নিজস্ব প্রতিবেদক,গোয়াইনঘাট:: সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলায় লাইনম্যানদের দৌরাত্ম বৃদ্ধি পেয়েছে।বিশেষ করে উপজেলার সীমান্ত এলাকা গুলোতে লাইনম্যানদের ত্রাসের রাজত্ব চলছে। এই লাইনম্যান নামক চাঁদাবাজরা দৈনিক লাখ লাখ টাকা বাণিজ্য করছে।
এদের যন্ত্রণায় অতিষ্ট সীমান্ত এলাকার শান্তিকামী মানুষজন। উপজেলার পান্তুমাই নতুন ক্যাম্প ও প্রতাপপুর বিজিবি ক্যাম্প দুটাই এক লাইনম্যানের নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু সে নিজে একজন লুটপাটকারী ও বিজিবির দায়ের করা মামলার পালাতক আসামি। অথচ বিজিবির সদস্যরা তাকে গ্রেফতারের বদলে অবৈধ আয়ের হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করছে।
সে হলো উপজেলার পশ্চিম জাফলং ইউনিয়নের মাতুরতল এলাকার জয়নগর গ্রামের বাসিন্দা বিএনপি নেতা আব্দুল কাদিরের ভাতিজা জামাল আহমদ। আব্দুল কাদির পশ্চিম জাফলং ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি হওয়ায় তিনি তার ভাতিজা পলাতক আসমি জামালকে দিয়ে এই চোরাই লাইনগুলো নিয়ন্ত্রণ করাচ্ছেন। অভিযোগে প্রকাশ প্রতি রাতে ওই বিএনপি নেতার বাড়িতে বসে চোরাচালানের আসর।
বিএনপি নেতা আড়াল থেকে ভাতিজাকে সেল্টার দিচ্ছেন। এক কথায় চাচার নেতৃত্বে ভাতিজার চাঁদাবাজি। চোরাই লাইন চালিয়ে চাচা-ভাতিজা আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর উপজেলার পশ্চিম জাফলং ইউনিয়নের সোনারহাট বিজিবি ক্যাম্পে জামালের নেতৃত্বে লুটপাট করা হয়েছিলো। এরপর এ ঘটনায় সোনারহাট বিজিবি ক্যাম্পে হাবিলদার রহিদুল বাদি হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। এই মামলার ৯নং আসামি জামাল। পান্তুমাই নতুন ক্যাম্প ও প্রতাপুর বিজিবি ক্যাম্প এর সদস্যরা তাকে গ্রেফতার না করে উল্টো তাকে রাজা বানিয়ে দিচ্ছেন।
আর এই মামলার অন্যান্য আসামিরা বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। অনেকে আবার জামিনের জন্য আদালতের বারান্দায় সময় পার করছেন। জামালের পিছনে তার চাচা রয়েছেন। যার ফলে এই জামাল বেপরোয়া হয়ে চাঁদাবাজি করছেন। এছাড়া আরেক লাইনম্যান সেলিম সে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে চোরাই লাইন চালিয়ে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছে। এই লাইনম্যান সেলিমের বাড়িতে গিয়ে দাওয়াত খেয়েছেন কাদির। এরপর তিনি এলাকার বিএনপি নেতাদের কাছে বির্তকৃত হয়েছেন।
কাদিরের ভাতিজা পলাতক আসামি জামালের নিয়ন্ত্রণে থাকা পান্তুমাই নতুন ক্যাম্প ও প্রতাপুর বিজিবি ক্যাম্প এলাকা দিয়ে প্রতি হাজার হাজার বস্তা চিনি, চা- পাতা, ফেন্সিডিল ও বিদেশি মদ সহ কসমেটিক পণ্য নিয়ে আসা হয় ভারত থেকে। আর বাংলাদেশ থেকে রসুন ভারতে পাচার করা হচ্ছে। বিনিময়ে জামালকে লাইন হিসবে প্রতিরাতে চোরাকারবারীরা লাখ লাখ টাকা দিয়ে সীমান্ত অতিক্রম করে নিয়ে আসছেন এসব অবৈধ ভারতীয় পণ্য।
জামালের ইশারায় মৃত্যু মখে যাচ্ছে এলাকার অসহায় মানুষগুলো। গত ১৫ অক্টোবর দুপুর সাড়ে ১২ টায় উপজেলার পান্তুমাই সীমান্তের ১২৬৮ নং পিলারের ভারতীয় অভ্যন্তরে এলাকা থেকে এক যুবককে আটক করে নিয়ে যায় বিএসএফ। পরে দুইদিন পর ওই যুবকের মরদেহ হস্তান্তর করে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষাকারি বাহিনী বিএসএফ। নিহত যুবক উপজেলার পশ্চিম পান্তুমাই গ্রামের আব্দুল হক’র পুত্র হোছন আহমদ (৪১)।
এ বিষয়ে নিহতের ভাই ফারুক আহমদ বলেন, আমার ভাই সহ কয়েক জন মঙ্গলবার দুপুরে ১২৬৮ পিলারের পান্তুমাই সীমান্তে এলাকায় গেলে ভারতীয় বিএসএফ দাওয়া করে হোছন আহমদকে আটক করে নিয়ে যায়। ফারুক আরো জানান, পান্তুমাই বিজিবি ক্যাম্পে যোগাযোগ করলে থানায় গিয়ে জিডি করে নিয়ে আসার জন্য বলেন। মঙ্গলবার রাত ৮ টায় গোয়াইনঘাট থানায় গিয়ে এ ব্যপারে একটি জিডি করেছেন বলে জানান তিনি। দুইদিন পর আমার ভাইয়ের মরদেহ বিজিবির মাধ্যমে হস্তান্তর করে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষাকারি বাহিনী বিএসএফ।
স্থানীয়রা জানান, লাইনম্যান জামালের নির্দেশে সীমান্ত এলাকার শ্রমিকরা ভারতে প্রবেশ করে কীট দিয়ে পণ্য সামগ্রী চোরাইপথে দেশে নিয়ে আসে। পরে পণ্যের মালিকরা ওই শ্রমিকদের মজুরি পরিশোধ করেন। গত ১৫ অক্টোবর প্রতিদিনের ন্যায় শ্রমিকরা জামালের ইশারায় ভারতে প্রবেশ করেন। পরে ভারতীয় বিএসএফ ধাওয়া করে এসময় সবাই পালিয়ে গেলেও হোছন আহমদকে আটক করে নিয়ে যায়।
এতকিছুর পরও এই পলাতক আসামি জামালকে রাজার আসনে বসিয়েছে সীমান্ত রক্ষীবাহিনী বিজিবির সদস্যরা। এ নিয়ে স্থানীয় এলাকায় প্রতিবাদের ঝড় শুরু হয়েছে। বিজিবির অবৈধ আয়ের হাতিয়ার জামালকে দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওয়াতায় আনার দাবি জানান স্থানীয় সচেতন মহল।
এ বিষয়ে গোয়াইনঘাট উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিএনপিতে কোন চাঁদাবাজের স্থান নেই। চাঁদাবাজ যেই হোক তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন