• ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১৯শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

বারকী শ্রমিক থেকে কোটিপতি,কে এই আলীম উদ্দিন!

sylhetnewspaper.com
প্রকাশিত অক্টোবর ৪, ২০২৩
বারকী শ্রমিক থেকে কোটিপতি,কে এই আলীম উদ্দিন!

বিশেষ প্রতিবেদক::সিলেটের জাফলংয়ে-পাথরখেকো চক্রের মূল হোতা জাফলংয়ের আতঙ্ক আলীম উদ্দিন প্রকাশ লোচ্চা আলীম সিন্ডিকেট মিলে জাফলংকে ধ্বংসের প্রক্রিয়ায় মেতে উঠেছে।হাজার হাজার কোটি টাকার বালু লুট করেছে বলে দাবি করছেন স্থানীয়রা।

বালুখেকো চক্র প্রায় ২০ থেকে ২৫ কিলোমিটার এলাকায় নির্বিচারে বালু পাথর উত্তোলন অব্যাহত রেখেছে।গত ১৪ ই সেপ্টেম্বর আলীম উদ্দিন সহ মোট ১০ জনের বিরুদ্ধে পরিবেশ ধ্বংসের দায়ে নোটিশ প্রদানকরে পরিবেশ অধিদপ্তর।পরিবেশ অধিদপ্তরের নোটিশ পাবার পরও স্থানীয় বিট পুলিশের সহযোগিতায়

রাতের আঁধারে জাফলং ইসিএ জোন এলাকা থেকে কুখ্যাত বালু, পাথর খেকো সিন্ডিকেটের মূল হোতা আলীম উদ্দিন ওরফে লুচ্চা আলীমের নেতৃত্বে তার বাহিনী বালু,পাথর উত্তোলন অব্যাহত রেখেছে।

জানা যায়,তার বাহিনী সিলেট জেলার কুখ্যাত ও বালু পাথরখেকো চক্র।জাফলংয়ের‘অঘোষিত শাসক’ হয়ে গেছে আলীম উদ্দিন প্রকাশ লুচ্চা আলীম ।তার বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণেই এখন জাফলংয়ে অশান্তি

বিরাজ করছে।জাফলংয়ের সর্বশেষ ‘খাদক’ আলিম উদ্দিন। তার নেতৃত্বে জাফলংয়ে অবাধে লুটপাট করা হয়।প্রায় শত কোটি টাকার পাথর ও বালু উত্তোলনের সময় স্থানীয় মামার দোকানে পিটিয়ে হত্যা করা হয়

সালেক ড্রাইভারকে।এ ঘটনায় আলিম উদ্দিন আসামি না হলেও গ্রেপ্তার হওয়া তার ভাই শাহজাহান ছিল মূল হোতা।-অবাধে পাথর, বালু উত্তোলন করে মার্কেট ঝুঁকির মুখে ফেলার কারণে প্রতিবাদ জানিয়েছিলো ট্রাকচালক সালেক।আর প্রতিবাদ করার কারণেই তাকে

মামার দোকানে প্রকাশ্য রড দিয়ে পিটিয়ে ও কুপিয়ে খুন করা হয়। জাফলংয়ের বাসিন্দারা জানিয়েছেন- আলিম উদ্দিন তার ভাইরা ৫ বছর আগেও এতো সম্পত্তির মালিক ছিলো না। আলিম উদ্দিন ছিলো বারকি শ্রমিক।

নয়াবস্তির বাসিন্দা হওয়ার গ্রামের ওপারে জাফলং চা বাগান এলাকার লুটপাট করা পাথর ও বালু সে নৌকা দিয়ে বহন করতো।তখন বারকী শ্রমিক হিসেবেই আলিম উদ্দিন পরিচিত ছিল। মাত্র ৭ বছরের ব্যবধানে সে এখন

কয়েক কোটি টাকার মালিক । তার অঢেল সম্পত্তি। ভাইদের নামেও গড়ে তুলেছে সম্পদের পাহাড়। আর এসব হয়েছে জাফলংয়ের পরিবেশ খাদক হওয়ার কারণে। পরিবারে ভাইদের সংখ্যা বেশি। আত্মীয়-স্বজনের সংখ্যাও কম নয়।এ কারণে স্থানীয় আওয়ামী

লীগে প্রভাবশালীদের শেল্টার পড়ে তার উপর। থানা পুলিশও এসে যায় হাতের মুঠোয়। এরপর থেকে শুরু হয় রাজত্ব। এই রাম রাজত্বে সে প্রথমে সহযোগী ছিলো জাফলংয়ের আরেক পরিবেশ খাদক ছাতকের আলাউদ্দিনের।কিন্তু পরবর্তীতে আলাউদ্দিনের সঙ্গেও

লুটপাটনিয়ে দূরত্বের সৃষ্টি হয়।এরপর থেকে স্থানীয় হওয়ার কারণে আলিম উদ্দিনই হয়ে ওঠে মূল নিয়ন্ত্রক।

এখন আলিম উদ্দিন ও তার ভাইরা প্রায় ৮ কোটি টাকা ব্যয় করে নিজেদের গ্রামে তিনটি আলাদা বাড়ি তৈরি করছে।নিজের নামে জাফলংয়ে অনেক জমি কিনেছেন আলিম উদ্দিন। গত বছর স্থানীয় লক্ষ্মীপুর গোরস্থানের

কাছে তোফাজ্জুলের কাছে থেকে ২৫ শতক জমি ক্রয় করেন আলীম উদ্দিন। দলিলে এই জমির মূল্য ৭৫ লাখ টাকা দেখানো হলে মালিককে দেয়া হয়েছে দেড় কোটি টাকা।পূর্বের মালিকপক্ষ সূত্র জানিয়েছে- আলিমউদ্দিন

নিজের নামেই ওই ভূমি ক্রয় করেন। এবং টাকা পরিশোধ করেন তিনি। পরে তিনি জাফলং বল্লাঘাটের পুঞ্জিতে উডি খাসিয়ার কাছ থেকে কোটি টাকা দিয়ে প্রায় ৬২ শতক জমি ক্রয় করেছেন। ক্রাশার মিল স্থাপন

করতে এই জমি ক্রয় করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন, স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।  তার একটি ক্রাশার মিল রয়েছে তার।প্রায় কোটি টাকার পাথর তার স্টোন ক্রাশার মিলে স্টক করা রয়েছে। ক্রাশার মিল এলাকার

এক নম্বর সারিতে অবস্থিত ওই ক্রাশার মিলের মূল্য প্রায় অর্ধকোটি টাকা। দেড় বছর আগে অন্য এক মালিকের কাছ থেকে আলিম উদ্দিন ওই স্টোন ক্রাশার

মিল ক্রয় করে। জাফলং এলাকার যন্ত্রদানব কয়েকটি বোমা মেশিনের মালিক আলিম উদ্দিন। এই বোমা মেশিনের মূল্য প্রায় ৫০ থেকে ৬০ কোটি টাকা। ওই বোমা মেশিন দিয়ে সে গত চার বছর ধরে পাথর লুটপাট করছে জাফলংয়ে।আলীম উদ্দিনের কারণে সিলেটের

জাফলং এলাকার মানুষ অতিষ্ঠ। সে রাস্তায় ওৎ পেতে থেকে মানুষজনের ওপর হামলা করে। ইতোমধ্যে সে কয়েকজন মানুষকে আহত করেছে। এসব ঘটনায় মামলাও হয় ।আলীম উদ্দিন নয়াবস্তির একজন বারকি

শ্রমিক ছিলেন। জাফলংয়ের পিয়াইন নদীর পাথরকোয়ারিতে চাঁদাবাজি করতেন। সেই চাঁদাবাজির হাতিয়ার হিসেবে এলাকায় আলীম বাহিনী গড়ে তুলেছেন।এই বাহিনী দিয়ে এলাকার নিরীহ লোকদের জমি দখল, হামলার ঘটনা ঘটিয়ে রাতারাতি এলাকার ত্রাসে পরিণত হন।নয়াবস্তি গ্রামের এক ব্যক্তি বলেন,আমি ও আমার ভাইকেও আলীম বাহিনী হামলা

চালিয়ে আহত করেছিলো। ভুক্তভোগীরা জানান আমরা আলীমের সন্ত্রাসী বাহিনীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।জাফলং নয়াবস্তি

গ্রামের বাসিন্দা কয়েকজন অভিযোগ করেছেন- জাফলং কোয়ারি সংরক্ষিত এলাকা হওয়ার পর পাথরখেকো আলিম উদ্দিন ও তার সহযোগীরা এলাকায় প্রায় বোমা মেশিন দিয়ে পাথর লুটপাট চালিয়েছে।কোটি টাকার পাথর লুট করেছে।

এসব পাথর তুলতে গিয়ে অন্তত ১৫ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে।কিন্তু শ্রমিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটলেও অদৃশ্য কারণে আলিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে মামলা হয়নি। এদিকে- জাফলং জুম মন্দির এলাকা ছাড়াও চা বাগান এলাকায় অবাধে পাথর লুটপাট চালানো হয়েছে।

সংরক্ষিত বাগান ভেঙে পাথর লুট করা হলেও প্রশাসন ছিল নির্বিকার। আলিম উদ্দিনের নেতৃত্বে চা বাগান এলাকায় প্রতিদিন ৫০-৬০টি সেভ ও বিলাই মেশিন দিয়ে পাথর লুটপাট করা হয়। ওখান থেকে তারা প্রতিদিন ৩-৪

লাখ টাকার চাঁদা আদায় করে আসছে।জাফলং ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় প্রতিদিন শত শত নৌকা দিয়ে বালু লুটপাট করা হতো। নির্ধারিত বালু মহাল না থাকলেও আলিম উদ্দিন তার সহযোগীরা এসব নৌকায় বালু উত্তোলনে শেল্টার দিয়ে থাকে।স্থানীয়রা এ নিয়ে প্রশাসনে দারস্থ হয়েও কোনো কাজ হয়নি। মামার

দোকানের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন- পিয়াইন নদীর বালুর নৌকা থেকে প্রতিদিন লাখ টাকা চাঁদা আদায় হয়। আর এসব চাঁদা কালেকশন আলিম উদ্দিন ও তার সহযোগীরা। মামার দোকানই তাদের মূল আস্তানা।

ওখানে বসে সে সব নিয়ন্ত্রণ এই বাহিনী। তার বাহিনীর মধ্যে নিজের ভাইরা ছাড়াও বিশ্বনাথের ফয়জুল, ছমেদ, এসব নৌকা থেকে চাঁদা আদায় করে। গত বছরে পাথর লুটপাটকালে নদীতে পুঁতে ফেলা জাল ছিঁড়ে ফেলেছিল

আলিম উদ্দিনের শ্যালো নৌকা। আর এ ঘটনার প্রতিবাদ করায় সালামকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে হাত-পা ভেঙে ফেলা হয়। দ্বিতীয় দফা হামলা চালিয়ে সালামের ভাই আলমাছ, মামা ভেলু মিয়া, সালামের পিতা শহীদ

মিয়াকে গুরুতর আহত করে। তারা পুরো জাফলংয়ে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে রেখেছে। তাদের ভয়ে তটস্থ থাকে সব মানুষ। যারাই তার অপকর্মের প্রতিবাদ করেছে তারাই হয়েছে হামলার শিকার। কারো কারো প্রাণও চলে গেছে।এতো কিছুর পরেও থেমে নেই আলীম

উদ্দিন,তার বিরুদ্ধে লেখা লেখি না করতে প্রতিনিয়তই গণমাধ্যম কর্মিদের হুমকি দিয়ে আসছেন।তবে এবার গণমাধ্যম এক কর্মি তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করছেন বলে জানান।প্রশ্ন থেকে যায় তার খুটির জোর কোথায়।

এ ব্যাপারে জানতে গোয়াইনঘাট উপজেলা ইউএনও তাহমিলুর রহমানের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলে তিনি রিসিভ করেননি।

গোয়াইনঘাট উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. তানভীর হোসেন জানান,সোমবার জাফলংয়ের ইসিএ এলাকায় পরিবেশ অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালকের নেতৃত্বে অংশগ্রহণে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। অভিযানে ৫টি বালুবাহী নৌকা আটক করে মামলা দেওয়া হয়। এছাড়া এসব নৌকার পরিচালকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমানিত হওয়ায় মোট ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।তিনি আরো জানান,পরিবেশ রক্ষায় এমন অভিযান নিয়মিত পরিচালিত হবে বলে জানান উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. তানভীর হোসেন।

গোয়াইনঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি কে,এম,নজরুল ইসলাম জানান,সোমবার জাফলংয়ের ইসিএ এলাকায় পরিবেশ অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালকের নেতৃত্বে ও থানা পুলিশের অংশগ্রহণে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়।পরিবেশ অধিদপ্তর যখন আমাদ্রর ডাকবেন তখনই পাবেন।

এব্যাপারে আলীম উদ্দিন বাহিনীর প্রধান,আলীম উদ্দিনকে একাধিক কল দেওয়া হলে কল রিসিভ হয়নি। আলীম উদ্দিনের নারী কেলেংকারীসহ বিস্তর তথ্য আসছে।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন