• ২২শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৭ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২০শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

জালালাবাদে পুলিশের নামে অবৈধ অটোরিক্সায় তিন কুতুব’র টোকেন বাণিজ্য!

sylhetnewspaper.com
প্রকাশিত মার্চ ১৬, ২০২৪
জালালাবাদে পুলিশের নামে অবৈধ অটোরিক্সায় তিন কুতুব’র টোকেন বাণিজ্য!

সিলেট নগরীর জালালাবাদ থানাধীন মদিনা মার্কেট, তেমুখী, টুকের বাজার শিবের বাজার এলাকায় রেজিষ্ট্রেশন বিহীন সিএনজিতে চলছে পুলিশের নামে টোকেন বাণিজ্য। রমরমা টুকেন বাণিজ্যের নেতৃত্বে তিন কুতুব হচ্ছেন দুলাল-জয়নাল-কালাম গং।

সড়ক পরিবহন আইন ১৮ ধারা ১৬ অনুযায়ী রেজিষ্ট্রেশনবিহীন যে কোনো যান বাহন সড়কে চলাচল আইনত দন্ডনীয় অপরাধ। কিন্ত আইনের কোনো রকম তোয়াক্কা না করেই সিলেট নগরীর মদিনা মার্কেট, তেমুখী, টুকের বাজার, শিবের বাজার এলাকায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে শত শত রেজিষ্ট্রেশনবিহীন সিএনজি অটোরিক্সা। আর এসব অটোরিকশায় ব্যবহৃত হচ্ছে স্টিকার যুক্ত একধরনের পুলিশের বিশেষ টোকন। যেটাকে পুলিশ টোকন নামে জানেন রেজিষ্ট্রেশনবিহীন সিএনজি অটোরিক্সার চালকরা।

বিআরটিএ তথ্য অনুযায়ী সিলেট জেলায় ৪০ হাজারের বেশি সিএনজি অটোরিক্সা চলাচল করছে। তার মধ্যে রেজিষ্ট্রেশন ভুক্ত সিএনজি অটোরিক্সার সংখ্যা ১৯ হাজার। রেজিষ্ট্রেশন বিহীন সিএনজি অটোরিক্সার সংখ্যা ২৫ হাজারের বেশি। সিলেট জেলা সিএনজি অটোরিক্সা শ্রমিক ইউনিয়ন চট্র ৭০৭ এর তথ্য অনুযায়ী জেলায় তাদের শ্রমিক সংখ্যা রয়েছে ৫০ হাজার।

অনিবন্ধিত সিএনজি অটোরিক্সার বেশ একটা অংশ সিলেট নগরী এবং সদর এলাকায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে প্রতিনিয়ত। আর এই অনিবন্ধিত সিএনজি অটোরিক্সা দিয়ে রমরমা বাণিজ্য গড়ে তুলেছেন জালালাবাদ থানাধীন সোনাতলা এলাকার ডন্ডারচর গ্রামের কলম হাজীর ছেলে দুলাল এবং একই এলাকার তুতু মিয়ার ছেলে জয়নাল, কালীর গাঁও এলাকার কালাম। তাদের নেতৃত্বে শতশত রেজিষ্ট্রেশনবিহীন সিএনজি দাপিয়ে বেড়াচ্ছে সিলেট নগরীসহ আশেপাশের বিভিন্ন এলাকায়। এসব অনিবন্ধিত সিএনজি অটোরিক্সায় বৈধতা হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে এক ধরনের স্টিকার যুক্ত পুলিশের বিশেষ টোকন।

এই টোকেনের বরকতে রমরমা বাণিজ্য গড়ে তুলছেন সিন্ডিকেটের এই তিন কুতুব। যার ফলে অল্পদিনে লক্ষ লক্ষ টাকার মালিক বনে গেছেন দুলাল, জয়নাল ও কালাম। অবাধে এসব রেজিষ্ট্রেশন বিহীন সিএনজি অটোরিক্সার নাম্বার না থাকায় ব্যবহার করা হচ্ছে প্রতিনিয়ত চুরি, ছিনতাইসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধে।

সরজমিন গত বুধবার ১৩ই মার্চ মদিনা মার্কেট, তেমুখী, টুকের বাজার ওশিবের বাজার সিএনজি অটোরিক্সা স্ট্যান্ড গিয়ে রেজিষ্ট্রেশনবিহীন সিএনজিতে ব্যবহৃত স্টিকার যুক্ত পুলিশ টোকেন এর সত্যতা পাওয়া যায়। স্ট্যান্ড ভিক্তিক ভিন্ন ভিন্ন কালার সম্বলিত এসব টোকেনে ইস্যুর তারিখ মেয়াদ নাম্বার এবং চিহ্নিতের জন্য স্বাক্ষর উল্লেখ রয়েছে। একেকটি পুলিশ টোকেন দূরত্ব ও রুটবেধে এক মাসের জন্য ৫০০ থেকে হাজার টাকায় বিক্রি করেন দুলাল, জয়নাল ও কালাম গং। তাছাড়া মদিনা মার্কেট সিএনজি স্ট্যান্ডে সুনামগঞ্জ জেলায় রেজিষ্ট্রেশন ভুক্ত কয়েকটি সিএনজির উপস্থিতিও লক্ষ করা যায়। যার ছবি ও গাড়ির নাম্বার প্রতিবেদকের নিকট সংগ্রহ রয়েছে।

সুনামগঞ্জ জেলায় রেজিষ্ট্রেশনকৃত এক সিএনজির চালক জানান- তিনি মদিনা মার্কেট সিএনজি স্ট্যান্ড থেকে গোবিন্দগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ রোডে গাড়ি চালান পুলিশী হয়রানি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য প্রতি মাসে দুলাল এর কাছ থেকে এক হাজার টাকার বিনিময়ে পুলিশ টোকেন সংগ্রহ করেন। ফলে এই রোড় দিয়ে চলাচলে তার কোন প্রকার বাধায় পরতে হয় না। পুলিশ কোন চেকপোস্টে গাড়ি থামালেও স্টিকার দেখে গাড়ি ছেড়ে দেয় বলে দাবি করেন এই চালক।

নাম পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে তেমুখী শিবের বাজার রোডে চলাচলকারী কয়েকজন সিএনজি চালক জানান- প্রতি মাসে ৫০০ টাকার বিনিময়ে জয়নাল এর কাছ থেকে টোকেন সংগ্রহ করেন। এর ফলে তাদের আর কোন পুলিশি হয়রানিতে পড়তে হয় না।

টুকের বাজার শাখার একাদিক চালক জানান- তাদের সিএনজি অটোরিক্সার নিবন্ধন নেই পুলিশি হয়রানির থেকে রক্ষা পেতে প্রতি মাসে কালামের কাছ থেকে ৫০০ টাকা দিয়ে পুলিশ টোকেন সংগ্রহ করেন। এতে আর রাস্তায় চলাচলে তাদের কোন ভোগান্তিতে পড়তে হয় না।

টুকের বাজার সিএনজি স্ট্যান্ড শাখার ম্যানেজার ও অভিযুক্ত কালামের সাথে আলাপকালে তিনি জানান- এটা নতুন কিছু নয় প্রশাসনের পরামর্শেই তারা টোকেন দিয়ে রেজিষ্ট্রেশনবিহীন সিএনজি অটোরিক্সা চালাচ্ছেন। টোকেন বিক্রির একটা অংশ প্রশাসনের কর্মকর্তারা পায় আর এভাবেই সারাদেশে রেজিষ্ট্রেশনবিহীন সিএনজি অটোরিক্সা চলছে। তবে প্রশাসনের কোন কোন কর্মকর্তা টাকা নেন এমন প্রশ্নে কিচ্ছু উল্লেখ করেন নি।

মদিনা মার্কেট সিএনজি স্ট্যান্ড পরিচালনাকারী দাবি করা অভিযুক্ত দুলালের সাথে মোবাইল ফোনে টোকন বিক্রির বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি জানান- জালালাবাদ থানা এবং শিবের বাজার পুলিশ ফাড়িকে প্রতিদিন ডিউটি করার জন্য কয়েকটি সিএনজি মদিনা মার্কেট শাখা থেকে প্রদান করা হয়। যে সকল চালক ডিউটি করার জন্য যান তাদের এবং গাড়ির মালিকের ইনকাম দেওয়ার জন্য টোকন বিক্রি করেন তিনি। টোকন কোথা থেকে আসে বা প্রশাসনের কেউ এর সাথে জড়িত কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন টোকন তারা নিজেরাই তৈরি করেন এবং এর সাথে প্রশাসনের কেউ জড়িত নয় বলে জানান।

একপর্যায়ে মদিনা মার্কেট সিএনজি শাখার সেক্রেটারি সাদির আহমদ সুনাই প্রতিবেদকের মোবাইলে কল দিয়ে জানান- দুলাল সিএনজি গাড়ি ক্রয়-বিক্রয় করেন তিনি তাদের শাখার কেউ নন এবং মদিনা মার্কেট শাখার কোন শ্রমিক টোকেন বিক্রির সাথে জড়িত নয়।

তেমুখী শাখার অভিযুক্ত জয়নালের সাথে মোবাইল ফোনে আলাপকালে তিনি জানান- জালালাবাদ থানা পুলিশকে তিনটি এবং শিবের বাজার পুলিশ ফাঁড়িতে দুটি সিএনজি প্রতিদিন ডিউটি করার জন্য প্রদান করার প্রেক্ষিতে টোকেন সুবিধা নিচ্ছেন তিনি। গাড়ির পরিচয় চিহ্নিত করার জন্য টোকন তারা তৈরি করে দিয়ে থাকেন। এর সাথে প্রশাসনের কেউ জড়িত নয় বলেও তিনি জানান।

সিলেট জেলা সিএনজি অটোরিক্সা শ্রমিক ইউনিয়ন চট্র : ৭০৭ এর সভাপতি জাকারিয়ার সেলফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান- পুলিশ টোকেন বাণিজ্যের সাথে যারা জড়িত তারা তাদের সংগঠনের কেউ না। পাশাপাশি তিনি সরকারের কাছে দাবি জানাজ নতুন সিএনজি আমদানি বন্ধ করা হোক এবং যে সকল সিএনজি সড়কে নামছে সরকার যেনো সেগুলোকে নিবন্ধন দেয়।

জালালাবাদ থানার ওসি মিজানুর রহমানের সরকারি সেলফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান- এ বিষয়ে আমার জানা নেই এসব ট্রাফিক পুলিশের বিষয়। প্রতিবেদক জানতে চাইলেন যে এরা ত বলে বেড়াচ্ছে আপনার থানায় টাকা দিয়ে তারা এই সুবিধা ভোগ করছে? জবাবে তিনি জানান- তাদের জিজ্ঞেস করুন তারা তাদের টাকা দেয় বলে তিনি সংযোগ বিছিন্ন করেন।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন