• ৪ঠা ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২রা জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

জাফলং ‘চোরাচালানে’ সাদ্দাম,করিম সিন্ডিকেট

sylhetnewspaper.com
প্রকাশিত জানুয়ারি ১৫, ২০২৪
জাফলং ‘চোরাচালানে’ সাদ্দাম,করিম সিন্ডিকেট

সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার- জাফলং, তামাবিল পোর্ট, সোনাটিলা, নলজুরী ও আমস্বপ্ন সীমান্তে ‘চোরাচালান’ সাম্রাজ্যে কিং হচ্ছেন দুই কুতুব।

এই সীমান্ত গুলোর চোরাচালান নিয়ে অনুসন্ধান করলেই দফায় দফায় উঠে আসে বিজিবির লাইনম্যান খ্যাত সাদ্দাম হোসেন ও পাথর শ্রমিক করিম ওরফে বাট্টি করিমের নাম। এই দুই কুতুবের ইশারায় চলে জাফলং, তামাবিল পোর্ট, সোনাটিলা, নলজুরী ও আমস্বপ্ন সীমান্তে চোরাকারবারিদের নিকট হইতে বিজিবির নামে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজির মহোৎসব। এই সীমান্ত গুলোতে একক আধিপত্য বিস্তার করে এই দুই কুতুব অল্প দিনে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ। রাতারাতি বনেও গেছেন কোটি টাকার মালিক। তাই এই দুই কুতুবকে বলা হয় সীমান্তের ‘চোরাচালান’ সাম্রাজ্যের কিং।

অনুসন্ধানে ওঠে আসে ‘চোরাচালান’ সাম্রাজ্যে কিং খ্যাত এই দুই কুতুবের পরিচয়। উপজেলার ৩নং পূর্ব জাফলং ইউনিয়নের সোনাটিলা এলাকার বাসিন্দা ও নলজুরী আমস্বপ্ন এলাকার খোরশেদ আলমের পুত্র বিজিবির লাইনম্যান সাদ্দাম হোসেন ও সোনাটিলা গ্রামের বিজিবির লাইনম্যান করিম ওরফে বাট্টি করিম।

জানা গেছে- জাফলং, তামাবিল পোর্ট, সোনাটিলা, নলজুরী ও আমস্বপ্ন সীমান্তে প্রতিরাতে চোরাকারবারিদের নিকট হইতে বিজিবির নামে প্রকাশ্যে চাঁদা উত্তোলন করছেন এই দুই কুতুব। তবে এসব নিয়ে যেনও অদৃশ্য কারণে কোন মাথা ব্যাথা নেই তামাবিল বিজিবি ক্যাম্পের দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষের। অভিযোগ রয়েছে এই দুই কুতুবের সঙ্গে গভীর দহরম-মহরম রয়েছে তামাবিল বিজিবি ক্যাম্পের কমান্ডারের। এমনকি ক্যাম্প কমান্ডারের আর্শীবাদেই এই দুই কুতুব ‘চোরাচালান’ সাম্রাজ্যে কিং হিসেবে সুনাম লাভ করেছেন। ফলস্বরূপ এই দুই কুতুব বিজিবির নামে অনায়াসে চালাচ্ছেন চাঁদাবাজি।

আরোও জানা গেছে- এই সীমান্তের বিজিবির সাবেক লাইনম্যানদের কাছ থেকে এক নেতার বরাত দিয়ে গত দুই মাস আগে চোরাচালানে বিজিবির নামের চাঁদাবাজির লাইন বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে এই দুই কুতুবকে। তাই এই দুই কুতুবের নিকট বিজিবি নামে চাঁদা দিয়ে জাফলং, তামাবিল পোর্ট, সোনাটিলা, নলজুরী ও আমস্বপ্ন সীমান্ত দিয়ে প্রতিরাত ও দিনের একটি নির্দিষ্ট সময়ে নির্বিঘ্নে ভারত থেকে আসছে নিষিদ্ধ পণ্য- মাদক, কাপড়, কসমেটিক, গরু-মহিষ, নাসির বিড়ি, চিনি ইত্যাদি। এতে সরকার দৈনিক কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারালেও এই দুই কুতুবের আর্শীবাদে পকেট গরম হচ্ছে তামাবিল বিজিবি ক্যাম্পের কমান্ডারের। তবে বরাবরের মতো এমন অভিযোগ অস্বীকার করেন তামাবিল বিজিবি ক্যাম্পের কমান্ডার।

এই দুই কুতুবের কাছ থেকে রেহাই পাচ্ছেন না চোরাকারবারিরা। বিজিবি নামে ভাঙ্গিয়ে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি ও বিজিবির হয়ে লাইনম্যানের ভূমিকায় টাকা উত্তোলনের অভিযোগ এই দুই কুতুবের পিছু না ছাড়লেও এই দুই কুতুবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হিমশিম খাচ্ছেন তামাবিল বিজিবি ক্যাম্পের কমান্ডার ও গোয়াইনঘাট থানা পুলিশ। যদিও প্রশাসন সব সময়ই চোরাকারবারিদের এমন অভিযোগ অস্বীকার করে উল্টো পরামর্শ দিয়ে থাকেন এ ধরনের কোন চাঁদাবাজি’র খবর পেলে তাদের দ্বারস্থ হয়ে লিখিত অভিযোগ করার। প্রশাসনের এমন সুন্দর ভাষ্য স্বাভাবিকভাবে মানতে নারাজ সচেতন মহল। সচেতন মহলের অভিযোগ প্রশাসনের এমন ভাষ্য শাঁক দিয়ে মাছ ঢাকার সামিল।

স্থানীয় সচেতন মহল জানতে চান- তামাবিল সীমান্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক এলাকা হওয়া স্বত্বেও কি এমন অদৃশ্য শক্তির গুণে বিজিবির লাইনম্যান খ্যাত সাদ্দাম ও বাট্টি করিমকে চাঁদা দিয়ে চোরাকারবারি’রা দেশের শুল্ক ফাঁকি দিয়ে এমন অপকর্মে লিপ্ত থাকে? আর বিজিবির লাইনম্যান খ্যাত সাদ্দাম ও বাট্টি করিমের খুঁটির জোড় কোথায়?

উল্লেখ্য, সিলেট সীমান্ত দেশের চোরাচালানের অন্যতম স্বর্গরাজ্য হিসেবে সুনাম কুড়িয়েছে। সিলেট সীমান্তের প্রায় ৫০টির অধিক সীমান্ত দিয়ে নিয়মিত চলে চোরাচালান। এসব চোরাচালানের সাথে জড়িত প্রায় হাজার খানেক লোক। আর সিন্ডিকেট করে চলে এসব চোরাচালান। এই তালিকায় বাদ যাননি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতা ও প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তাও বলে জানিয়েছেন স্থানীয়ও বাসিন্দারা।

এ বিষয়ে সাদ্দাম হোসেনের ব্যবহৃত সেলফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান- এসবে তিনি জড়িত নয়।

এদিকে বাট্টি করিম ভারতীয় সিম ব্যবহার করেন বিধায় এ বিষয়ে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা বা তার বক্তব্য সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি।

এ বিষয়ে তামাবিল বিজিবি ক্যাম্পের ক্যাম্প কমান্ডারের ব্যবহৃত সেলফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান- চোরাকারবারিরা যেই হোক না কেন আমাদের পক্ষ থেকে কোন ছাড় নেই আর এরকম কিছু হলে অবশ্যই কঠোর ব্যবস্থা নিবো।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন