শুধু সিলেট সীমান্তের চোরচালান ব্যবসার সাথে জড়িয়ে যে কয়জন পুলিশ কর্মকর্তা শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন।
তাদের বিরুদ্ধে কেউ কোন কথাই বলছেনা। কোটিপতি তালিকায় যে সকল ওসিরা আছেন তাদের মধ্যে গোয়াইনঘাট থানার সদ্য বিদায়ী ওসি রফিকুল ইসলাম শ্রাবন, ঐ থানার সাবেক ওসি নজরুল ইসলাম,একই থানার সাবেক ওসি আব্দুল জলিল।
এই তালিকায় সবার শীর্ষে অবস্থান করছেন জৈন্তপুর থানার বর্তমান ওসি তাজুল ইসলাম (পিপিএম)। কারণ তাজুল ইসলামের খোঁটির জোর নাকি অনেক শক্ত। ওসি তাজুল ইসলাম জৈন্তাপুর দায়িত্ব পালন থেকে এখন পর্যন্ত তিনি প্রতিমাসে ২ কোটি টাকা চোরাচালান থেকে আদায় করেন। থানার একাধিক পুলিশ সদস্য নাম প্রকাশ না করাশর্তে জানান, চোরাকাবারীদের বেশ কয়েকজনকে নিয়ে ওসি প্রায় গভির রাতে বৈঠকে বসে প্রতিদিনের হিসাব নিতেন। অপর দিকে বিভিন্ন কারণে গোয়াইনঘাট থানার পরপর তিনিজন ওসিরা রদবল হলে এখনো বহাল তবিয়তে আছেন জৈন্তাপুর থানার ওসি তাজুল ইসলাম (পিপিএম)।
সিলেট জেলায় এখন পর্যন্ত তিনজন এসএমসপি রদবদল হয়েছেন। কিন্তু কোন এমপিই তাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে কোন রকম ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেননি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে সিলেটের সদ্য বিদায়ী ডিআইজি শাহ মিজান শাফিউর রহমান নিজে একাধিবার ওসি তাজুলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গিয়ে ব্যার্থ হয়েছেন। কারণ তাজুলের উপরে ছিলো বিদায়ী হওয়া তিনজন এসএমপির আর্শিবাদ। এবং রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে ওসি তাজুল এখনো জৈন্তাপুরে রয়েছেন বহাল। তাই তাকে বদলীর কথা উঠলে এসপিরা বেকে বসতেন ডিআইজির সাথে।।
ফলে ডিআইজি নিজেই হয়েছেন ব্যার্থ। আর আগে বিভিন্ন পত্রিকায় সীমান্তের চোরাচালান ওসিদের নিয়ন্ত্রনে শিরোনামে আমাদের একাধিক সংবাদ প্রকাশ হলে ডিআইজি অফিসে তদন্তটিম গঠন করা হয়। কিন্তু কোন তদন্ত রির্পোট আর আলোর মুখ দেখেনি।
সর্বশেষ গতকাল সোমবার গোয়াইনঘাট থানা পুলিশের হাতে চোরাই গরু বোঝাই তিনটি পিকাপ ধরিয়েদেন স্থানীয় জনতা। সীমান্ত পথে আসা এসব গরু স্থানীয় হাদারপার ও জৈন্তাপুর উপজেলার হরিপুরে আসা মাত্র বৈধতা পেয়ে যায়। এ দুটি বাজার থেকে চোরাই গরুর বৈধ লাইসেন্স দেওয়া হয়। যাকে বাজারের ভাষায় (চিট বা রশিদ) বলা হয়। স্থানীয় সাংবাদিকদের ভাষ্যমতে পুলিশের হাতে আটককৃত গরুগুলোর মালিক ছিলেন গোয়াইন উপজেলার হাদারপার কুনকিরিকান্দি গ্রামের বাসিন্ধা মৃত আছব আলী মেম্বারের ছেলে লিয়াকত আলী আজাদ।
তিনি এখন ঢাকা মুগদাপাড়া, রেলগেইট সংলগ্ন এলাকায় বসবাস করেন। তবে তিনি স্থানীয় এক সাংবাদিকে হুমকি দিয়ে বলেন, তিনি সিলেটের দক্ষিণ সুরমা এলাকায় বসবাস করেন। ঐ সাংবাদিককে সিলেট আসলে দেখিয়ে দিবেন তার ক্ষমতা। গরু আটকের বিষয়টি ফেইসবুকে পোষ্ট করেন ঐ সাংবাদিক।
ফোনে সেই সাংবাদিককে হত্যাসহ নানা রকম অশ্লিল ভাষায় গালিগালাজ করেন। লিয়াকত হুমকি দিয়ে ঐ সাংবাদিককে বলেন, থানার সাবেক ওসি, উপজেলার ইউএনও শুধু সীমান্তের চোরাকারবারীদের কাছ থেকে শত-শতকোটি টাকার মালিক হয়েছেন। তাদের ব্যাংক একাউন্ট দেখলে সত্যতা পাবেন।
প্রশ্ন আসে তবে কি গোয়ায়াইন থানার নবাগত ওসি নিজেও পুরাতন ওসির দেখানো পথে হাটছেন। এ ঘটনায় নিজের নিরাপত্তা চেয়ে ঐ সাংবাদিক গোয়াইনঘাট থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন। থানার সাধারণ ডায়েরি নং-৭০৫ তাং ২৭/৮/২০২৪ ইং।
এ বিষয়ে লিয়াকত আলীর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমাদের হাদারপার বাজারের কিছু অংশ সরকারি ইজারাধীন এবং কিছু অংশ ওয়াকষ্ট্রেটের মালিকানাধিন। আমি সেই ওয়াকফষ্ট্রেট এর মোতায়াল্লী মাত্র। যে কোন স্থান থেকে বাজারে গরু আসলে আমরা দুটি রশিদ দিয়ে থাকি। একটি উপজেলার নির্বাহী অফিসারের লিজ দেওয়া অংশের, অপরটি ওয়াকষ্ট্রেটের।
তিনি আরো বলেন, গোয়াইনঘাট থানার সাবেক ওসি রফিকুল ইসলাম শ্রাবন দায়িত্বে থাকাকালে তার লাইনম্যান নুরুল, কামাল মেম্বারের মাধ্যমে চোরাকারবারিদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। এসব ওসিদের সময় দিনে-রাতে ভারত থেকে চোরাই পথে হাজার-হাজার গরু, মহিষ, চিনি সহ বিভিন্ন পন্য বাংলাদেশে প্রবেশ করতো। শুধু চোরাচালান থেকে ওসি রফিক শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন তিনি স্পষ্ট বক্তব্য দেন।
অপর দিকে আজ মঙ্গলবার দুপরে জৈন্তাপুর উপজেলার হরিপুর থেকে ছেড়ে আসা তিনটি পাথর বুঝাই ট্রাক তল্লাসী করে শাহপরাণ সুরমা গেইট ফাঁড়ি ইনচার্জ এসআই আজিজ দুইটি চিনি বুঝাই ট্রাক আটক করেন। এসময় দুইজন ট্রাক চালকদের আটক করতে সক্ষম হন।
আওয়ামী লীগ সরকারের পট পরিবর্তনের সাথে-সাথে স্থানীয় চোরাকারবারিরা আরো ব্যাপরোয়া হয়ে উঠেছে। রাস্তায় পুলিশী টহল জোরদার না থাকায় সেই সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে এসব চোরাকারবারিরা। প্রায় প্রতিরাতে গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুর সীমান্ত থেকে কয়েক কোটি টাকার চোরাইপন্য সারাদেশ পাচার করা হচ্ছে।খবর দৈনিক সকালের সময়।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জনা যায়, গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুর থানায় যে সকল ওসিরা কর্মরত থাকেন তাদের নিয়োগকৃত লাইনম্যানের হাতে টাকা দিলেই সকল বে-আইনী সব কাজ আইনশিদ্ধ হয়ে যায়। জেলার গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুর সিমান্তে প্রতিদিন প্রায় কোটি টাকারা অবৈধ লেনদেন হয় আইনশৃংখলা বাহিনীর নামে। চোরাকারবারিদের কাছ থেকে সেই টাকা আদায় করেন ওসিদের নিয়োগকৃত লাইনম্যানরা।
স্থানীয় বিজিবি, থানা পুলিশ, জেলা ডিবি পুলিশ প্রত্যক্ষ ভাবে চোরাচালানের সাথে জড়িত। থানার ওসি সামনে দিয়ে ভারত থেকে নিয়ে আসা চোরাইপণ্যবাহি গাড়ি গেলেও তাদের আটক করার ক্ষমতা নেই ওসি-বা দারোগাদের। কারণ সীমান্তের লাইনম্যানের হাতে ওসির নামে টাকা নিয়ে গেছে তাদের নিয়োগকৃত লোক।
তাইতো দিনে রাতে আইনশৃংখলা বাহিনীর চোখের সামন দিয়ে অনাসেই প্রবেশ করছে ভারতীয় চোরাচালানের পণ্যবাহী গাড়ীর সারি। জেলার পুলিশ সুপার কিংবা রেঞ্জ ডিআইজির ভুমিকা নিয়ে বারবার উঠেছে নানা প্রশ্ন। কে শুনে কার কথা। এই দুই থানার ওসিদের বিরুদ্ধে বা চোরাচালান নিয়ে কথা বললেই ওসিরা নিজের দূষ আড়াল করতে বিভিন্ন ব্যক্তির নামে মিথ্যা নাটক মঞ্চস্থ করে প্রতিবাদকারীকে ফাঁসিয়ে দিতেন মামলায়।
বিশেষ করে সিলেটের জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ থানার সীমান্ত চোরাকারবারীদের স্বর্গরাজ্যে হয়ে উঠেছে। সরকার বদল হলেও এসব ওসিরা ঠিকই তাদের বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন। এসব চোরাই ব্যবসার সাথে সরাসরি জড়িত সিলেট জেলা ডিবি পুলিশের (উত্তর) জোনের ওসি ইকবাল হোসেন। জৈন্তাপুর থানা পুলিশের ওসি মোঃ তাজুল ইসলাম পিপিএমের লাইনম্যান উপজেলার বাসিন্ধা মৃত ফরিদ মিয়া ওরফে গুইল্লা ফরিদ’র ছেলে মোঃ মুজিবুর রহমান মুজিব। গোয়াইনঘাট উপজেলার সীমান্তে বিজিবি’র লাইনম্যান দুলাল। সে ঢালারপার এলাকার মৃত ইদ্রিস প্রকাশ মন্ত্রির ছেলে।
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন