সিলেটে ঘটনার ১০ বছর পর আদালতে মামলা দায়ের করেছেন এক নারী। মামলায় আসামি করা হয়েছে সিসিক কাউন্সিলরসহ ১৩জনকে।
সম্প্রতি (২৬ মে) সিলেট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ২য় আদালতে মামলাটি দায়ের করেন সিলেট মহানগর পুলিশের শাহপরাণ থানার শিবগঞ্জের ১১৪ মোহিনী লামাপাড়া-খন্ডিকরপাড়ার জুবের আহমদ সাকুর স্ত্রী মিসেস লিপি বেগম (৩৬)।
মামলার আসামিরা হলেন, একই এলাকার ১১২/১ বাসার মৃত আনছার আলীর ছেলে বশির আহমদ (৬০), তার ৩ ছেলে মনজুর আহমদ মনজুর (২৭), সাইদুর রহমান সাইদুর (২৫), মিজানুর রহমান মিজান (৩০), বশির আহমদের স্ত্রী সালমা বেগম (৪৫), মোহিনী ৪২নং বাসার মৃত কটু মিয়ার ছেলে কয়েছ আহমদ (৫২), সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ২১নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আব্দুর রকিব তুহিন (৫০), মোহিনী ১১২/১নং বাসার মৃত জৈন উল্লাহর ছেলে মুশাহিদ আলী (৬০), মোহিনী ১২৫/১নং বাসার মৃত কামাল উদ্দিন মিনুর ছেলে মামুন উদ্দিন মামুন (৩৬), মোহিনী ১১৩নং বাসার মৃত আবু তাহের চৌধুরীর ছেলে ইব্রাহিম চৌধুরী আদহাম (২৮), মোহিনী ১১২/১নং বাসার মৃত আনছার আলীর ছেলে সালেহ আহমদ ছালিক (৫৫), শিবগঞ্জ হাতিমবাগের ৪৬নং বাসার মৃত আমির আলীর ছেলে আব্দুর রহিম (৫০) ও মোহিনী ১১১/বি বাসার শাহিন উদ্দিন খাঁর ছেলে সাইফ খাঁন সাজু।
অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, ২০১৪ সালের ১৬ ডিসেম্বর রাত সাড়ে ১২টার দিকে বশির আহমদ ভূমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে অন্যান্য আসামিদের নিয়ে তার ঘরে প্রবেশ করে তার স্বামী জুবের আহমদ সাকুকে হত্যার উদ্দেশ্যে আঘাত করতে চাইলে তিনি বাধা দেন। তিনি স্বামীর সুরক্ষায় এগিয়ে এলে আসামিরা লাঠি হকিষ্টিক ইত্যাদি দিয়ে মারধর করে। তারা ঘরে ভাঙচুর করে প্রায় পৌণে ৩ লাখ টাকার ক্ষতি সাধন করে। বশিরের ছেলে মনজুর শোকেস ভেঙে ৩৫ হাজার টাকা নিয়েছে বলেও তিনি অভিযোগে উল্লেখ করেন। তাদের চিৎকার চেচামেচি শুনে আশপাশের লোকজন জড়ো হলে আসামিরা তাদের প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে চলে যায়।
অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, তার তলপেটে বশির লাত্থি মারলে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। তাকে উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৭ মাসের একটি মৃত সন্তান প্রসব করেন তিনি। তারা এ ব্যাপারে মামলা দায়ের করতে চাইলে স্থানীয় কাউন্সিলর আব্দুর রকিব তুহিনসহ এলাকার অন্যান্য মুরব্বিরা বিষয়টি আপোষে মিমাংসার আশ্বাস দেন। কিন্তু দীর্ঘদিন নানাভাবে সময় ক্ষেপনের পর গত ২৫ মে তারা তার স্বামী সাকুকে ডেকে জানিয়ে দেন বিষয়টি তারা মিমাংসা করতে পারবেন না। তাই তিনি আইনের আশ্রয় নিয়েছেন। তিনি ন্যায় বিচার দাবি করেছেন।
তিনি মামলায় স্থানীয় কাউন্সিলর আব্দুর রকিব তুহিন ও কয়েছ আহমদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলেছেন। মূলতঃ বিল্ডিং কোড অমান্য করে বশির আহমদ ভবন তৈরি করলে লিপি বেগমের ভূমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তার স্বামী জুবের আহমদ সাকু এর প্রতিবাদ করলে তারা তখন থেকেই তাকে হত্যার হুমকি দিচ্ছিলেন বলেও অভিযোগ তার। বশির তাদের বাউন্ডারি দেয়ালের উপর অবৈধভাবে নিজের বিল্ডিং তৈরি করেছেন। এই বিরোধকে কেন্দ্র করেই হামলার ঘটনা ঘটেছিল বলে লিপি অভিযোগে উল্লেখ করেন।
এদিকে আদালতের নির্দেশে ২৮ মে মামলার এফআইআর জমা দিয়েছে সিলেট মহানগর পুলিশের শাপরাণ থানা পুলিশ (নং সিআর ২১১/২৪)।
এতবছর পর মামলার কারণ কি- জানতে চাইলে লিপির স্বামী জুবের আহমদ সাকু বলেন, কাউন্সিলরসহ এলাকাবাসী আপোষে মিমাংসার জন্য সময় নিয়েছিলেন। সবার সম্মানার্থে আমিও সময় দিয়েছি। কিন্তু এখন তারা বিষয়টির কোনো সমাধান দিতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন। তাই আমি আইনের আশ্রয় নিয়েছি।
এ ব্যাপারে মামলার ১নং আসামি বশির আহমদ বলেন, সম্পূর্ণ মিথ্যা বানোয়াট এবং সাজানো অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এর কোনো ভিত্তি নেই। আমরা আইনীভাবে বিষয়টি মোকাবেলা করার প্রস্তুতি নিয়েছি।
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ২১নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আব্দুর রকিব তুহিন মামলা এবং এফআইআর হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ১০ বছর আগের ঘটনা নিয়ে হঠাৎ কেন এমন মিথ্যা বানোয়াট অভিযোগ, আমি জানিনা। এমনটা হলেতো সালিশে যাওয়া বন্ধ করে দিতে হবে। বিষয়টি আইনীভাবে আমরা মোকাবেলা করবো।
মামলার ১৩ আসামি সাইফ খাঁন সাজুও অভিযোগকে মিথ্যা বানোয়াট ও ভিত্তিহীন বলে মন্তব্য করেছেন।
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন