• ৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ৫ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

সিলেট ভারতীয় চিনি নিলামে এলাহি কান্ড!

sylhetnewspaper.com
প্রকাশিত জুলাই ৪, ২০২৪
সিলেট ভারতীয় চিনি নিলামে এলাহি কান্ড!

ভারত থেকে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে সীমান্ত পথে আসে চোরাই চিনির চালান। পাইকারি ও খুচরা বাজার দরের চেয়ে অত্যাধিক মূল্য কিনে নেওয়া হয় নিলামে।

এই চোরাই চিনিতে এতো মিষ্টি যে, নিলামে নিতে যথারীতি এলাহি কান্ড ঘটেছে। এতো দাম দিয়ে কিনে নেওয়ার পেছনেও লুকিয়ে আছে অন্য রহস্য!

বুধবার (০৩ জুলাই) যেনো ‘চিনিময়’ ছিল সিলেট। আদালতে বিকাল সাড়ে ৩টায় চিনি নিলামে ওঠবে।এই খবরে দুপুর থেকেই ক্ষমতাসীন দলের অংগসংগঠনের নেতাকর্মীরা ‍দলে দলে জড়ো হন মহানগর দায়রা জজ আদালত ভবনে।

সিলেট মেট্টোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তৃতীয় আদালতে বিকাল ৪টার দিকে নিলাম শুরু হয়। নিলাম কমিটির সভাপতির অত্র আদালতের বিচারক উম্মে হাবিবা ও ২য় আমলী আদালতের বিচারক সগির আহমদের উপস্থিতিতে নিলাম কার্যক্রম শুরু হয়।

প্রতিযোগীতায় পুলিশের অভিযানে জব্দকৃত ১৪টি ট্রাকের সবচেয়ে বড় চালান কিনে নেন নগরের পাইকারি বাজার কালিঘাটের এক চাল ব্যবসায়ী। আরো দুটি চালানের একটি নেন যুবলীগ নেতা ও আরেকটি চালান নিয়েছেন ছাতকের এক ইউপি চেয়ারম্যানের ভাই। তাদের কারোরই চিনির ব্যবসা নেই।

এরআগে বেলা আড়াইটা থেকে চিনি নিলামের খাতায় এক বা দুই ডজন নয়, নাম লেখান প্রায় ৭০ জন প্রতিযোগী। অংশগ্রহণকারীদের সঙ্গে শত শত নেতাকর্মী ভীড় করেন সিলেটের আদালত পাড়ায়। নিলাম কার্যক্রম দেখতে ভীড় করেন উৎসুক জনতাও।

গত ৬ জুন জালালাবাদ থানার উমাইয়াগাও থেকে ১৪ ট্রাকে থেকে ২ হাজার ১১৪ বস্তায় এক লাখ ৫ হাজার ৭০০ কেজি ভারতীয় চিনি জব্দ করে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ। এ ঘটনায় এসএমপির জালালাবাদ থানার (নং-৮৪/’২৪) মামলায় জব্দকৃত ১৪টি ট্রাক চিনি ছাড়াও এয়ারপোর্ট ও দক্ষিণ সুরমা থানা পুলিশ পৃথক অভিযানে আরো দুই ট্রাক চিনি জব্দ করে।

১৪টি ট্রাকে জব্দকৃত চিনি সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট যুক্ত করে ১৩৫ টাকা কেজি দরে নিলাম ডেকে নেন কালিঘাটের চাল ব্যবসায়ী গিয়াস মিয়া। তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নাম রুহেল ট্রেডার্স। নিলামে সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাটসহ এক কোটি ৪২ লাখ ৬৯ হাজার ৫০০ টাকায় সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে এই ১৪ ট্রাক চিনি কিনে নেন তিনি।

এছাড়া এয়ারপোর্ট থানার (নং-১২৪/’২৪) মামলায় জব্দকৃত ৬ টন চিনি কিনে নেন ছাতক উপজেলার গোবিন্দগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ওলিউর রহমান চৌধুরী বকুলের বড় ভাই ছৈদেরগাওয়ের বাসিন্দা আশরাফুর রহমান চৌধুরী। নিলামে ৬টন চিনি ভ্যাট ছাড়াই প্রতিকেজি ১৪২ টাকা দর দিয়েছেন।

এছাড়া দক্ষিণ সুরমা থানার (নং-৯৪/’২৪) মামলায় জব্দকৃত ২ টন চিনি কিনে নেন ভ্যাটসহ ১২৮ টাকা কেজি দরে কিনে নেন যুবলীগ নেতা ফয়ছল আজাদ খান। তিনি নগরীর ৭/২ ফরিদবাগ হাউজিং এস্টেট এলাকার আবুল কালাম আজাদ খানের ছেলে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগরের কালিঘাট পাইকারি বাজারে ৫০ কেজি চিনির বস্তার মূল্য পড়ে ৫ হাজার ১১০ টাকা। কালিঘাটের ব্যবসায়ী ভাই ভাই স্টোরের দেলোয়ার হোসেন বুধবার রাতে এ তথ্য জানান। সে হিসেবে কেজি প্রতি চিনির মূল্য পড়ে ১০২ টাকা ২০ পয়সা। আর খুচরা বাজারে চিনি কেজি ১৩০ টাকা দরে বিক্রি করছেন বলে জানিয়েছেন নগরের মিরাবাজারের সৌরভ স্টোরের স্বত্বাধিকারী মঞ্জু দাস।

এতো চড়া দামে চিনি ক্রয়ের কারণ জানতে চাইলে আশফাকুর রহমান চৌধুরী বলেন, আমরা ১০ জনে মিলে কিনেছি। বাজার দর হিসাব করিনি। একটু বেশি দিয়ে কিনেছি। এখন বাজার দরেই বিক্রি করতে হবে।

সূত্র জানায়, চিনির চালান অধিক মূল্য দিয়ে কেনার নেপথ্যে নিলামের কাগজ। এই কাগজ ব্যবহার করে পূণরায় চোরাই পথে আমদানি হবে চিনি। নিলামের কাগজে যত চিনির কেজি দরে বিক্রি হয়। চিনির নিলাম দর ১৪২ টাকা হলে কাগজের দাম ধরা হয় কেজি ৬০ টাকা। সে হিসেবে চিনির চেয়ে নিলামের কাগজের মূল্য বেশি।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, সীমান্ত দিয়ে আসা চিনির চালান ঘাটে ঘাটে ধরে পুলিশ। তাই নিলামের কাগজ চিনি চোরাচালানে ব্যবহার করেন জড়িতরা।আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ফাঁকি দিতে অপব্যবহার হয় চিনির নিলামের কাগজ। নিলাম কপির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে অন্তত ১০/১২টি চোরাচালান কাগজ ব্যবহার করে আনা হয়।

বুধবারে নিলামে যাওয়া চিনি বাজার দরের চেয়ে বেশি মূল্যে কেনার নেপথ্যে চালানের কাগজ। যে কারণে আদালতের নিলামের একটি কাগজ যেনো সোনার হরিণ।

নিলাম পূর্বে মেট্টোপলিটন ৩য় আমলী আদালতের বিচারক উম্মে হাবিবা বলেন, নিলামে সর্বোচ্চ দরদাতারা আগামি ৩ কার্যদিবসের মধ্যে নিলামে নেওয়া চিনির মূল্য পরিশোধ করবেন। এছাড়া ১৪ ট্রাক চিনির ১৫ দিনের মধ্যে স্থানাস্তর করবেন। অপর দুটি নিলামের চিনি ৭ দিনের মধ্যে হস্তান্তর করে নেওয়ার আদেশ দেন।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন