বিশেষ প্রতিবেদকঃঃ ঘুষ দূর্নীতির মুকুটহীন সম্রাট শাল্লা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুস সালাম।তার বিরুদ্ধে সরকারি বরাদ্ধের টাকা নানা অজুহাতে মিথ্য ভাউচার দিয়ে আত্বসাত করার অভিযোগ উঠেছে।
শুধু তাই নয়,ঘুষ দুর্নীতি, বদলি বাণিজ্যসহ নারী শিক্ষকদের নানা হয়রানি,অনিয়ম, অস্বদ আচরনের অভিযোগ করেছেন উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষকরা। গোটা উপজেলার শিক্ষা ব্যাবস্থা নাজুক চিত্র ও নানা অসংগতি থাকার পরও যোগদানের পর থেকে এদিকে ভ্রুকেপ নেই এই গুণধর কর্মকর্তার।
এ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে শাল্লা উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষাকে ধংসের হাত থেকে রক্ষা করতে, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, বিভাগীয় ও জেলা কর্মকর্তাদের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন স্থানীয় সচেতন মহল। সুত্র মতে, প্রতি বছর ক্ষুদ্র মেরামতের টাকা থেকে লাখে বিশ হাজার টাকা করে প্রায় ১ ০৭ টি বিদ্যালয় হতে ২০ লাখ টাকা উৎকোচ গ্রহণ করেন তিনি। এ ছাড়া তিনি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতার গোল্ড কাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের ইউনিয়নভিত্তিক বরাদ্দের ৫০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
এছাড়া স্লিপ ও ওয়াশব্লক থেকে ৫ হাজার টাকা করে ঘুষ নেন। চাহিদামতো যারা টাকা দেন, তাদের প্রত্যয়ন ও চেক প্রদান করেন। সুত্র জানায়, তিনি হাওর ভাতার জন্য শিক্ষক প্রতি এক হাজার ২শ’ টাকা করে উপজেলার পাঁচ শতাধিক শিক্ষকের কাছ থেকে প্রায় ৭ লাখ টাকা নিয়েছেন। সুত্র জানায়, ২০২৩ সালের ১৪ সেপ্টম্বর উপজেলার আগুয়াই সপ্রাবির শিক্ষিকা অঞ্জলি রাণী দাস অসুস্থ হয়ে পড়েন। এই অসুস্থতার সুযোগে তিনি ঐই শিক্ষিকার বেতনসহ দুর্গা পূজার বোনাস বন্ধ করে দেন। পতে অঞ্জলি রাণীর বেতন ও বোনাস তুলতে ২৮ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয়েছে শিক্ষা অফিসারকে। এ সময় অঞ্জলি রাণী দাস তার মোবাইল ফোনে এসব রেকর্ড করে রাখেন। কিন্তু ২৮ হাজার টাকা ঘুষ দেওয়ার পরও তার বেতন আটকে রাখা হয়। পরে ওই শিক্ষিকার স্বামী তন্ময় দেব ২০২৩ সালের ৩১ অক্টোবর তৎকালীন ইউএনও মো. আবু তালেবের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দেন। পরে ঘুষ গ্রহণের ঘটনা প্রমাণিত হওয়ায় ২৮ হাজার টাকা ফেরত দেন এই কর্মকর্তা।
শিক্ষা অফিসের এক কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,স্যার শিক্ষকদের বদলিতে একেক জনের কাছ থেকে ২/৩ লাখ কইরা টাকা নেয়। এক দপ্তরির চাকুরিতে প্যাঁচ লাগাইয়া ৩ লাখ টাকা খাইছে। ভুক্তভোগী এক শিক্ষক বলেন, ‘বদলির পূর্বে শিক্ষা অফিসারকে দিয়েছি ৫০ হাজার টাকা, যোগদানের সময় দিয়েছি ২৫ হাজার টাকা। পরে আরও ১৮ হাজার টাকা দিতে হয়েছে। ক্ষুদ্র মেরামত কাজে লাখে ২০-২৫হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয়। স্লিপেও টেন পার্সেন্ট দিতে হয়। হাওর ভাতা পেতেও প্রত্যেক শিক্ষকের নিকট থেকে ১২শ’ টাকা নিয়েছেন তিনি। এছাড়া ৩ বছর পরপর শান্তি বিনোদন ভাতা দেয় সরকার। সেই ভাতা থেকেও ৫শ’ টাকা দিতে হয়। টাইমস্কেলও টাকা দিতে হয় এই শিক্ষা অফিসারকে। এদিকে গত ১১ জুলাই শাল্লা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুস সালামের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ করেন শাল্লা উপজেলার সাংবাদিকরা। গত ২০ অক্টোবর উপজেলার ৭টি বিদ্যালয়ের পুরানো ভবনের নিলামের তথ্য চেয়ে আবেদন করেন সাংবাদিকরা । এর পর থেকে স্থানীয় সাংবাদিকদের নানা ভয়ভীতি প্রদর্শন ও প্রাণনাশের হুমকি দেন তিনি।
সাংবাদিকদের প্রাণনাশের হুমকির ঘটনায় থানায় জিডি করেছেন স্থানীয় সাংবাদিক আমীর হুসেন যার নং-৭৭৭ তাং২৪/১০/২৪ । এরই ধারাবাহিকতায় তদন্তে নেমেছে সুনামগঞ্জ জেলা শিক্ষা অফিস।
এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার জানান, এই শিক্ষা কর্মকর্তার বিরোদ্ধে কিছু অভিযোগ পেয়েছি, তবে বিষয়গুলো তদন্ত চলছে।
এ ব্যাপারে বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো জালাল উদ্দীন জানান, অভিযোগের বিষয় গুলো আমার নজরে এসেছে। তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ ব্যাপারে শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুস সালামের মুঠোফোনে একাধিক কল দেওয়া হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন