দোয়ারাবাজারে প্রেমিককে বেঁধে রেখে প্রেমিকাকে গণধর্ষণ করা হয়েছে। শুক্রবার রাতে উপজেলার মান্নারগাঁও ইউনিয়নের জালালপুর গ্রামে এই অমানবিক ঘটনা ঘটেছে। রাত সাড়ে নয়টায় এ ঘটনায় দোয়ারাবাজার থানায় গণধর্ষণের মামলা হয়েছে। এ রিপোর্ট লেখার সময় নির্যাতিতা কিশোরী ও তার প্রেমিক পুলিশের হেফাজতে রয়েছে। ধর্ষকদের গ্রেপ্তারে কাজ করছে পুলিশ।
ন্থানীয় লোকজন, নির্যাতিতরা জানান, বিশ^ম্ভরপুর উপজেলার পলাশ গ্রামের সুরুজ আলীর পুত্র নুরুজ্জামান (২৩) হবিগঞ্জের মাধবপুরে রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। বেশ কিছুদিন হয় ওখানে থাকার সময় ১৬ বছরের এক কিশোরীর সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। শুক্রবার ওই প্রেমিক—প্রেমিকা বিয়ে করে ঘর বাধার আশায় সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারের কামারগাঁওয়ে বন্ধু আফাজ উদ্দিনের বাড়িতে যাবার জন্য রওয়ানা দেয়। সন্ধ্যায় দোয়ারাবাজারের আজমপুর খেওয়াঘাটে একই গ্রামের সিএনজি চালক আব্দুল করিমের সঙ্গে তাদের কথা হয়। আব্দুল করিম তাদেরকে আফাজ উদ্দিনের বাড়ী পেঁৗছে দেবার কথা বলে সিএনজিতে তোলে। রাতে জালালপুর গ্রামের ভেতরে গিয়ে সিএনজিতে গ্যাস নেই জানিয়ে এদের দুজনকে নামিয়ে দেয়। নামিয়ে দেবার আগে জালালপুরের লিয়াকত আলীর ছেলে মান্নারগাঁও ইউনিয়নের চার নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সেক্রেটারী আফছর উদ্দিনকে (৩৫) ডেকে এনে ওই দুজনকে সমঝে দেয়। আফছর উদ্দিন ওই দুজনকে চর থাপ্পর দিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে বলে, তোমাদের কাছে কোন কাবিননামা নেই। তোমরা একসঙ্গে কীভাবে থাকবে। তোমাদের পুলিশে দেওয়া হবে।
ভয়ে বন্ধুর বাবা মিয়াজান আলীকে ফোন দেয় নুরুজ্জামান । মিয়াজান আলী ঘটনাস্থলে গেলে আফছর আলী জানায়, রাতের বেলা এদেরকে এভাবে দেওয়া যাবে না, সকালে পুলিশে দেওয়া হবে বলে মিয়াজান আলীকে বিদায় করে দেয় আফছর।
পরে রাত একটায় ওই দুজনকে জালালাপুরের ময়না মিয়ার ছেলে ফয়জুল বারী’র মানুষ শূণ্য বাড়ীতে নিয়ে যায়। ওখানে নুরুজ্জামানকে গাছের সঙ্গে বেঁধে রেখে আফছর উদ্দিন, ফয়জুল বারী (৪৫), কামারগাঁওয়ের ইদ্রিছ আলীর ছেলে আব্দুল করিম (৩৫) ও জালালপুরের হায়াত আলীর ছেলে ছয়ফুল ইসলাম (৩০) পালাক্রমে ওই কিশোরীকে ধর্ষণ করে বলে স্থানীয় লোকজন ও পুলিশের কাছে জানায় নির্যাতিতা কিশোরী।
এই ঘটনার পর অসুস্থ্য কিশোরী ও তার প্রেমিক নুরুজ্জামানকে সিএনজিতে তুলে ভোর রাতে সুনামগঞ্জের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয় চালক আব্দুল করিম। ভোর সাড়ে চারটায় কাটাখালি বাজারের পাশে এসে সিএনজি স্টার্ট বন্ধ হয়ে গেছে জানিয়ে ওই দুজনকে নেমে পেছন দিকে ধাক্কা দেবার জন্য অনুরোধ করে। ওরা নেমে পেছন দিকে ধাক্কা দেবার জন্য যেতেই দ্রুত সিএনজি নিয়ে সটকে পড়ে চালক করিম। শেষে সকাল পর্যন্ত একটি বাড়ীতে আশ্রয় নেয় ওই কিশোরীসহ নুরুজ্জামান।
সকালে স্থানীয় অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য সিকান্দার আলীর সহযোগিতা চায় নির্যাতিতা কিশোরী ও তার প্রেমিক। তাদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া দুটি মোবাইল ও আট হাজার টাকা উদ্ধারের কথা জানিয়ে আইনি সহযোগিতা করার জন্য অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্যকে অনুরোধ জানায় তারা।
পুলিশ সদস্য সিকান্দার আলী জানান, শনিবার দুপুরে তিনি দুজন ইউপি সদস্যকে খবর দিয়ে ঘটনা জানান এবং পুলিশকে খবর দেন। বিকেলে পুলিশ এসে নির্যাতিতা মেয়েটিসহ তার প্রেমিককে তাদের হেফাজতে নিয়ে যান।
আফছর উদ্দিনসহ অভিযুক্ত চারজনের ফোন বন্ধ থাকায় এ ব্যাপারে তাদের বক্তব্য জানা যায় নি। তবে ফোন বন্ধ করার আগে স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে ফোন দিয়ে নিজেকে রক্ষার অনুরোধ জানিয়েছেন আফছর উদ্দিন।
উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল খালেক বললেন, আওয়ামী লীগের কেউ এধরণের ঘৃণ্য ঘটনায় যুক্ত থাকলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) রাজন কুমার দাস রাত সাড়ে নয়টায় বললেন, এই ঘটনায় থানায় গণধর্ষণের মামলা হচ্ছে। পুলিশ অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারে কাজ করছে। এর আগে দোয়ারাবাজার থানার ওসি ও সহকারী পুলিশ সুপার (ছাতক সার্কেল) ঘটনাস্থলে গেছেন। তারা (সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা পর্যন্ত) নির্যাতিতার বক্তব্যও শুনেছেন।
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন