• ১৩ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ২৮শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১১ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

জাফলং সীমান্তে চোরাই পণ্যের বড় চালান আটক : নেপথ্যে যুবদল নেতা কাশেম ও জয়দল

sylhetnewspaper.com
প্রকাশিত নভেম্বর ৭, ২০২৪
জাফলং সীমান্তে চোরাই পণ্যের বড় চালান আটক : নেপথ্যে যুবদল নেতা কাশেম ও জয়দল

নিজস্ব প্রতিবেদক :: গোয়াইনঘাট উপজেলার সীমান্ত এলাকায় থেকে আট কোটি দুই লাখ টাকার ভারতীয় পণ্য জব্দ করেছে বিজিবি। এই চোরাই পণ্যের নেপথ্যের রয়েছেন সিলেট জেলা যুবদলের পদধারী নেতা ননজুরির আবুল কাশেম ও গোয়াইনঘাট থানার জাফলং শান্তি নগরের জয়দল হোসেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট পরবর্তী থানা পুলিশে রদবদলের পাশাপাশি নতুন করে সেটআপ দেওয়া হয়েছে লাইনম্যানদেরও। কিছুদিন বিরতির পর শুরু হয়েছে সিলেটের গোয়াইনঘাট সীমান্তে চোরাচালানের মহোৎসব।

পুলিশের লাইনম্যান সেটআপে জড়িত হয়েছেন সিলেট জেলা যুবদলের পদধারী নেতা আবুল কাশেম ও গোয়াইনঘাট থানার জাফলং মুসলিম নগরের জয়দল হোসেন।
জেলা যুবদলের পদধারী নেতা আবুল কাশেমের নেতৃত্বে থানা ও বিট পুলিশকে ম্যানেজ করে বুঙ্গার (চোরাচালানের) লাইন চালু করেছেন। ফলে তাদেরই শেল্টারে সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলং সীমান্ত দিয়ে কচুরিপনার মত ধেয়ে আসছে ভারতীয় গরু ও চিনির অবৈধ চালান। তারা আড়াল থেকে যাদের দিয়ে চাঁদাবাজি করায় তারা হলেন ননজুরির বাবলা, জাফলংয়ের দায়িত্বে রয়েছে ইউনিয়ন বিএনপির কোষাধ্যক্ষ আব্দুর রাজ্জাক।
গেলো সেপ্টেম্বর মাসে সিলেট রেঞ্জপুলিশের ডিআইজি সকল জেলার এসপি ও ওসিদের চোরাচালান প্রতিরোধে কঠিন ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেন। জেলা পুলিশ ম্যাজিষ্ট্যাটি মিটিং ও চোরাচালান বিরোধী ট্যাক্সফোর্সের মিটিংয়ে চোরাচালান প্রতিরোধে করোনীয় সম্পর্কে আলোচনাও করা হয়।
সিলেট জেলা বিএনপিও চোরাচালানের জড়িত এমন কয়েকজনকে দল থেকে বহিষ্কার করে। কিন্ত সিলেটের সীমান্ত উপজেলা গুলোর কতিপয় পাতি নেতা সরাসরি জড়িয়ে পড়েছেন চিনি ও গরু চোরাচালান ব্যবসায়।
গোয়াইনঘাট সীমান্তে চোরাচালান ব্যবসায় পুলিশের লাইনম্যান হয়ে চোরাচালানে জড়িয়ে পড়েছেন সিলেট জেলা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক উপর্যুক্ত আবুল কাশেম, গোয়াইনঘাট উপজেলা যুবদল নেতা উপরোক্ত জয়দল হোসেন।
তারা নিজেদেরকে ছাত্র আন্দোলন সমন্বয়কদের ঘনিষ্ট বলে থানা পুলিশ-গোয়েন্দাসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীকে ম্যানেজ করে চোরাচালানে বন্যার সৃষ্টি করে চলেছেন।
তাদের নেতৃত্বে ও তত্বাবধানে প্রতিদিন ভারতের সীমান্তের ওপার থেকে হাজার হাজার চোরাই চিনির বস্তা এনে সীমান্ত এলাকায় রাখা হয়। পরে সময় সুযোগ করে সেই চিনি তাদের নিজেদের গোদামে স্টক করে এবং পরে হরিপুর সহ বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে সিলেট শহর এবং অন্যান্য স্থানে পাচার করা হয়।
সম্প্রতি সিলেট শহর ও শহরতলী এলাকায় যে সব চোরাই মাল ধরা পড়েছে, সবগুলোর সাথে কাশেম ও জয়দল জড়িত বলে অভিযোগে প্রকাশ।
সম্প্রতি সিলেট জেলা যুবদল নেতা আবুল কাশেমের সাথে জাফলংয়ে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। পরে বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনের হস্থক্ষেপে নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। এই কাশেমের খুঁটির জোর কোথায়?

এদিকে মঙ্গলবার উপজেলার সীমান্তবর্তী রাধানগর এলাকা থেকে টাস্কফোর্সের অভিযানে এসব চোরাই মালামাল জব্দ করা হয়। এটিই সবচেয়ে বড় চোরাচালান বলে জানিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সংশ্লিষ্টরা।

বিজিবি জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সিলেট বিজিবি ৪৮ ব্যাটালিয়ন উপ-অধিনায়ক, ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশের সমন্বয়ে টাস্কফোর্স অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানে দুই হাজার ৯০৭ পিস ভারতীয় শাড়ি, কাশ্মীরি শাল এক হাজার ১৬২ পিস, থ্রি পিস ৪১৩টি, বিভিন্ন প্রকার থান কাপড় ১২ হাজার ৪৩৫ মিটার, ব্লেজারের থান কাপড় এক হাজার ১৬০ মিটার, মকমলের সোফার কভার এক হাজার ৫৫৬ মিটার, বিভিন্ন ধরনের ক্রিম ৪৪ হাজার ৭২২ পিস, পন্ডস ফেসওয়াশ এক হাজার ৬৬৯ পিস, জনসন বেবি লোশন ৬১২ পিস, ব্রিকস চকলেট দুই লাখ ৬২ হাজার ৯৯০ পিস, ই-ক্যাপ ট্যাবলেট এক হাজার ২৬০ পিস এবং অন্যান্য ভারতীয় পণ্য জব্দ করা হয়েছে।

সিলেট ব্যাটালিয়ন (৪৮ বিজিবি) এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. হাফিজুর রহমান বলেন, চোরাচালান প্রতিরোধে বিজিবির অভিযানিক কার্যক্রম ও গোয়েন্দা তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় সীমান্তবর্তী এলাকার অভিযান যৌথভাবে পরিচালনা করে ভারত থেকে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আনা চোরাই মালামাল জব্দ করা হয়। জব্দ মালামালগুলোর বিষয়ে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু মূলহোতা কাশেম ও জয়দল ধরাছোঁয়ার বাইরে। এদের বিরুদ্ধে কোন মামলা হয়নি।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন