নিউজপেপার রিপোর্ট : আওয়ামী লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজকে অপহরণের পর কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। দুর্বৃত্তদের কবল থেকে মুক্তিপণ দিয়ে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করেন স্বজনেরা। উদ্ধারের পর নগরীর একটি প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়ে তার অস্ত্রোপচার করা হয়।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে এ তথ্য নিশ্চিত করে জানায়, বৃহস্পতিবার মধ্যরাত ১২টার দিকে নগরীর সুবিদবাজারের মিয়া ফাজিল চিশত এলাকায় একটি বাসার সামনে থেকে তাকে অপহরণ করা হয়। ভোর রাত সাড়ে ৩ টার দিকে তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় সাগরদিঘীর পাড় এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়।
অপহরণ হওয়ার আগে মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ সিএনজি অটোরিকশা করে মিয়া ফাজিল চিশত এলাকায় একটি বাসায় যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে ওই এলাকার মাসালাবাজার নামীয় প্রতিষ্ঠানের সামনে পৌঁছামাত্র কয়েকটি মোটরসাইকেলে আসা দুর্বৃত্তরা তার অটোরিকশার গতিরোধ করে। এসময় অস্ত্রেরমুখে তাকে অন্য একটি অটোরিকশায় তুলে নিয়ে যায়।
মিসবাহ সিরাজের স্বজনরা জানিয়েছেন, প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের পর সিলেটে দায়ের করা কয়েকটি মামলার আসামি হয়েছেন মিসবাহ সিরাজ। এ কারণে তিনি নগরীর মিয়া ফাজিল চিশত আবাসিক এলাকার নিজের বাসাতে না থেকে এলাকার অন্য একটি বাসায় থাকতেন। বিষয়টি একমাত্র পরিবারের সদস্য ছাড়া আর কেউ জানতেন না।
শুক্রবার দুপুরের পর তারা আহত হওয়ার খবর পেয়েছেন। তারা জানিয়েছেন, ভোর রাতে নগরীর সুবিদবাজারের পাশ্ববর্তী সাগরদিঘীর পাড় এলাকা থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করা হয়েছে বলে শুনেছেন। তার স্বজনরা দুর্বৃত্তদের হাত থেকে তাকে উদ্ধার করেন। এ সময় দুর্বৃত্তদের চাহিদা মতো টাকাও পরিশোধ করা হয়েছে বলে তারা জেনেছেন। তারা জানিয়েছেন, মিসবাহ সিরাজকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়ার পর রাতেই তার ফোন থেকে স্ত্রী ও সন্তানকে মোবাইল ফোনে ফোন দেয়া হয়। এরপর ওই দুর্বৃত্তদের তথ্য মতে, তাকে নগরীর সাগরদিঘীরপাড় এলাকা থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
সূত্র জানায়, মুক্তিপণ পাওয়ার পর মিসবাহ সিরাজকে রক্তাক্ত অবস্থায় ভোর রাত সাড়ে ৩টার দিকে সাগরদিঘীরপাড় রাস্তায় ছেড়ে দেওয়া হয়। সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে রাগীব বাবেয়া হাসপাতালের একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে নগরীর সোবহানীঘাটস্থ আল হারামাইন হাসপাতালে নিয়ে যান স্বজনরা। ভোররাত ৪টার দিকে তাকে ওই হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রায় দেড় ঘন্টার মতো তার শরীরে অস্ত্রোপচার করা হয়। অস্ত্রোপচারের আগেও পরে তিন ব্যাগ রক্ত দেওয়া হয়। শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে তিনি ওই হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান এবং এভারগ্রীনের একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়।
আল হারামাইন হাসপাতালের পরিচালক ডা. চৌধুরী নাহিয়ান বলেন, ‘ভোররাত ৪টার দিকে মিসবাহ উদ্দিন সিরাজকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। এরপর তার পায়ে অস্ত্রোপচার করা হয়। যদিও স্বজনেরা বলেছেন তিনি দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন।’
ডা. চৌধুরী নাহিয়ান আরো বলেন, মিসবাহ উদ্দিন সিরাজের বাম পায়ে হাটুর নীচে রক্তাক্ত কাটা জখম রয়েছে। অস্ত্রোপচারের পর সকাল ১০টার দিকে তাকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। এরপর তাকে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যান স্বজনেরা।
প্রত্যক্ষদর্শী একটি সূত্র জানিয়েছেন, এভারগ্রীন অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে মিসবাহ উদ্দিন সিরাজকে নিয়ে যাওয়া হয়। অ্যাম্বুলেন্সটির ব্যবস্থা করে দেন হাসপাতালের মার্কেটিং ম্যানেজার পারভেজ।
এ ব্যাপারে এভারগ্রীন এম্বুলেন্স সার্ভিসের ম্যানেজার সুমন আহমদ বলেন, ‘সকালে আল হারামাইন হসপিটাল থেকে ফোন করে একটি অ্যাম্বুলেন্স নেওয়া হয়। তবে, কিছু সময় পর অ্যাম্বুলেন্সটি ফিরে আসে। অ্যাম্বুলেন্সটি কার জন্য নেয়া হয়েছিল- তা তিনি জানেন না।’
এ বিষয়ে সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (মিডিয়া) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘মিসবাহ উদ্দিন সিরাজের বিরুদ্ধে ৭টি মামলা রয়েছে। দুর্বৃত্তরা তাকে অপহরণের পর মুক্তিপণ নিয়ে ছাড়ার বিষয়টি জানতে পেরেছি। ঘটনাটি উর্ধ্বতন কর্তপক্ষ অবগত হয়েছেন। পুরো ঘটনাটি আমরা খতিয়ে দেখছি।’
এ বিষয়ে জানতে মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ ও তার স্ত্রীর মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও বন্ধ পাওয়া যায়।
তবে মিসবাহ উদ্দিন সিরাজের মেয়ে মুনতাহা আহমদ মিসবাহ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘তার বাবার অবস্থা গুরুতর। উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমার বাবা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজি মানুষ। কখনো কারো ক্ষতি করেননি। শুধু বলবো, আমার বাবার অবস্থা গুরুতর।’ সবার কাছে তার বাবার সুস্থতার জন্য দোয়া চেয়েছেন।
এদিকে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট রঞ্জিত সরকার তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘সিলেট নগরীতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজকে অপহরণ করে হত্যার উদ্দেশ্যে কোপানো হয়েছে। তার পায়ের রগ কেটে দিয়েছে স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তির দল। তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্রজনতার আন্দোলনে ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আত্মগোপনে চলে যান। অনেকে বিদেশ পাড়ি জমান। ওই সময় থেকে আত্মগোপনে ছিলেন আওয়ামী লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক পিপি অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ। ইতোমধ্যে তার বিরুদ্ধে সিলেট মহানগরীর বিভিন্ন থানায় ৭টি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন