• ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১৯শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

জাফলং ধ্বংসকারী মন্ত্রীর লোকগুলো এখন কোথায়?

sylhetnewspaper.com
প্রকাশিত আগস্ট ২০, ২০২৪
জাফলং ধ্বংসকারী মন্ত্রীর লোকগুলো এখন কোথায়?

সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলং পর্যটন (ইসিও) এলাকা থেকে দীর্ঘ কয়েক বছর থেকে প্রতিদিন প্রায় অর্ধকোটি টাকার বালু-পাথর লুট-পাটকারী সাবেক মন্ত্রী ইমরান আহমদের ঘনিষ্ট্যজন হিসাবে পরিচিত জামাই সুমন, আলীম উদ্দিন, বিশ্বনাথী ফয়জুল, সমেদ, আলা উদ্দিন উরফে ছাতকী আলাই এখন কোথায়? সরকার বদলের সাথে-সাথে তারা গা ডাকা দিয়ে আত্মগোপনে গেলেও জাফলংয়ে চলছে এখনোও তাদের রাম-রাজত্ব। এই সিন্ডিকেটের সদস্যরাই সমগ্র জাফলং এলাকায় নিজেরাই আইন তৈরী করে নিজেদের মতো চালিয়েছে লুটপাট। থানা ওসি-বা ইউএনও ছিলেন তিনি এই চক্রের বাহিওে গিয়ে কথা বলার সাহস ছিলোনা। কারণ মন্ত্রী ইমরান নিজেই থানার ওসি-ইউএনও’র সাথে তার চক্রের সদস্যদের মিটমাট করিয়ে দিতেন বলে জনশ্রুতি রয়েছে। এক সময় এই জাফলং এলাকার ত্রাস হিসাবে পরিচিত জৈন্তাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি টেনাইর পুত্র লিয়াতক আলী এমপি ইমরানের প্রতিনিধি হিসাবে জাফলং এলাকার সকল অবৈধ কার্যক্রম পরিচালনা করতেন। কিন্তু হঠাৎ করে মন্ত্রী ইমরানের কাছে লোক হয়ে উঠে জাফলং এলাকার লেবু চেয়ারম্যানের পরিবাওে সদস্যরা। ফলে লিয়াকত যুগের অবসান হলে ক্ষমতার চাবি চলে যায় লেবু চেয়ারমানের ভাই কলেজ শিক্ষক ফয়জুল ইসলামের হাতে। তিনি হয়ে উঠেন মন্ত্রী ইমরানের প্রতিনিধি। তাদের ভাতিজী জামাই হচ্ছেন জাফলং এলাকার আলোচিত জামাই সুমন। ফলে সরকার দলীয় সকল ক্ষমতা চলে যায়, ফয়জুলের ভাই, সামছু উরফে কালা সামছু, জামাই সুমনের হাতে। তারা গড়ে তুলে মন্ত্রী ইমরানের নামে একটি নিজস্ব সিন্ডিকেট।
যদিও জেলা প্রশাসক থেকে শুরু করে এডিসি রেভিনিউ, স্থানীয় এসিল্যান্ড সকলেই গণমাধ্যমে বলেতেন জাফলং (ইসিও) এলাকায় কোন বালু মহাল-ই নেই। কোনদিনই ডিসি অফিস থেকে কোন প্রকার ইজারা দেওয়া হয়নি। কিন্তু সেখানে সাবেক মন্ত্রীর লোক পরিচয়ে ট্রাক শ্রমিকনেতা চক্রটি দীর্ঘ একযুগ খাবলে খেয়েছেন পুরো জাফলংকে। ধ্বংশ করে দিয়েছে পুরো পর্যটন এলাকা।
সিলেট ৪-আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও সরকারের সাবেক মন্ত্রী ইমরান আহমদের লোক পরিচয়ে জাফলংয়ে অবৈধ বালুখেঁেকা সিন্ডিকেটের গডফাদার ছিলো জাফলং নয়াবস্তির বর্তমান বাসিন্ধা এক সময়ের বিস্কুট কোম্পানীর সেলসম্যান ইমরান হোসেন সুমন উরফে জামাই সুমন। এই সুমন আওয়ামী লীগের উপধর্ম বিষয়ক কমিটির সদস্য। সেই দলীয় এই পদটি নিয়েছিলো মন্ত্রী ইমরানের মাধ্যমে। ধর্ম বিষয়ক উপকমিটির সদস্য হয়ে চালিয়ে গেছে জাফলং ধ্বংসের তান্ডবলিলা। তার সহযোগী হিসাবে ছিলো নয়াবস্তির মুক্তিযোদ্ধা ইনছান আলীর ছেলে আলিম উদ্দিন। বিশ্বনাথের ফয়জুল ইসলাম উরফে বিশ্বনাথী ফয়জুল। ছাতকের আলাউদ্দিন আলাই, ট্রাক শ্রমিক নেতা সমেদ। সরকারি কোন রকম অনুমোদন বা ইজারা ছাড়াই প্রকাশ্য অবৈধ বালু-পাথর হাজার কোটি টাকার বালু-পাথর লুটপাট কওে নিয়েছে। যা গত কয়েকদিন আগেও অব্যাহত ছিলো। সরকার পথনের সাথে গা ঢাকা দিয়েছে এসব লুট-পাট কারীরা।
স্থানীয়রা জানান, জাফলং নদীতে গেলেই চোখে পড়তো বালুবাহী হাজার হাজার কার্গো নৌকার সারি। জাফলং থেকে বালু নিয়ে ভাটিতে হাজার হাজার নৌকা গোয়াইনঘাট হয়ে চলে যেতো দেশের বিভিন্ন প্রন্তরে। জাফলং ব্রিজসহ গোটা এলাকাকে পরিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিও) হিসেবে চিহ্নিত করা হয় সরকারি ভাবে। কিন্তু সরকারি সকল আদেশই তাদের কাছে ছিলো তুচ্ছ। সাবেক মন্ত্রী ইমরানের নামে গোয়াইনঘাট কলেজের শিক্ষক ফয়জুল, তার ভাই সামছু, লেবু চেয়ারম্যানসহ চক্রটি ভাগবাটোয়ারা করে লুটপাট করে খেয়েছে জাফলংকে। প্রশাসনের কতিপয় কর্মকর্তা ছাড়াও নিজস্ব স্বশস্ত্র ক্যাডারদের পাহারা বসিয়ে জাফলংয়ে জামাই সুমনের নেতৃত্বে রাতে-দিনের আলোতে চালানো হতো পরিবেশ বিনষ্টকারী ড্রেজার মেশিন। ফিরোজ মিয়া, শ্রমিক নেতা ছমেদ মিয়া, ফয়জুল মিয়া, সাবু মিয়া, কালা রকমত আলীও ছিলো সেই বাহিনীর সদস্য। অবৈধ বালু-পাথর লুটকারীরা নিজেদের স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সাবেক প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদের নিজস্ব লোক বলে পরিচয় দিয়ে স্থানীয় প্রশাসনকে জিম্মী করে ফেলতো। প্রতিবাদ করলেই চালাতো মামলা হামলা, নির্যাতন নিপিড়ন। এনিয়ে স্থানীয় লোকজন সরাসরি প্রতিবাদসহ প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে দীর্ঘদিন অভিযোগ, সাংবাদিক সম্মেলন করেও কোন সুফল পায়নি। স্থানীয়দের আরো অভিযোগ করেন, প্রশাসনকেই ম্যানেজ করেই জাফলং চা বাগান ও কান্দুবস্তি এলাকা থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে এখনও। তাদের নির্বিচারে বালু উত্তোলনের ফলে হুমকির মুখে পড়েছে শত কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত জাফলংয়ে একমাত্র ব্রিজ। এ ছাড়া নয়াবস্তি ও কান্দুবস্তি নামের দুটি গ্রাম ও জাফলং চা বাগান প্রায় বিলুপ্তির পথে। প্রতিদিনের চিত্র দেখলে মনে হতো জাফলংয়ের বালু ও পাথর সিন্ডিকেটের সদস্যরা এবার ঐক্যবদ্ধ হয়েই বালু লুটপাটে নেমেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ইমরান হোসেন সুমন উরফে জামাই সুমন জাফলং এসে পূর্বে একটি বিস্কুট কোম্পানীর বা বেকারির সেলসম্যানের কাজ করতো। এখন সময়ের ব্যবধানে কয়েক শত কোটি টাকার মালিক। তার সহযোগী বিশ্বনাথ এলাকার ফয়জুল তাকে সকলে চিনেন বিশ্বনাথী ফয়জুল হিসাবে। ফয়জুলের ভাই জাফলং ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি, তাই তার প্রভাবটাও একটু বেশী ছিলো। তাদের সহযোগী নয়াবস্তির ইনছান আলীর ছেলে একাধিক মামলায় বির্তকৃত আলীম উদ্দিন। এক সময় আলীম উদ্দিন ও জামাই সুমন দুটি গ্রুপে নেতৃত্ব দিতেন, ছিলো প্রকাশ্য ছিলো দ্বন্ধ চলতো অস্ত্রের মহড়া। এ নিয়ে প্রায়ই গণমাধ্যমে খবর প্রচার হতো।
স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে ইজারা বহির্ভূত এলাকা থেকে প্রতিদিন ১৫-২০ লাখ টাকা করে গত ৩ মাসে প্রায় ১৫ কোটি টাকার বালু লুটপাট করেছে চক্রটি। তাছাড়া প্রতিদিন হাজার হাজার বালুবাহী কার্গো নৌকা চলাচলের কারণে জাফলং ব্রিজ, গোয়াইনঘাট ব্রিজ, সালুটিকর ব্রিজসহ শত শত কোটি টাকায় নির্মিত সেতু এখন হুমকির মুখে পড়েছে।
সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, জামাই সুমন হচ্ছে সিন্ডিকেটের মেইন গডফাদার। স্থানীয় সাংবাদিক ম্যানেজ, প্রশাসন ম্যানেজ, নেতা ম্যানেজ সবই করেন এই জামাই সুমন। জামাই সুমন হচ্ছে জাফলং এলাকার সাবেক চেয়ারম্যান আওয়ামীলীগ নেতা লেবু মিয়ার ভাতিজী জামাই, তাই সকলের কাছেই তিনি জামাই সুমন হিসাবে পরিচিত। সরকার বদলের পরদিন বিক্ষুদ্ধ এলাকাবাসী জামাই সুমনের বাসায় ও তার বিভিন্ন প্রতিষ্টানে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। বিষয়টি আচ করতে পেরে সকল সদস্য চলে যায় আত্মগোপনে। ইতিমধ্যে গোয়াইনঘাট থানার ওসি রফিকুল ইসলামকে সরিয়ে তার স্থলে বদলী করা হয়েছে মীর মো: হারুন অর রশিদ-কে। এখন দেখার বিষয় জাফলং এলাকা ধ্বংষের নায়কদেও বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা গ্রহণ করেন তিনি।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন