মো.ফয়ছল আলম:: সিলেট নগরের ৪২ ওয়ার্ডের ময়লা আবর্জনা পরিস্কারে কাউন্সিলরদের জন্য বরাদ্দকৃত টাকার ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। প্রতিটি ওয়ার্ডে ১০ জন করে পরিচ্ছন্নতা কর্মী এবং তাদের টাকা বরাদ্দ থাকলেও ওয়ার্ডের সড়ক আর পাড়ামহল্লাগুলো অপরিচছন্ন থাকছে। রাস্তা পরিস্কার না হলেও টাকা ঠিকই যাচ্ছে নগর ভবন থেকে। লুটের এধারা চলছে প্রায় ১৫ বছর থেকে। এ সব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। নগর ভবনে চলছে নানা গুঞ্জন। নতুন মেয়র দায়িত্ব নেয়ার পর এ ব্যাপারে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। তিনি চাচ্ছেন সবগুলো টাকার স্বচ্ছ ব্যবহার হোক।
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা শাখা সূত্রে প্রাপ্ত সূত্রে জানা গেছে, নগর ভবন থেকে প্রতিদিন পরিচালিত কর্মীদের কার্যক্রম তদারকি করা হয়ে থাকে সরাসরি। তবে কাউন্সিলরদের মাধ্যমে পরিচালিত পরিচ্ছন্নতা কাজের কোনো তদারকি সম্ভব হয়না। কাউন্সিলরদের জন্য বরাদ্দ রাখা পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের টাকা নিয়মিতই ছাড় দিতে হয়। কিন্তু এগুলোর ব্যাপারে কোনো খবর রাখা সম্ভব হয়না। প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে ১০ জন করে শ্রমিক কাউন্সিলরদের জন্য থাকলেও তারা নিয়মিত কাজ করছেন না। শ্রমিক প্রতি ৫শ টাকা করে ব্যয় করছে সিসিক। অনেক কাউন্সিলর সরাসরি এ টাকাগুলো নিচ্ছেন। তবে এগুলো নিয়ে কাজ করছেন কিনা জানা সম্ভব হচ্ছেনা।
সরেজমিনে সিলেট নগরের হাতে গোনা কয়েকটি ওয়ার্ডে শ্রমিকদেরকে দিয়ে প্রকাশ্যে কাজ করানোর দৃশ্য চোখে পড়ে। তবে বাসা বাড়ি থেকে ময়লা আবর্জনা কালেকশনের কাজও সব ওয়ার্ডে হয়না। বিভিন্ন ওয়ার্ডে তাদের ক্লাবগুলো সরাসরি সেসব কার্যক্রম পরিচালনা করছে। আর এ সুযোগকে কাজি লাগিয়ে কাউন্সিলররা দিচ্ছেন শুভংকরের ফাঁকি। দিনের পর দিন তাদের ওয়ার্ডের সবকটি সড়কে ময়লা আবর্জনা, গাছের পাতাসহ নানা ধরণের নির্মাণ সামগ্রীর বর্জ্য পড়ে থাকছে। অনেক বাসা বাড়ির সামনে বড় বড় ডাস্টবিনেও ময়লা আবর্জনা পড়ে থাকছে দিনের পর দিন। নগর ভবন থেকে যেসব গাড়ি এবং পরিচ্ছন্নতা কর্মী ময়লা আবর্জনা প্রতিদিন পরিষ্কার করে থাকেন তারা ছাড়া আর কোনো উদ্যোগই দেখা যায়না। ফলে নতুন মেয়রের ‘গ্রিণ সিলেট-ক্লিন সিলেট’ এর যে স্বপ্ন-তা শুরুতেই হোঁচট খাচ্ছে এখানেই। আর এসব ‘অচেতন’ কাউন্সিলরদেরও নগর কর্তৃপক্ষও বাগে আনতে পারছেনা।
নগর ভবন সূত্রে জানা গেছে, সিলেট সিটি কর্পোরেশনে নগরের ৪২ ওয়ার্ডসহ সংরক্ষিত ১৪ নারী কাউন্সিলরসহ মোট ৫৬ জনকে ১০ জন করে পরিচ্ছন্নতা কর্মী বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এরা তাদের ওয়ার্ড প্রতিদিন পরিচ্ছন্ন রাখার কথা। যাদের জনপ্রতি ৫শ টাকা করে নগর ভবন থেকে প্রতিদিন হিসেবে দেয়া হয়ে থাকে। সে অনুযায়ী এক হিসেবে দেখা গেছে সিলেট সিটি কর্পোরেশন থেকে শুধুমাত্র এসব শ্রমিকদের বেতন বাবদ প্রতিদিন প্রতিদিন ২ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা ব্যয় হয়। এ টাকার হিসেবে বছরেই শুধু কাউন্সিলরদের জন্য বরাদ্দকৃত পরিচ্ছনাকর্মীদের পেছনে মাসে ব্যয় হয় ৮৪ লক্ষ হাজার টাকা। বছরে বেতন দেয়া হয় ১০ কোটি ৮ লক্ষ টাকা। ওয়ার্ডগুলোর অভ্যন্তরের সড়ক,গলিপথ পরিচ্ছন্নতায় এত টাকা বরাদ্দের খবর জানেন না নাগরিকরাও। ফলে কাউন্সিলররা জবাবদিহিতা ছাড়াই চলতে পারছেন। কোথাও কোনো ময়লা আবর্জনার স্তুপ জমলে তা পরিস্কারে অনেক সময় তারা নগর ভবনের পরিচালিত গাড়ির উপর নির্ভর করছেন। এসব অনিয়মের খবরে সচেতন নাগরিকরাও বিস্ময় প্রকাশ করছেন। তারা বলছেন কাউন্সিলরদের জন্য বরাদ্দকৃত এসব টাকা কার পকেটে যাচ্ছে, কিভাবে ব্যয় হচ্ছে তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। কারা তুলছেন তা তদন্ত করে দেখা হোক। নতুবা জনগনের জন্য টাকা বরাদ্দ থাকার পরও কেন প্রতিটি ওয়ার্ডে শ্রমিকরা নিয়মিত কাজ করেন। তারা যদি নিয়মিত কাজ করাতেন তবে কোনো ওয়ার্ডের সড়কই অপরিচ্ছন্ন বা ময়লাযুক্ত থাকতো না।
এ বিষয়ে নগরের বিশিষ্টজন, জেলা আইনজীভী সমিতির সাবেক সভাপতি এডভোকেট এমাদ উল্লাহ শহীদুল ইসলাম শাহীন জৈন্তা বার্তাকে বলেন, বিষয়টি খুবাই উদ্বেগের। ১০ জনের অধিক শ্রমিক প্রত্যেক ওয়ার্ডে কাজ করলে ময়লা আবর্জনা তো দূরের কথা, সড়ক আর ড্রেন সব সময় বাড়ির মতো পরিচ্ছন্নই থাকতো । এখানে অনিয়ম হচ্ছে। স্বচ্ছতা নেই। জবাবদিহীতাও নেই। তাই এমন হচ্ছে। এসব বিষয় নতুন মেয়য়কে কঠোর ভাবে নজরদারীতে আনতে হবে। নতুবা তাঁর যে স্বপ্ন ‘গ্রিণ সিলেট, ক্লিন সিলেট। সেটি ভেস্তে যাবে।
এ প্রসঙ্গে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সদ্য যোগদানকারী প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইফতেখার আহমদ চৌধুরী গতকাল দৈনিক জৈন্তা বার্তা’কে বলেন, আগে ৪জন করে শ্রমিক পেতেন কাউন্সিলররা। এদের দিয়ে কাউন্সিলরগণ তাদের নিজেদের ওয়ার্ডের পরিচ্ছন্নতামুলক কাজ চালাতেন। বিগত মেয়র সাব (আরিফুল হক চৌধুরী) তাঁর দায়িত্বের শেষ দিকে ১০ জন করে শ্রমিক বরাদ্দ করে যান। সে অনুযায়ী এখন কাউন্সিলর গণ প্রত্যেকেই ১০ জন করে শ্রমিক পাচ্ছেন নিজেদের ওয়ার্ড দেখাশুনার জন্য। পরিচ্ছন্নতার জন্য। তারা বিল জমা দিয়ে টাকা নিয়ে যান। ১০ জন শ্রমিক কাজ করেছে মর্মে তারা স্বাক্ষর দেন। তারা তো সম্মানীত মানুষ। নাগরিক প্রতিনিধি। আমরাতো কাউন্সিলরগণকে অবিশ্বাস করতে পারি না। তবে এটা ঠিক আমাদের পক্ষ থেকে যাচাই বাছাই করার কোনো সুযোগ এখানে রাখা হয়নি। যদি কোনো কাউন্সিররের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া যায় যে, তার ওয়ার্ডে বরাদ্দকৃত শ্রমিকরা কাজ করেনি, টাকা তুলে নিয়েছেন, তবে আমরা ব্যবস্থা নেব।
এসব ঘটনা প্রসঙ্গে জৈন্তা বার্তা’র পক্ষ থেকে কথা বলা হয়েছে সাবেক ও বর্তমান কয়েকজন কাউন্সিলর, পরিবেশ কর্মী, সচেতন নাগরিক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিসহ সমাজের বিভিন্ন স্তরের নাগরিকদের সঙ্গে। তারা সকলেই এসব অনিয়মের নগর কর্তৃপক্ষের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দায়ী করছেন। তারা বলছেন তদারকি ঠিক মতো থাকলে এমনটি ঘটতো না। সৌজন্যে : দৈনিক জৈন্তা বার্তা
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন