জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য ইয়াহিয়া চৌধুরীর বিরুদ্ধে চোরাই গাড়ির ব্যবসা এবং ঢাকায় তারকা হোটেল নির্মাণের নামে কয়েক কোটি টাকা প্রতারণার অভিযোগ সামনে এসেছে। মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে।
এর আগে সোমবার রাতে রাজধানীর উত্তরা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। মঙ্গলবার দুপুরে তাকে সিলেট আদালতে নেয়া হয়। সেখানে শুনানী শেষে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
জানা গেছে, ইয়াহিয়ার বিরুদ্ধে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে একাধিক বিলাস বহুল গাড়ি আমদানির অভিযোগ রয়েছে। মঙ্গলবার সোহেল রানা নামে এক ব্যক্তি কাস্টমস এক্সসাইজ ও ভ্যাট কমিশনারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেছেন, ইয়াহিয়া চৌধুরী ও তার ভাই সোহেল আল-রাজি চৌধুরী প্রতারক ও চোরাই গাড়ির কারবারি। তাদের ব্যবহৃত ল্যান্ডক্রজার (প্রাডো) গাড়ি ঢাকা মেট্রো ঘ ১১-৫২৭০ ও রেঞ্জরোভার ঢাকা মেট্রো ঘ ১১-৮৮১৯। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, ইয়াহিয়া চৌধুরী ও তার ভাই সোহেল আল-রাজি চৌধুরীর ব্যবহৃত গাড়ি দুটির যন্ত্রাংশ হিসেবে আমদানি করে শুল্ক বিহীন চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ছাড়িয়ে আনেন।
বলা হয়েছে, কুড়িল বিশ্বরোডের আশীসের গ্যারেজে নতুন গাড়ির চেসিস নম্বর মুছে ফেলে পুরনো গাড়ির চেসিস নম্বর পাঞ্চ করান। ওই গাড়িটি ২০২১ মডেলের হলেও নম্বর প্লেট ঢাকা মেট্রো ঘ ১১-৫২৭০ অনুযায়ী কাগজ কলমে ১৯৯৮ মডেলের। আবার ঢাকা মেট্রো ঘ ১১-৮৮১৯ রেঞ্জরোভার গাড়িটি ২০১৫ মডেলের হলেও নম্বর প্লেট অনুযায়ী কাগজ কলমে সেটি ১৯৯৮ মডেলের। এর ফলে একই নম্বর প্লেটে দুটি গাড়ি চলছে।
অপরদিকে গত ২৭ জুন ঢাকার উত্তরা পশ্চিম থানায় ইয়াহিয়া চৌধুরী সাতজনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা করেন। মামলায় তিনি তার অংশীদারকে প্রধান বিবাদী করেন। মামলা তিনি উল্লেখ করেন উত্তরা ৩ নম্বর সেক্টর ২ নম্বর সড়কে ১৯ নম্বর হোল্ডিংয়ে চার তারকা মানের বেঙ্গল হোটেল এন্ড ইসপিটিলিটি লি. নামে আবাসিক হোটেলের তার অংশীদার। তবে জিনাত রিজওয়ানা লোকজন নিয়ে তার কাছে চাঁদা দাবি করে তার স্টাফদের মারধর করে আহত করেছেন। অনেক মালামাল লুট করেছেন।
তবে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মনিরুজ্জামান তদন্তে এর কোনো সত্যতা পাননি। বরং উল্টো অভিযোগ পেয়ে তদন্ত শেষে গত ৩১ অক্টোবর ওই মামলার অভিযোগে মিথ্যে মর্মে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন আদালতে। সেখানে মিথ্যে অভিযোগের কারণে ইয়াহিয়ার বিরুদ্ধে ২১১ ধারায় উল্টো অভিযোগ এনেছে পুলিশ।
র্যাব-৯ এর সহকারী পুলিশ সুপার মশিউর রহমান সোহেল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ইয়াহিয়া চৌধুরীর নামে সিলেটের কোতোয়ালি থানায় বিস্ফোরক দ্রব্য ও হত্যা চেষ্টা মামলা রয়েছে। গ্রেপ্তারের পর তাকে কোতোয়ালি মডেল থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সিলেটের কুমারপাড়া পয়েন্টে ছাত্র-জনতার ওপর হামলার অভিযোগ এনে ইয়াহিয়া চৌধুরীর বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের হয়। মামলাটি দায়ের করেন কুমারপাড়ার বাসিন্দা সাবুর আলী সাবু। র্যাব-১ ও র্যাব-৯ এর যৌথ অভিযানে তাকে গ্রেপ্তার করেছে।
উল্লেখ্য, ইয়াহিয়া চৌধুরী ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে সিলেট-২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন