৭৫ বয়সী গোলতাজ বেগম থাকেন চট্টগ্রাম নগরের খাজা রোডে। আজ বেলা সাড়ে ১১টায় তিনি জামালখানে টিসিবির লাইনে দাঁড়ান। পণ্য পেয়েছেন বেলা দুইটার দিকে।
ভাঙা গলায় প্রথম আলোকে গোলতাজ জানান, তাঁর স্বামী অসুস্থ। ছেলেও বেকার। কোনোরকমে টেনেটুনে সংসার চলছে। দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে পণ্য পেলেন। তাই ক্লান্ত। পরিবারের অবস্থা বর্ণনা করে তিনি বলেন, স্বামী ঘর-বসা। বেশ কিছুদিন ধরে কাজে যেতে পারছেন না। আয় নেই। মেয়ের এক জোড়া স্বর্ণের কানের দুল বন্ধক রেখে কিছু টাকা পেয়েছেন। সেই টাকা দিয়ে বাজার খরচ চলছে। সেখান থেকে কিছু টাকা নিয়ে টিসিবির পণ্য কিনলেন।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে চট্টগ্রামের জামালখান মোড়ে গোলতাজ বেগমের সঙ্গে কথা হয়। এই মোড়ে তাঁর মতো টিসিবির ট্রাকের সামনে পণ্য কেনার জন্য দাঁড়ান প্রায় চার শ মানুষ। এর মধ্যে সাড়ে তিন শ মানুষ পণ্য পেয়েছেন। লাইনে দাঁড়ানো লোকজনের মধ্যে নানা বয়সের ও শ্রেণি–পেশার মানুষজন ছিলেন। তাঁদেরই একজন মোহাম্মদ মুছা। পেশায় রিকশাচালক। দীর্ঘদিন ধরে ভুগছেন শ্বাসকষ্টে।
কথা বলতে চাইলে মোহাম্মদ মুছা বলেন, প্রতিদিন তিন থেকে চারবার ইনহেলার টানতে হয় তাঁকে, খেতে হয় উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিসের ওষুধ। পঞ্চাশোর্ধ্ব রোগা-পাতলা গড়নের এই রিকশাচালক সংসারের খরচ চালাতে গিয়ে কাটছাঁট করেছেন ওষুধের খরচে। বললেন, ‘অনেক কষ্ট করে চলছি। শরীর কুলায় না। আয়রোজগার কম। ওষুধ কিনব কী করে জানি না।’
লাইনে দাঁড়িয়ে অন্যদের মতো ৪৭০ টাকায় ৫ কেজি চাল, ২ লিটার তেল ও ২ কেজি মসুর ডাল কেনেন মোহাম্মদ মুছা। এরপর চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় যা বলেছেন, তা তরজমা করলে দাঁড়ায়, রিকশা চালিয়ে কোনো দিন ৪০০, কোনো দিন ৫০০ টাকা আয় হয় তাঁর। কোনো দিন ২০০ টাকাও তুলতে পারেন না। বছর দশেক আগে গাছ থেকে পড়ে পা ভেঙেছেন। এর পর থেকে সোজা হয়ে হাঁটতে পারেন না। ফলে দীর্ঘক্ষণ রিকশা চালানোর শক্তি নেই। কিন্তু প্রতিদিন ১৮০ টাকার ওষুধ লাগে।
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন