• ৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ২৫শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২৯শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

গোয়াইনঘাটে বেপরোয়া বালুখেকো খয়রুল চক্র হুমকির মুখে পরিবেশ!

sylhetnewspaper.com
প্রকাশিত আগস্ট ৯, ২০২৩
গোয়াইনঘাটে বেপরোয়া বালুখেকো খয়রুল চক্র হুমকির মুখে পরিবেশ!

গোয়াইনঘাট থেকে ফিরে::সিলেটের গোয়াইনঘাটে বালুদস্যুদের তাণ্ডব থামছেই না।ইজারাবহির্ভূত জায়গা থেকে নির্বিচারে বালু উত্তোলনের অভিযোগ পাওয়া গেছে।সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার পিয়াইন নদী,এলাকা থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে সংঘবদ্ধ চক্র।সরকার ঘোষিত প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এসব এলাকায় জোরপূর্বক ড্রেজার মেশিন দিয়ে নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে বড় ধরনের হুমকির মূখে পড়েছে উপজেলার নদী তীরবর্তী গ্রামগুলো।

অত্র এলাকার নদীতে প্রায় কয়েকশো বালুবাহী বলগেট নৌকা বর্তমানে অবস্থান করছে। প্রশাসনের নাকের ডগায় এমন তান্ডব চললেও এ ব্যাপারে প্রশাসন নিরব ভূমিকা পালন করছে বলে গ্রামবাসী অভিযোগ করেন।

নদী তীরবর্তী গ্রামবাসীর অভিযোগ-সঙ্গবদ্ধ চক্র স্পটে ড্রেজার মেশিন দিয়ে নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে প্রতিদিন কোটি টাকার বালু লুটপাট করা হচ্ছে।

বালু উত্তোলনকারী প্রতারক সঙ্গবদ্ধ চক্রের কারনে এসব এলাকার পরিবেশকে বিনষ্ট করা হচ্ছে।নদীর তীরে ফাটল ধরেছে। পরিবেশ দূষণ করে বালু উত্তোলনের কারণে নদী তীরবর্তী গ্রাম তলিয়ে যাবার আশংকা রয়েছে।

প্রভাবশালী মহল হওয়ায় তাদের অপকর্মের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কেউই প্রতিবাদ করতে চাচ্ছে না। তারা হচ্ছে বেপরোয়া বালু সিন্ডিকেট। ইজারা বহির্ভূত জায়গা থেকে নির্বিচারে বালু উত্তোলন করে তারা।এতে ভাঙনের মুখে পড়েছে বসতবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও হাটবাজার।

স্হানীয় অসহায় কিছু মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানিয়েছেন তাদের নদীর পাড়ের ঘরবাড়ি হুমকির মুখে আছে,এরকম ভাবে চললে ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে যাবে।তারা ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা চেয়ারম্যান দৃষ্টি আকর্ষণও করেছেন।

স্থানীয়দের দাবি-বালু সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তারাও। এ বালু উত্তোলন নিয়ে খুনোখুনি ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলেও পুলিশ প্রশাসন নীরব। আর পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারাও সিন্ডিকেটের দাপটে অসহায়।

ভোক্তভোগী গ্রামবাসীরা জানান,মনরতল এলাকা থেকে উপরগ্রাম পর্যন্ত সংঘটিত হয়ে ড্রেজার মেশিন দিয়ে নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে।

অভিযোগে জানা যায়,পুলিশ প্রশাসনের কিছু সদস্যকে ম্যানেজ করে এলাকার চিহ্নিত বালুখোকোরা বালু উত্তোলন করছে।স্থানীয় দেলোয়ার,জিলানী,জাহাঙ্গীর,খয়রুল,রাব্বানীর নেতৃত্বে,ড্রেজার মেশিন দিয়ে নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে।আর এই সিন্ডিকেটের হাত ধরেই প্রতিরাতে কোটি কোটি টাকার বালু বিক্রি করা হচ্ছে।তাতে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে।

সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়,ইসলামাবাদ থেকে মনরতল ড্রেজার মেশিন দিয়ে নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে সংঘবদ্ধ চক্র।

নদী তীরবর্তী গ্রামবাসীরা,রাতের আধাঁরে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করে ভাঙনের কবল থেকে তাদের গ্রাম বাঁচাতে প্রশাসনের প্রতি দাবী জানান।

জানা গেছে,গোয়াইনঘাট উপজেলার স্থানীয় প্রভাবশালী একটি চক্র ইসলামাবাদ থেকে মনরতল বাজার উপজেলা সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন মাস্টারের বাড়ির সংলগ্ন পিয়াইন নদী,বাংলাবাজারে,শ্রীপুরে নিয়ন্ত্রণহীন বেপরোয়া বালু উত্তোলন ও ,হাদারপাড়,এলাকা থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।গোয়াইনঘাট উপজেলার পর্যটন কেন্দ্রথেকে। গোটা এলাকাই হচ্ছে পরিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা(ইসিএ) হিসেবে চিহ্নিত।কিন্তু কেউ মানছে না সরকারি সেই নির্দেশনা।

উপজেলা প্রশাসন,থানার ওসি,পরিবেশ অধিদপ্তর সকলেই যেনো নিরব দর্শক।চেয়ে-চেয়ে দেখলাম বলার কিছু ছিলোনা!’ ইসিএ জোন থেকে বালু লুটের মহোৎসবে মেতে উঠেন প্রতি বছর এক বা একাধিক চক্র।

স্বশস্ত্র ক্যাডারদের পাহারা বসিয়ে জাফলংয়ে সাবেক চেয়ারম্যান ও মনরতলের খয়রুল সিন্ডিকেটর নেতৃত্বে রাতের অন্ধকারে ও দিনের আলোতে চালানো হচ্ছে পরিবেশ নষ্টকারী ড্রেজার মেশিন। খয়রুল,দেলোয়ার,জিলানী,রাব্বানীসহ প্রায় ১০/১৫ জনের একটি বড় সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে।

উচ্চ আদালতের নির্দেশনার পরও থেমে নেই সিলেটে বালি খেকোদের তান্ডব। অবৈধভাবে বালু-পাথর তুলতে গিয়ে গত প্রায় ১৬ বছরে মৃত্যু হয়েছে ৯৫ শ্রমিকের। তবুও টনক নড়েনি স্থানীয় প্রশাসন কিংবা রাজনৈতিক নেতাদের।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন,প্রতিদিন ইসলামাবাদ থেকে মনরতল বাজার সংলগ্ন পিয়াইন নদী,এলাকা থেকে শুরু করে প্রায় ৫ কিলোমিটার এলাকা থেকে ৩০-৩৫ লাখ ঘণফুট বালু লুটপাট করা হচ্ছে।অবৈধ বালু লুটকারীরা নিজেদের ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ নেতাদের নিজের লোক বলে পরিচয় দিচ্ছেন।

ফলে তাদের ধাপটের কাছে অসহায় আর নতজানু হয়ে পড়েছে স্থানীয় প্রশাসন। স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই পিয়াইন নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।

প্রায় দুই মাস থেকে এমন দৃশ্য দেখা গেলেও এনিয়ে সংশ্লিষ্ট কারো কোন মাথা ব্যাথা নেই।কারণ সকলেই কাঁচা টাকার গঁন্ধে বিভোর। মাঝে মধ্যে লোক দেখানো অভিযান হলেও অভিযানিক দল চলে আসার পর চিত্র সেই আগের মতোই। নির্বিচারে লুট করা হচ্ছে বালু।

সম্প্রতি সময়ে আগের তুলনায় আরও লুটপাট বেড়েছে কয়েক গুণ। সিলেটের গোয়াইনঘাটে বৈধ বালু মহাল হচ্ছে গোয়াইন-১১৭। এ ছাড়া সারি-১ ও সারি-২ নামে জৈন্তাপুরে দুটি মহাল লিজে রয়েছে। এই তিনটি বালু মহালের অবস্থান হচ্ছে লুটপাটকৃত এলাকা থেকে ১০-১২ কিলোমিটার দূরে।

অথচ সারি-২ বালু মহালের নামে গোটা জাফলংকে গিলে খাচ্ছে বালু খেকোরা।

তাদের নির্বিচারে বালু উত্তোলনের ফলে হুমকির মুখে পড়েছে শত কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত জাফলং ব্রিজ। স্থানীয় সূত্রে আরো জানা গেছে,সরকারিভাবে ইজারা না থাকা স্বত্বেও থানা প্রশাসনকে‘ম্যানেজ’করে গোয়াইনঘাটের বিছানাকান্দি থেকে দিনে ও রাতের বেলা যন্ত্রদানব শ্যালো মেশিন ও লিস্টার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করছে একটি অসাধু চক্র।মাঝে মধ্যে অভিযান পরিচালনা করা হলেও, পুরোপুরি বন্ধ হচ্ছেনা এই অবৈধভাবে বালু উত্তোলন।

এতে হুমকির মুখে পড়েছে জাফলং ও বিছানাকান্দির পরিবেশ ও জীব বৈচিত্র।বিলীন হতে বসেছে রাস্তা,শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ অনেক স্থাপনা।পর্যটনকন্যা জাফলংকে ক্ষতবিক্ষত করেও নিস্তার দিচ্ছে না অসাধু চক্রটি।

এ ব্যাপারে স্থানীয় বিট অফিসার এস আই জহির এর মুঠোফোনে কল দেওয়া হলে পাওয়া যায়নি।এব্যাপারে রাব্বানী,খয়রুলসহ তাদের মুঠোফোনে একাধিক কল দেওয়া হলে কল রিসিভ হয়নি।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •