• ১৮ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ২রা কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১৫ই রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

গোয়াইনঘাটের সড়কে যাত্রীদের ধাক্কায় চলে গাড়ী

sylhetnewspaper.com
প্রকাশিত জুন ২৭, ২০২৪
গোয়াইনঘাটের সড়কে যাত্রীদের ধাক্কায় চলে গাড়ী

নিজস্ব প্রতিবেদক :: গাড়ী গর্তে পড়লে আর উঠতে চায় না, আগপিছ করে গাড়ীর গিয়ার তুলা নামা নতুবা যাত্রী নামিয়ে,যাত্রীকে দিয়ে গাড়ীর পিছনে ধাক্কা মেরে তুলতে হয়। গর্তে পড়ে যে ধাক্কা খায়,গাড়ীর নাট বল্টু থেকে শুরু করে চালকের পায়ের পাতা থেকে মাথা পর্যন্ত সারা শরীর খবর পায়।শরীরের ব্যাথায় রাত্রে ঘুম আসে না আবার ঘুমিয়ে পড়লে দিন দুনিয়ার খবর মিলেনা।এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন,সিএনজি চালক জাহেদুল ইসলাম।

তিনি বলেন, সারাদিন গাড়ি চালিয়ে গাড়ির কাজ করানোর যে খরচ আসে, দিনশেষে পরিবার-পরিজন বউ বাচ্চার জন্য কিছু নিয়ে যাওয়ার মত পকেটে কোন কানাকড়ি থাকে না।এই সড়ক দিয়ে গাড়ি চালিয়ে চালকরা দিন দিন ঋণগ্রস্থ হচ্ছে। কিস্তির দায়ে দেউলিয়া হয়ে অনেক চালক ভিটাবাড়ি বিক্রি করে প্রবাসে পাড়ি জমাচ্ছে। যারা নিজস্ব গাড়ি চালায় তারা কোনরকম ডালভাত খেয়ে বেঁচে আছে।

সিএনজি চালক সেলিম বলেন, আমরা যাত্রীর কাছে ১০ টাকা বাড়া বেশি চাইলে তর্ক লেগে যায়, আমরা তো আর স্বাদে ভাড়া বেশি নেই না,রাস্তার অবস্থা ভালো না, এক ঘন্টার রাস্তায় দেড় ঘন্টায় সময় লাগে, যানজটে পড়লে দিন চলে যায়। গাড়িতে গ্যাস লোড করার ভোগান্তি আর নাইবা বললাম। আমাদেরকে মানুষ ড্রাইভার হিসেবে দেখে মানুষ হিসাবে দেখে না। আমাদেরও পরিবার-পরিজন আছে।রাস্তার যে অবস্থা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন পার করতে হয়। বাড়িতে মা বাবা টেনশনে থাকে এই রাস্তায় কখন কি হয়। তবুও আমরা পরিবার-পরিজনের চিন্তা করে যাত্রীদের সেবায় ব্যস্ত থাকি। রাস্তা ভালো করে দেওয়া হোক আমরা ভাড়া বেশি নিব না,যাত্রীদের সাথে আমাদের তর্ক হবে না। সালুটিকর গোয়াইনঘাট সড়ক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার পর পানি কমে আসায় বের হতে শুরু করেছে ক্ষতচিহ্ন। সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্তের।

অসংখ্য ছোট-বড় খানাখন্দে ভরা এর মধ্যে প্রায় ১০-১২ কিলোমিটার রাস্তার পিচ একেবারে উঠে গেছে। ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কে সংস্কারের অভাবে সড়কটি যেন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে।সড়কের প্রতি পদে পদে দুর্ভোগ ও ভোগান্তির সৃষ্টি হয়েছে।
সড়কটির জীর্ণদশার কারণে যাত্রী পরিবহণ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বর্তমানে ২৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সড়কটির প্রায় ১৫ কিলোমিটারই ভেঙ্গে গেছে। বর্ষা মৌসুম হওয়ায় সড়কে শতাধিক গর্তের সৃষ্টি হয়েছে তাই দুর্ভোগের শেষ নেই।

এলাকার লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গোয়াইনঘাট উপজেলার পশ্চিম জাফলং, গোয়াইনঘাট সদর, লেঙ্গুড়া, বিছনাকান্দি, রুস্তুমপুর, তোয়াকুল ও নন্দিরগাঁও ইউনিয়নের প্রায় আড়াই লক্ষাধিক মানুষের চলাচলের একমাত্র ও প্রধান রাস্তার নাম সালুটিকর-গোয়াইনঘাট সড়ক।

উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, সর্বশেষ ২০১৬ সালে সালুটিকর-গোয়াইনঘাট সড়কটি সংস্কার করা হয়। সালুটিকর-গোয়াইনঘাট পুরো ২৪ কিলোমিটার সড়ক সংস্কার শেষ না হতেই ভারত থেকে নেমে আসা বারবার পাহাড়ি ঢলে সড়কটির সিংহভাগ অংশ ক্ষতিগ্রস্ত করে। এছাড়াও ২০২২ সালের স্মরণ কালের ভয়াবহ বন্যায় এ সড়কটি আবারো বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।
সরেজমিনে দেখা যায় ২০২৪ এসে দুই দফা বন্যায় সালুটিকর-গোয়াইনঘাট সড়কের সালুটিকর বাজার থেকে তোয়াকুল ইউনিয়নের পেকেরখাল ব্রিজ পর্যন্ত ছোট-বড় অসংখ্য গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।
এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহন ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। এখানে বড় ধরনের দুর্ঘটনা সংগঠিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।মৃত্যু ঝুকি নিয়ে প্রতিদিন যান ও জন চলাচল করছে।

কলেজ ছাত্র মাসুম আহমদ বলেন,দীর্ঘদিন ধরে সড়কটির বেহাল দশা। যানবাহনতো দূরে থাক, পায়ে হেঁটে চলাও দায়। এ সড়ক দিয়ে যানবাহনের চালকরাও সহজে যেতে চায় না। এরমধ্যে বৃষ্টি হলেতো কথায় নেই।অনেকটা মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে এ সড়ক দিয়ে চলতে হচ্ছে। এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন স্কুল, কলেজ, মাদরাসার হাজার হাজার শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের চলাচলের পাশাপাশি বিছনাকান্দি ও পান্তুমাই পর্যটনকেন্দ্রে দেশি-বিদেশি পর্যটকের আগমন ঘটে। কিন্তু চলার মতো কোনো অবস্থা নেই সড়কটির।

এ বিষয়ে গোয়াইনঘাট উপজেলা প্রকৌশলি রফিকুল ইসলাম বলেন, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও স্থানীয় বৃষ্টির কারণে সৃষ্ট বন্যায় প্রতিবছর সালুটিকর-গোয়াইনঘাট সড়কের সিংহভাগ অংশ তলিয়ে যায়। ফলে বন্যার পানি সড়ক থেকে নামার পর ভাঙ্গনের সৃষ্টি হয়। এই বছর প্রথম দফা বন্যার ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণের পূর্বেই বিশ দিনের মাথায় দ্বিতীয় দফা বন্যা।ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে প্রস্তুতি চলছে।সংস্কারের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে তালিকা প্রেরণ করা হয়েছে। সালুটিকর গোয়াইনঘাট সড়ক সহ ক্ষতিগ্রস্থ সকল সড়ক পর্যায়ক্রমে সংস্কার করা হবে।

এমপি ইমরান আহমদ পরিদর্শন করে গেছেন।এছাড়া সালুটিকর গোয়াইনঘাট সড়কে সালুটিকর হতে তোয়াকুল পর্যন্ত আরসিসি করন প্রায় ২৯ কোটি টাকার কাজ চলমান রয়েছে।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন