অল্প টাকায় বিরোধপূর্ণ জমি বায়নানামা করে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে খদ্দের এনে অধিক লাভে বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা অবৈধভাবে আয় করার অভিযোগ খোদ কক্সবাজারের আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকা সর্বোচ্চ দুই ব্যাক্তির বিরুদ্ধে।
পর্যটন বিকাশের জন্য কক্সবাজারে হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট তৈরি করার জন্য জমি ক্রয়-বিক্রয়ের মাধ্যমে কাজ শুরু করেছে দেশের বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো। আর এই জমি ক্রয়-বিক্রয়ের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দালাল নিয়োগের মাধ্যমে সিন্ডিকেট তৈরী করে রমরমা জমির বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন কক্সবাজারের দুই পুলিশ সুপার।জানা গেছে, কক্সবাজার শহর, উখিয়ার ইনানী ও টেকনাফের সাবরাং সহ মেরিন ড্রাইভের বিভিন্ন পয়েন্টে দালাল নুরুল ইসলাম, ঠিকাদার জালাল উদ্দিন ও মোঃ মুরাদ হোসেন সোহাগের মাধ্যমে আকন হলিডে এন্ড ট্যাুরিজম কনসালটেন্সী লিমিটেড কোম্পানি ও বিভিন্ন জনের নামে জমি বায়নানামা করেন কক্সবাজারের দুই পুলিশ সুপার মোঃ রফিকুল ইসলাম ও মোঃ মাহফুজুল ইসলাম। এরপর দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে জমি ক্রয়ের খদ্দের ঠিক করে দালালদের মাধ্যমে অতিরিক্ত লাভে বিক্রি করেন দুই এসপিসহ এই সিন্ডিকেট।
একটি বিশেষ সূত্র জানায়, বিরোধপূর্ণ জমি ও এক চকে অধিক জমি ক্রয় করেন পুলিশের এই সিন্ডিকেট। জমি ক্রয় ও বায়নানামা করতে বিনিয়োগ করেন সিন্ডিকেটের সবাই। জমি বিক্রির পর বিনিয়োগের পরিমাণ অনুযায়ী যার যার লভ্যাংশের টাকা ভাগ করেন পুলিশের এই সিন্ডিকেট। কমদামে বিরোধপূর্ণ জমি ক্রয় করে পুলিশের বল প্রয়োগের মাধ্যমে জমি দখলে নেন তারা। এরপর খদ্দেরের কাছে বিক্রি করা হয় চড়া দামে। এভাবে একের পর জমি কেনা বেচার মাধ্যমে এসপির এই সিন্ডিকেট কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য করছেন বলে জানিয়েছেন এই সূত্র।
যদিও বিধিমালার ১৭ নম্বর ধারায় বলা আছে, কোনো সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী সরকারের অনুমোদন ছাড়া, সরকারি কাজ ছাড়া অন্য কোনো ব্যবসায় জড়িত হতে পারবেন না। অন্য কোনো চাকরি বা কাজ গ্রহণ করতে পারবেন না। পরিবারের সদস্য অর্থাৎ স্ত্রী–সন্তানও ব্যবসা করতে পারবেন না। সরকারের অনুমোদন ছাড়া বিভিন্ন ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা ১৯৭৯–এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, কক্সবাজার শহরের কলাতলী সুইট সাদাফের সামনে প্রায় ৪২ শতক বিরোধপূর্ণ জমি ক্রয় করেন পুলিশের এই সিন্ডিকেট। পুলিশের প্রভাব খাটিয়ে দেয়াল নির্মাণের মাধ্যমে ঘেরাও করে এই জমিগুলো এসপির এক খদ্দেরকে বিক্রি করা হয় চড়া দামে। চন্দ্রিমা এলাকায় সিআইপি ইদ্রিসের কাছ থেকে ১ একর ৫০ শতক জমি ও সার্ভেয়ার আব্দুল হাকিমের কাছ থেকে ৪০ শতক বিরোধ পূর্ণ জমি ক্রয় করেন এই এসপির এই সিন্ডিকেট।
এছাড়া উখিয়া উপজেলার ইনানী শফির বিল এলাকার মোহাম্মদ হোছাইনের ১৩ শতক রেজিস্ট্রার আমমোক্তার নেওয়া জমি, মোঃ নেজাম উদ্দিনের ১ একর রেজিস্টার আমমোক্তার নেওয়া জমি, মমতাজ বেগম ও অন্য দুইজনের ৪ একর ১০ শতক জমি, রশিদ আহমদ, মোঃ নেজাম উদ্দিন ও লাইলা বেগমের ৩ একর ৪০ শতক জমি আকন হলিডে এন্ড ট্যাুরিজম কনসালটেন্সী লিমিটেড কোম্পানির মোঃ মুরাদ হোসেন সোহাগের নামে ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে অনুমতির জন্য আবেদন করেন এসপির এই সিন্ডিকেট।
শুধু তাই নয় টেকনাফ পৌরসভার নতুন পল্লন পাড়া ধুমপারবিল এলাকার বশির আহমদের সাবরাং মৌজার ৫৫ শতক জমি, ঢাকা বনানী এলাকার শামস আব্দুল্লাহ মোহাইসিনের সাবরাং মৌজার ৮৮ শতক জমি, ঢাকা বারিধারা এলাকার সৈয়দ গাউসুল আজম ও ধানমন্ডি এলাকার মোঃ মাহবুবুর রহমানের ৩ একর জমি ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে অনুমতির জন্য আবেদন করেন এসপির এই সিন্ডিকেট। এবং টেকনাফ উপজেলারর লেঙ্গুর বিল এলাকার মোঃ হাসানের কাছ থেকে সাবরাং মৌজার ১৫৫৬ নং দলিল মূলে ১ একর ১৮ শতক জমি ও মোঃ ইসমাইলের কাছ থেকে ১৫৫৭ নং দলিল মূলে ৫৫ শতক জমি জাকির হোসেনসহ ৭ জনের কাছে বিক্রি করেন এসপির সিন্ডিকেট।
যদিও এসপির সাথে জমি ক্রয়-বিক্রয়ের সিন্ডিকেটের কথা অস্বীকার করেন দালাল নুরুল ইসলাম। ঠিকাদার জালাল উদ্দিনের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে ফোনে সংযোগ না পাওয়ায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।অভিযোগের বিষয়ে কক্সবাজারের সদ্য পদোন্নতি প্রাপ্ত পুলিশ সুপার মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, জমি ক্রয় বিক্রয়ের বিষয়টি সত্যি নয়। টেকনাফে আমরা পুলিশ কল্যান ট্রাস্টের নামে দুইটি জমি বায়না নামা করেছিলাম। সেই জমি ট্রাস্টের পছন্দ না হওয়ায় আমরা একটি গ্রুপের কাছে বিক্রি করে দিই। এছাড়া অন্য কোন জমি আমরা ক্রয় বিক্রয় করিনি বলে জানান তিনি।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মোঃ মাহফুজুল ইসলাম বলেন টেকনাফে পুলিশ কল্যান ট্রাস্টের নামে দুইটি জমি বায়নানামা করা ছিল। সেই জমি ট্রাস্টের পছন্দ না হওয়ায় একজনের মাধ্যমে বিক্রি করে টাকা ট্রাস্টে জমা দেওয়ার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এছাড়া অন্য কোন জমি ক্রয় বিক্রয়ের বিষয়ে আমার জানা নেই। কেউ জমি ক্রয় বিক্রয়ে আমাদের নাম ব্যাবহার করলে এর দায়ভার আমার নয়। তাছাড়া এক ঠিকাদারের বিরুদ্ধে পুলিশের নাম ব্যাবহার করার অভিযোগ পেয়ে তাকে পুলিশ সুপার কার্যালয়ে ঢুকতে দেওয়া হয় না। কেউ যদি পুলিশের নামে অপকর্ম করে তার বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন