ডেস্ক রিপোর্ট: সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলং, বল্লাঘাট ও জুমপাড় পাথর কোয়ারি ইসিএ তথা ইকোলজিক্যাল ক্রিটিক্যাল এরিয়াভুক্ত এলাকাতে সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে রয়্যালিটির নামে প্রকাশ্যে নিরব চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন ৬ কুতুব।
যেখানে বালু ও পাথর উত্তোলন বন্ধ রাখার সরকারি নির্দেশনা থাকলেও একটি মহল সবকিছুকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অবৈধভাবে বালু ও পাথর উত্তোলন করে চলেছে আর প্রতিনিয়ত ঘটছে সাধারণ মানুষের প্রাণহানী।
টাকার গন্ধ যেনও লেগেই আছে পিয়াইন নদীর পাথরে। এদিকে ৬ কুতুবের নেত্বৃতে পিয়াইন নদীর পাথর থেকে দৈনিক লাখ লাখ টাকা উত্তোলন হচ্ছে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক লিজের নামে কিন্ত অদৃশ্য কারণে তা নজরে আসছে না উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় থানা পুলিশসহ স্থানীয় সাংবাদিকদের।
এক কথায় টাকার গন্ধে যেনও দিশেহারা সর্বমহল। ব্যবসায়ীদের নিকট হইতে দৈনিক রয়্যালিটির নামে লাখ লাখ টাকা চাঁদা উত্তোলন হলেও এসব চলে যায় ৬ কুতুবের পেটে যারফলে সরকার কর্তৃক লিজের নামে অবাধে টাকা উত্তোলন হলেও ৬ কুতুবের কারণে সরকার হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব বলে স্থানীয় বালু-পাথর ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন।
স্থানীয় বালু-পাথর ব্যবসায়ীদের সুত্রমতে- পিয়াইন নদীর পরিবেশগত নিষেধাজ্ঞা সীমারেখার বাহিরে সনাতন পদ্ধতিতে বারকি নৌকায় পাথর উত্তোলনের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করছেন হাজার হাজার পাথর শ্রমিক। আর পিয়াইন নদীতে থেকে ক্রয়কৃত বালু-পাথর তুলে আনতে হলে সরকার কর্তৃক লিজের নামে গাড়ি মেপে প্রতি ফুট ১৫ টাকা করে চাঁদা দিতে হয় স্থানীয় একটি প্রভাবশালী চাঁদাবাজ চক্রকে।
এই চক্রের সহিত জড়িত রয়েছেন সরকার দলীয় স্থানীয় পর্যায়ের কিছু অসাধু নেতা আর এরাই নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য সরকার দলের লোক হয়েও অমান্য করছেন সরকারের নির্দেশনা। শুধু সরকার দলীয় নেতাদের নিকট সীমাবদ্ধ নয় এই চক্রের সাথে জড়িত রয়েছেন স্থানীয় কিছু বখরাবাজ সাংবাদিক নেতাসহ স্থানীয় প্রশাসনও।
প্রকাশ্যে দিবালোকে সরকার কর্তৃক লিজের নামকরণ করে জাফলং সেতুর নীচে,জুমপাড় ও বল্লাঘাট ইসিএ তথা ইকোলজিক্যাল ক্রিটিক্যাল এরিয়াভুক্ত সঙ্কটাপন্ন এলাকাতে লুটপাটের মুলহোতা বালু ও পাথরখেকো মামার দোকান মেলার মাঠের বাসিন্দা ও বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় ধর্ম বিষয়ক উপকমিটির সাবেক সদস্য ইমরান হোসেন সুমন ওরফে (জামাই সুমন),নয়াবস্তি গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা ইনসান আলীর পুত্র আলীম উদ্দিন,কান্দবস্তি গ্রামের মস্তফার পুত্র ফিরোজ ও বিশ্বনাথী ফয়জুল ইসলামের নেত্বৃতে-গোয়াইনঘাট এলাকার মাসুক আহমেদ ও মোহাম্মদপুর এলাকার মৃত আসরব আলীর পুত্র উপজেলা যুবলীগ নেতা ও ইমরান হোসেন সুমন ওরফে জামাই সুমনের মেয়ের জামাই পরিচয়দাতা সোহেলের শেল্টারে আরোও ১৫/২০ জন দৈনিক প্রতি গাড়ি হইতে রয়্যালিটির নামে প্রকাশ্যে লাখ লাখ টাকা চাঁদা উত্তোলন করলেও অদৃশ্য কারণে চোখ বন্ধ করে থাকেন যেনও দায়িত্বশীল সকল সেক্টর। তবে এব্যাপারে দায় সাড়ানো কথা বলেন স্থানীয় থানা পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসনও।
এদিকে এই ৬ কুতুবের শেল্টারে সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে অদ্য রোববার (১০ ডিসেম্বর) ভোরে জাফলং পিয়াইন নদীর চা-বাগানের তীরে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন করতে গিয়ে মাটি চাপায় এক বৃদ্ধ শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে- জাফলং চা-বাগান সংলগ্ন নদীর তীরে মানিক মিয়াসহ তার সাথে থাকা আরও কয়েকজন ব্যক্তি নদীর পাড়ে পাথর উত্তোলনের সময় উপর থেকে বালু ও মাটি ধ্বসে পড়ে তার সাথে থাকা আরও দুইজন পাড়ে উঠতে পারলেও মানিক মিয়া উঠতে পারেন নি। এ সময় অন্যান্য শ্রমিকরা তাকে উদ্ধার করে জৈন্তাপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। খবর পেয়ে গোয়াইনঘাট থানার এস আই এমরুল কবীর ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও মৃতদেহের প্রাথমিক সুরতাহাল রিপোর্ট তৈরি করেন। শ্রমিকের মৃত্যুর বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন গোয়াইনঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কেএম নজরুল ইসলাম।
এই ৬ কুতুবের ভয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন জানান- মাসুক ও সোহেল এই চাঁদাবাজ চক্রের রয়্যালিটির ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করছেন। তারা দুজন সারা দিন রয়্যালিটির নামে টাকা উত্তোলন করে ইমরান হোসেন ওরফে জামাই সুমনের অফিসে জমা দেন আর তিনি বখরা হিসেবে প্রতিদিন ও সপ্তাহে স্থানীয় প্রশাসনের সকল সেক্টর ও স্থানীয় সাংবাদিকসহ স্থানীয় কিছু নেতাদের ভাগ-বিভাজন করেন। এই ৬ কুতুব মন্ত্রীর দোহাই দিয়ে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে এই লুটপাটের তান্ডব চালাচ্ছে। অতীতে এই চক্রের সদস্য আলীম উদ্দিন ও তার পিতা ইসিএ তথা ইকোলজিক্যাল ক্রিটিক্যাল এরিয়াভুক্ত সঙ্কটাপন্ন এলাকায় এমন কর্মকান্ড বন্ধ রাখার জন্য প্রশাসনের বিভিন্ন সেক্টরে একাধিক লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছিলেন যাহার একাধিক কপিও প্রতিবেদকের নিকট সংগ্রহকৃত। কিন্তু অতীতে সঙ্কটাপন্ন এলাকার রক্ষক আলীম উদ্দিন নিজেই এখন ভক্ষকের ভূমিকায়। মূলত কালো টাকার গন্ধেই আলীম উদ্দিন অতীতে এমন অভিযোগ করে কৌশলে অবলম্বন করে তিনি নিজেই এখন এই চক্রের নিয়ন্ত্রকের গুরুদায়িত্ব পালন করছেন।
অভিযোগ রয়েছে রয়্যালিটির ভাগবাটোয়ারার ৭০% টাকা উত্তোলন করে প্রশাসনের বিভিন্ন সেক্টরে বন্টন করেন ইমরান হোসেন সুমন ওরফে জামাই সুমন। মধ্যখানে উপজেলা প্রশাসন (ইউএনও) রাদানগরের ইকবাল হোসেনকে দিয়ে তা উত্তোলন করে নিজে একাই সব হজম করে নিতেন। এ নিয়ে পুলিশ ও ইউএনও এর মাঝে ঝামেলা সৃষ্টি হলে কিছুদিন বন্ধ থাকলে পুলিশ ও ইউএনও উভয় পক্ষের আলোচনাক্রমে ভাগবাটোয়ারার সেই ৭০% টাকা উত্তোলনের দায়িত্ব অর্পণ করা হয় কনস্টেবল পদে কর্মরত- সুনীল তাঁতি ও কাজী মুমিন হোসেন (ইমন)। কিন্তু গোয়েন্দা পুলিশের চোখ ফাঁকি দিতে পারেন নি এ দুই কনস্টেবল। প্রশাসনিক কারণ দেখিয়ে এই দুই কনস্টেবলকে অবশেষে চট্রগ্রামে বদলি করা হয়েছে।
রয়্যালিটির টাকা কেউ দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে এই ৬ কুতুব পুলিশ দিয়ে শ্রমিকদের কাজ বন্ধ করাতে বাধ্য করেন। এতে উপায়ন্তর না পেয়ে ফের ৬ কুতুবকে রয়্যালিটির টাকা দিতে বাধ্য হওয়া লাগে বলে অভিযোগ করেন স্থানীয় বালু-পাথর ব্যবসায়ীরা।
জাফলংয়ে পিয়াইন নদীতে ওপরে থাকা জাফলং সেতুর নিচ থেকেও ক্রমাগত উত্তোলন করা হচ্ছে বালু ও পাথর। এতে সেতুর পাইলিং বেরিয়ে পড়েছে। ফলে বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে জাফলং সেতু। ভারতের মেঘালয়ের পাহাড় বয়ে আসা পিয়াইন নদীতে সিলেটের জাফলং খেয়াঘাট এলাকায় এলজিইডি’র তত্ত্বাবধানে প্রায় ২৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩৬০ মিটার দীর্ঘ এই সেতুটি নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। সিলেট জেলা শহরের সাথে গোয়াইনঘাট উপজেলার পূর্ব জাফলংয়ের দূরত্ব কমিয়ে যোগাযোগ সহজতর করাই ছিল সেতুটি নির্মাণের লক্ষ্য। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিগত ২০১৩ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। বিগত ২০১৮ সালের ১৪ এপ্রিল তথা বাংলা নববর্ষের প্রথমদিনে আনুষ্ঠানিকভাবে খুলে দেওয়া হয় সেতুটি। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী এবং স্থানীয় সংসদ সদস্য ইমরান আহমদ সেতুর উদ্বোধন করেন।
জানা গেছে- জাফলং সেতু উদ্বোধনের ফলে সিলেট জেলা সদরের সাথে জাফলংয়ের সরাসরি যোগাযোগ স্থাপনের পাশাপাশি উত্তর সিলেটের জৈন্তাপুর-গোয়াইনঘাট-কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার যোগাযোগ সহজতর হয়েছে। যোগাযোগ ও পর্যটন সম্ভাবনার উন্নয়ন ব্যবস্থাপনায়ও নতুন দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। এখন সেতুটি ঝুঁকিতে পড়ায় স্থানীয়দের মধ্যে শঙ্কা কাজ করছে। সিলেটের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের সবচেয়ে বড় প্রকল্প ছিলো জাফলং সেতু নির্মাণ। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর সেতুটি পূর্ণাঙ্গরূপ পেলেও মাত্র চার বছরের মাথায় ঝুঁকিতে পড়েছে জনগুরুত্বপূর্ণ সেতুটি। যে কোন মুহূর্তে সেতুটির বড় ধরনের ক্ষতি সাধিত হতে পারে বলে ভুক্তভোগীরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
সেতুর নিচ থেকে অপরিকল্পিতভাবে বালু ও পাথর উত্তোলনের ফলে সেতুর ২টি পিলার ছাড়া সবকটি পিলারের পাইলিং ৩০ হতে ৩৫ ফিট পর্যন্ত ভূগর্ভ হতে বেরিয়ে পড়েছে। বোমা মেশিনসহ বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি দিয়ে অব্যাহতভাবে বালু ও পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে। সেতুর উপর হালকা যান চলাচলে এখন মাত্রাতিরিক্ত ঝাঁকুনির সৃষ্টি হচ্ছে। সেতুটি ভেঙে পড়ে কিনা, এমন শঙ্কাও আছে স্থানীয়দের মধ্যে। তবে রহস্যজনক কারণে পাথর ও বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ ওঠেছে।
এব্যাপারে সদ্য বদলি হওয়া গোয়াইনঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কেএম নজরুল ইসলাম এর সেলফোন একাধিকবার যোগাযোগ করলে তিনি ফোন না তোলায় বক্তব্য সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি।
এব্যাপারে গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সরকারি সেলফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান- বর্তমানে পাথর উত্তোলন বন্ধে যে নির্দেশনা ছিলো সেটাই কার্যকর আছে। জাফলং পিয়াইন নদীতে সরকার কর্তৃক কোন লীজ নেই। তাহলে এ নদীতে সরকারের নামে রয়্যালিটি আদায় করা হচ্ছে কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন- তিনি গোয়াইনঘাট থানা পুলিশকে বলে দিয়েছেন তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য।
এব্যাপারে সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী গণমাধ্যমকে জানান- ‘খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি সেতু হচ্ছে জাফলং। এটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে জনসাধারণের দুর্ভোগ বাড়বে।’ সেতুটি রক্ষায় দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেবেন বলে জানান তিনি। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিভাগকেও বিষয়টি অবহিত করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
সিলেট জেলার প্রকৃতি কন্যা জাফলংয়ের ইসিএ তথা ইকোলজিক্যাল ক্রিটিক্যাল এরিয়াভুক্ত সঙ্কটাপন্ন এলাকা রক্ষাসহ এই ৬ কুতুবের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রশাসনের সকল সেক্টরের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট আশু-হস্তক্ষেপ কামনা করছেন সর্বমহল। তথ্যসুত্র:- সিলেটব্রেকিংনিউজ।
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন