ছাড়াই ভিন্ন কৌশলে সর্বস্ব ছিনিয়ে নেয় তারা। এ সময় তাদের আশপাশেও ছড়িয়ে থাকে সশস্ত্র সহযোগীরা।এমনকি তাদের সহযোগিতা করার জন্য নির্দিষ্ট সিএনজি অটোরিকশা ও চালক রয়েছে। নগরীর শীর্ষ পুরুষ ছিনতাইকারীদের সাথে তাদের যোগসাজশ রয়েছে। যার ফলে ছিনতাইকারী কালা মিয়া, মনা, বাবলু, আজাদ, মনাই, আরিয়ান আহমদ শুভ, জগলু, খায়রুল, আনোয়ার এরা সব সময় মালা সিন্ডিকেটকে সেল্টার দিয়ে থাকে। এ ছাড়া রয়েছে কথিত সাংবাদিক, রাজনৈতিক লেবাসধারী ও এক শ্রেণির অসাধু পুলিশ সদস্যও।

সুত্র জানায়, মালা আক্তার ও মেঘলা আক্তার তারা আপন দুই বোন এরা নগরীর চিহিৃত নারী পকেট চুর ও ছিনতাইকারী চক্রের মুল হোতা । বাড়ি দক্ষিণ সুরমার মোগলাবাজারের কলারতল এলাকার আব্দুল মালেকের মেয়ে। তাদের চলাফেরা বসবাস শহরতলীতে। বোরকা লাগিয়ে নগরজুড়ে ঘুরে বেড়ায় তারা। তাদের প্রধান সহযোগী হিসেবে রয়েছেন তাদের মা,ও নাজমা বেগম, তারা সরকারী-বেসরকারী হাসপাতালসহ বিভিন্ন মার্কেটে মার্কেটে দেয় ঢুঁ। আর সুযোগ পেলেই ছিনিয়ে নেয় মোবাইল কিংবা ভ্যানিটি ব্যাগ। এই সিন্ডিকেটকে শাহজালাল রহঃ মাজার ও জিন্দাবাজার এলাকা সহ বিভিন্ন এলাকায় ইতোমধ্যে বেশ কয়েক বার জনতা আটক করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করে।

২০১৪ সালের ১৪ এপ্রিল গভীর রাতে সিলেট নগরীর ক্বিনব্রিজ এলাকার নববর্ষ মেলা থেকে দক্ষিণ সুরমা উপজেলার মোগলাবাজার কলারতলের মৃত আবদুল মালেকের মেয়ে মালা আক্তার (২০) সহ আরো ৪ জনকে আটক করে পুলিশ। পরের দিন তাদেরকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করে পুলিশ।

পুলিশ প্রসিকিউশনের মাধ্যমে আদালতে প্রেরণ করলেও বেশিদিন কারাবাস করতে হয়নি। জামিনে বেরিয়ে এসে আবার চুরির ধান্ধায়।তাছাড়া মালা আক্তার বিয়ে করেছেন এক কর্মকর্তাকে।

নাজমা ছাড়াও মালা সিন্ডিকেট চক্রের আরো সদস্যরাও আছেন। প্রতিনিয়ত তাদের খপ্পরে পড়ছেন সাধারণ মানুষ। সম্প্রতি অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে নারী প্রতারক চক্রের প্রতারণার বিভিন্ন কৌশল। কোথায় কিভাবে তারা চুরি-ছিনতাই করে এমন গোপন কিছু তথ্য।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, নারী ছিনতাইকারী চক্রটি চুরি করতে গিয়ে কয়েকটি কৌশল অবলম্বন করে থাকে। তারা নগরের বিভিন্ন হাসপাতাল বিশেষকরে ওয়েসিস হাসপাতাল ও আল-হারামাইন হাসপাতালে বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগী সেজে যায়। সেখানে ‘টার্গেট’ ঠিক করে সেই টার্গেটের সাথে একই লাইনে দাঁড়ায়,অথবা একি জায়গায় বসে, তারপর সুকৌশলে টার্গেটকৃত ব্যক্তিকে পেছন থেকে ধাক্কা দিয়ে ব্যাগ থেকে মোবাইল, টাকা ও মূল্যবান জিনিস নিয়ে দ্রুত সহযোগীর কাছে পাচার করে দেয়।

পুলিশ সুত্রে জানা যায়, এই সিন্ডিকেট পুলিশের হাতে একাধিকবার গ্রেফতার হয়। তবে সিআইডি অফিসার সরওয়ার কবির এদেরকে ছাড়িয়ে নিতে জোর লবিং করেন। সিআইডি অফিসার সরওয়ার মালা সিন্ডিকেটের প্রধান সেল্টার দাতা। শুধু সরওয়ার নয়, সাথে রয়েছে কতিপয় সাংবাদিক নামধারী ও রাজনৈতিক লেবাসধারী ছিনতাইকারীরাও।

পুলিশের একটি সুত্র জানায়, প্রথম তারা নিজেদের নির্দোষ দাবি করলেও পরে অবশ্য জেরার মুখে চুরির কথা স্বীকার করে। তারা শুধু চোর কিংবা ছিনতাইকারী নয়। তারা অসামাজিক কাজ, মাদক বিকিকিনি সহ নানা ঘটনার সঙ্গে জড়িত। ঘনিষ্ঠ একটি সুত্র জানায়, একাধিক পুলিশ কর্মকর্তার সাথে মালার গোপন সম্পর্ক রয়েছে। যার ফলে আগে ছিনতাইয়ের কারনে ধরা পড়লেও বর্তমানে আটক হতে হয় না। শুধু তাই নয়, এস আই ইলিয়াসকে প্রতি সপ্তাহে মাসোহারা দিতে হয়।

নগরীর দক্ষিণ সুরমায় রয়েছে মহিলা চোর দলের আরেকটি সিন্ডিকেট। ওই সিন্ডিকেটের সঙ্গে রয়েছে তাদের সম্পৃক্ততা।

নগরীর শাহজালাল (রহ.) ও শাহপরান (রহ.) মাজারে তাদের একাধিক চক্রের উপস্থিতি লক্ষণীয়। তারা শাহজালাল ও শাহপরান ভক্তদের সাথে মাজারে উপস্থিত হয়। মাজারে আগত মহিলারা অজু করার সময় পূর্ব থেকে টার্গেটকৃত মহিলার ঠিক পাশে অজু করতে বসে নারী চোর চক্রের সদস্যরা। এসময় কৌশলে ওই মহিলার হাতব্যাগ থেকে মোবাইল, টাকা ছিনিয়ে নেয় এ চক্রের সদস্যরা। এছাড়া তাদের টার্গেটকৃত মহিলা নামাজে সেজদারত অবস্থায় ব্যাগ থেকে টাকা বা মোবাইল হাতিয়ে নেয় এরা। এই নারী অপরাধীদের তৎপরতা রয়েছে সুরমা পয়েন্ট, কদমতলী বাসস্ট্যান্ড, রেলওয়ে স্টেশন ও ওসমানী শিশু পার্ক এলাকায়।

এ ব্যাপারে মালা সিন্ডিকেটের প্রধান মালার আক্তারের সাথে মোবাইল ফোন আলাপ কালে তিনি বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, আমার স্বামী সিআইডি অফিসার সারওয়ার কবির, তিনি বর্তমানে চট্টগ্রামে কর্মরত রয়েছেন, আমি বর্তমানে এসবের সাথে জড়িত নয়।

এ ব্যাপারে সিলেট কোতোয়ালি থানার এস আই ইলিয়াস জানান, কর্মক্ষেত্রে কাজ করতে হলে সব ধরনের মানুষের সাথে সম্পর্ক রাখতে হয়। তবে মাসোহারার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।

এ ব্যাপারে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের পুলিশ কমিশনার মোঃ রেজাউল করিম জানান, বিষয়টি আমার জানা নেই, তবে অপরাধী যেই হোক তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।বিস্তারিত আসছে কে এই সারওয়ার কবির।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন