নুরুল হক শিপুঃঃসিলেটি নাটক সিলেট সহ পুরো দেশ-বিদেশে ব্যাপক জনপ্রিয়। বিশেষ করে যুক্তরাজ্য,যুক্তরাষ্ট্র এবং মধ্যপ্রাচ্যে এসব নাটকের অগণিত দর্শক আছেন।
সিলেটের এসব নাটক প্রতিদিন অন্তত ৮ থেকে ১০টি ইউটিউব চ্যানেলে মুক্তি পাচ্ছে। এতে করে ইউটিইউবে ইউটিইউবারদের যেমন আয় বাড়ছে; ঠিক তেমনি নাট্যশিল্পী এবং কলাকূশলীদের সম্মানিও বাড়ছে।
শুক্রবার বিকেলে মীম টিভি ইউএস নামক একটি ইউটিউব চ্যানেল সিলেট বিভাগের জনপ্রিয় শিল্পীদের অ্যাওয়ার্ড প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানটি সিলেট জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে অনুষ্ঠিত হয়।
এই অনুষ্ঠানের আগে সিলেটের নাট্যশিল্পী এবং কলাকূশলী অ্যাওয়ার্ডের পাশাপাশি সম্মানিও দেয়া হবে বলে চিঠির মাধ্যমে জানান আয়োজকরা। পরে অনুষ্ঠান শেষে অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠান নিয়ে নানা প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করার পাশাপাশি অর্থ কেলেঙ্কারির অভিযোগ করেন খোদ অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্ত শিল্পী এবং কলাকূশলীরা।
এনিয়ে সিলেটের শিল্পীদের মাঝেই নানান আলোচনা আর সমালোচনা চলছে।
অভিযোগ উঠেছে, অ্যাওয়ার্ড প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বরত কর্তা-ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অর্থ কেলেঙ্কারি ও স্বজনপ্রীতির।
অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্ত শিল্পীরা জানান, নানান অসঙ্গতির কথা। তারা জানিয়েছেন, বিচারকদের যাচাই-বাছাইয়ে সেরা নাটক নির্বাচিত হয় ‘সেট টিভি’।
সেরা প্রযোজকেরঅ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্ত রঙিলা সিলেটের কর্ণধার শাহাদাৎ হোসেন লোলন বলেন, ‘প্রথমত আমি যে সেরা প্রযোজক নির্বাচিত হয়েছি, তা অনুষ্ঠানের ৩দিন আগে আমাকে জানানো হয়েছে। এছাড়া সেরা প্রযোজকের পুরস্কারের পাশাপাশি আমাকে আর্থিক সম্মাননা দেওয়ার কথা জানানো হয় এবং বিয়টি আমাকে পাঠানো চিঠিতেও উল্লেখ করা হয়েছে। পরে অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে আমার হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে একটি ক্রেস্ট আর সনদপত্র। আমার টাকা কোথায় গেল কিংবা এই চেকটি আমি কেন পেলাম না? তাও বুঝতে পারছি না।’
চিত্রনাট্যে সেরা পুরস্কারপ্রাপ্ত নির্দেশক, গীতিকার ও রচয়িতা কামরুল চৌধুরী জানান, ‘আমাকে সেরা রচয়িতা হিসেবে আর্থিক সম্মাননা প্রদানের কথা ছিল; কিন্তু রহস্যজনক কারণে আমিসহ অনেককেই এই সম্মাননার অর্থ পাননি। এ নিয়ে ক্ষোভ আছে এবং এই অ্যাওয়ার্ড প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।’
এদিকে, পার্শ্ব চরিত্রে পুরস্কারের চিঠি পেয়ে তা না পাওয়ার কথা জানিয়েছেন জেড ইসলাম খ্যাত অভিনেতা আলা উদ্দিন।
সেরা রূপসজ্জাশিল্পী সুমন রায় দুঃখ প্রকাশ করে জানান, ‘অ্যাওয়ার্ড পেয়েছি, তবে আয়োজকদের ঘোষিত অর্থ পাইনি।’ একই রকম কথা বলেন সেরা ক্যামেরাপারসন নুরুল।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিল্পী বলেন, ‘সেরা আবহ সংগীতে একজন কণ্ঠশিল্পীকে পুরস্কার দেওয়া হয়েছে, অথচ তিনি নাকি নিজেই হারমোনিয়াম বাজাতে পারেন না। এমন সব কথা শুনে বিব্রত লাগছে।’
সিলেটের জনপ্রিয় অভিনেত্রী কইলজারুন খ্যাত তারানা রিয়া বলেন, ‘আমাদের অভিভাবক চন্দন দা এবং রুনা আপা। তারা ৫০ বছরের ওপর মঞ্চ নাটকে জড়িত। পাশাপাশি ভিজ্যুয়াল নাটকেও কাজ করছেন। তাদের মতো গুণী শিল্পীদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে পার্শ্ব চরিত্রের পদক। যা খুব দুঃখ জনক। তাদেরকে আজীবন সম্মাননা দেওয়া উচিত ছিল।’
যুক্তরাজ্য থেকে মোবাইল ফোনে সিলেটের জনপ্রিয় অভিনেতা ও নির্দেশক ‘কাট্টুস আলী’খ্যাত রাসেল হামিদ বলেন, গত ৩ বার মীম টিভি ইউটেউব চ্যানেল সিলেটে অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। জুরি বোর্ড আমার পছন্দ না হওয়ায় আমি আমার অভিনীত ও নির্মিত কোনো নাটক তখন জমা দিইনি। কারণ জুরি বোর্ডে কোনো নাট্যব্যক্তিত্ব সে সময় ছিলেন না। এবার আমি আমার নাটক জমা দিয়েছি। নাটক প্রদর্শনীর পর জানানো হয় আমি চিত্রনাট্য ও নির্দেশনায় সেরা পুরষ্কার পেয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘তার নির্মিত নাটক সেট টিভি সাতটি ক্যাটাগরিসহ সেরা নাটক হিসেবে ২৭টি নাটকের মধ্যে পুরস্কৃত হয়েছে- তাও জানানো হয়। কিন্তু শুক্রবারের অনুষ্ঠানে দেখা যায় আমি সেরা অভিনেতা।
তাহলে প্রশ্ন হলো কেন এবং কীভাবে আমাকে সেরা চিত্রনাট্য ও নির্দেশনায় মনোনীত করে চিঠি দেওয়া হলো? আমি দেশে ছিলাম না, থাকলে এই অনুষ্ঠান বয়কট করতাম।’
অনুষ্ঠানের বিচারক, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের কেন্দ্রীয় সদস্য শামসুল আলম সেলিম বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে এই অনুষ্ঠান থেকে আশানুরূপ কিছু পাওয়া যায়নি। যেহেতু আয়োজনটি প্রথম, তাই ত্রুটি থাকাটাই স্বাভাবিক।’
তিনি বলেন, ‘আয়োজকরা যদি অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্ত শিল্পীদের ঘোষিত সম্মানি না দিয়ে থাকেন তাহলে তা সত্যিই লজ্জার বিষয়। চন্দন দা, রুনা আপা সিলেটের সংস্কৃতি অঙ্গনের দিকপাল। তাদের যথার্থ সম্মান দেওয়া উচিত ছিল।’
আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক কামাল আহমদ দুর্জয় বলেন, ‘সবকিছু স্বচ্ছভাবেই হয়েছে। বারবার মিটিং করা হয়েছে। একটি পক্ষ সুন্দর আয়োজনকে কালিমা লেপনের স্বার্থে বিতর্ক ছড়াচ্ছে।’
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন